নিশি পোহাল তাঁতের থট থট শব্দে!
নিউজ ডেস্ক
নিউজ ওয়ান২ ৪
প্রকাশিত : ১২:৪৫ পিএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার

ফাইল ছবি
নিশি পোহায় তাঁতের শব্দে। লাইনটি শুনেছিলাম সেলিম আল দীনের নাটক ‘হরগজে’। আজ আমারও নিশি পোহাল তাঁতের থট থট শব্দে। এ এক নতুন ভালোলাগার অনুভূতি।
নিজস্ব কাজে বিচরণ টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার মাহমুদ নগরের মাকোর কোল গ্রামে। কাজের সুবাদে রাত পোহাতে হয় সে গ্রামে। যদিও সেদিন ঘুম ভাঙার কথা ছিল পাখির কিচিরমিচিরে। তা-না হয়ে ঘুম ভাঙে তাঁতীদের হাত-পায়ের তাল ছন্দের তাঁত বোনার শব্দে।
টাঙ্গাইলের তাঁতের সুনাম ও সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া বিরাজমান। তেমনি রয়েছে কিছু ঐতিহ্যবাহী জায়গা। দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন লোক আসে এর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। পর্যটনের একটি কেন্দ্রস্থল হিসেবেও টাঙ্গাইলের গৌরব রয়েছে। টাঙ্গাইলের এসব দর্শনীয় জায়গা খুবই মনোমুগ্ধকর, যা দেখে চোখ জুড়ায় খুব সহজে।
খাল, বিল, নদী-নালা, চর, বন-জঙ্গলে রয়েছে টাঙ্গাইলের নজরকাড়া দৃশ্য। এসব নয়নাভিরাম দৃশ্যের জন্যই হয়তো টাঙ্গাইলের এই ঐতিহ্য থাকবে যুগে যুগে।
টাঙ্গাইলের হাজারো ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্য হচ্ছে টাঙ্গাইলের তাঁত। তাঁতের শাড়ি, গামছা, গজ কাপড় ইত্যাদি। সেই কাপড় দিয়ে বাহারি যতো নকশা। বাংলাদেশে সেই অতীতকাল থেকেই তাঁতশিল্পের প্রচলন চলে আসছে। তাঁত শিল্প এ দেশের বিশেষ করে টাঙ্গাইলের গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।
বাংলাদেশে তাঁত শিল্প অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে শাড়ির ক্ষেত্রে। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির কদর উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।
জাতীয় অর্থনীতিতে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাঁতের শাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। ফলে শিক্ষিত-অর্ধ শিক্ষিত লোকের বেকারত্ব হ্রাস পাচ্ছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বেকারত্ব থেকে মুক্ত। আত্ম-কর্মসংস্থানের এক অন্যতম মাধ্যমও টাঙ্গাইলের এই তাঁত শিল্প।
তাঁতের গামছা বুনছিলেন দিদার আলী, নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে প্রবেশ করি তার তাঁত ঘরে। দুজনের মধ্যে অনেক কথোকথন। গাঁথা পড়ি কথার বুনন মালায়। দিনে দশ থেকে বারোটি করে গামছা তৈরি করে দিদার আলী। এতে গামছা প্রতি পায় ২০ টাকা। আর একটি গামছার পিছনে ব্যয় করে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময়। এভাবে রোজ ৮০ থেকে ১০০ টাকার আয়ে চলে তার সংসার। এতে তার সংসার কিভাবে চলে জানতে চাইলে, শিল্পের বুননে হাসি বুনে বলেন, এ গ্রামের মানুষ স্ব-স্ব বংশমর্যাদা রক্ষায় তাঁত শিল্পে জীবিকা নির্বাহ করে। ‘আল্লাহই চালাগো বেডি আল্লাহই চালা’।
তার নিজের কোনো তাঁতের কারখানা নেই। একজনের অধীনে কাজ করে। দিদার আলীর মতো অনেকেই কাজ করে এসব তাঁত ঘরে। তাঁতের কারখানা দিতে যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তার যোগান দেয়া সম্ভব নয় এই কর্মীদের। তবে সংশ্লিষ্টরা যদি আর একটু নজর দিতো তাহলে কারখানার আয়তন, পরিবেশ ও তাদের পারিশ্রমিক আর একটু বাড়ত বলেই জানান এই শিল্পের কর্মীরা।
নিউজওয়ান২৪/জেডএস