আমরা কেন কাঁদি?
নিউজ ডেস্ক
নিউজ ওয়ান২ ৪
প্রকাশিত : ১২:৪৬ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার
ফাইল ছবি
আজকের গল্প একটি মেয়েকে নিয়ে, যার নাম 'আইরিশ'। সে খুবই 'সংবেদী', এতটাই যে প্রায় সবসময়ই কান্না করে। দুঃখ পেলে সে কান্না করে, অনেক বেশি খুশিতেও কান্না করে আবার কোনো কিছু খুব কাছাকাছি চলে আসলেও তার কান্না পায়।
তার আছে বিশেষ ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি, যেটা তাকে নতুন অশ্রু তৈরি করতে সাহায্য করে। তাছাড়া অতিরিক্ত অশ্রু বের করে দেয়ার জন্য রয়েছে বিশেষ ল্যাক্রিমাল নালি। হ্যাঁ, চোখের আইরিশের কথাই বলছিলাম এতক্ষণ। অশ্রু সাধারণত অক্ষিগোলকের বাইরের ওপরের অংশে অবস্থিত ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়।
জৈব-রাসায়নিকভাবে অশ্রুর উপাদান প্রধানত তিনটি; প্রোটিন, লবণ এবং কয়েক প্রকার হরমোন, যা আমাদের লালা-র সদৃশ। চোখের পানিকে সাধারণ দৃষ্টিতে পার্থক্য করা না গেলেও কাজের ধরণ অনুযায়ী এটি তিন প্রকার:-
(১) ব্যাসাল/মৌলিক অশ্রু: ল্যাক্রিমাল থেকে এর উৎপাদন বিরতিহীনভাবে চলে। এটি অক্ষিগোলককে পিচ্ছিল করে, পুষ্টি যোগায় এবং রক্ষা করে।
(২) রিফ্লেক্স/প্রতিরোধী অশ্রু: জোর বাতাস, ধোঁয়া, ধূলাবালি অথবা তীব্র আলো চোখে প্রবেশের ফলে এই প্রকার অশ্রু উৎপন্ন হয় এবং চোখকে রক্ষা করে।
(৩) ইমোশনাল/আবেগময় অশ্রু: আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের উদ্দেশ্যে এই প্রকার অশ্রুর উৎপত্তি হয় এবং চোখের বাইরে ঝরতে থাকে।
তিনধরণের অশ্রুই একই উৎস থেকে উৎপন্ন হলেও তাদের রাসায়নিক উপাদানের অনুপাতে তারতম্য দেখা যায়। যেমন, আবেগময় অশ্রুতে প্রোটিনের মাত্রা বেশি থাকে। এছাড়া এতে লিউসিন নামক প্রাকৃতিক ব্যাথানাশক, এনকেফ্যালিনও পাওয়া যায় এবং ধারণা করা হয় যে এই উপাদানগুলোর জন্যই কাঁদার পর মানসিকভাবে হালকা অনুভূত হয়।
একজন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের ল্যাক্রিমাল গ্রন্থিতে গড়ে প্রতিদিন ১০ আউন্স এবং প্রতিবছর ৩০ গ্যালনের (১ গ্যালন = ৪.৪৫৩৪ লিটার) মত অশ্রু উৎপাদিত হয়। তবে লিঙ্গভেদে এর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। স্বাভাবিকভাবে একজন মহিলা একজন পুরুষের থেকে বেশি কাঁদে। গবেষকদের ধারণা অনুযায়ী মহিলাদের কান্নার মাত্রা গড়ে প্রতিমাসে ৫.৩ গুণ এবং প্রত্যেকবারের গড় সময় ৬ মিনিট যেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ গড়ে প্রতিমাসে ১.৪ গুণ এবং সর্বোচ্চ ২ মিনিট। মাইক্রোস্কোপের নিচে পুরুষের অশ্রুগ্রন্থির কোষকে মহিলাদের অশ্রুগ্রন্থির কোষের থেকে বড় দেখা যায়। যার ফলে মহিলাদের অশ্রু খুব দ্রুত তাদের গাল বেয়ে নেমে যায়, কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে জলের ধারা কিছুটা পাইপের আকার ধারণ করে ও ঝরে যেতে সময় বেশি নেয়।
অনেকের মনে প্রায়ই প্রশ্ন জাগে, পেঁয়াজ কাটলে কেন চোখে পানি আসে। না, পেঁয়াজের সঙ্গে আবেগের কোনো সম্পর্ক নেই। পেঁয়াজ কাটার সময় আসলে অসংখ্য কোষ কাটি। ফলে কোষের ভেতর থাকা পদার্থগুলো মুক্ত হয়ে যায়। কোষে থাকা অ্যামিনো এসিড সালফোক্সাইড মিলে তৈরি করে সালফেনিক এসিড। কোষের ভেতরে থাকা বিভিন্ন এনজাইম সালফেনিক এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে তৈরি করে প্রোপেনিয়াল এস-অক্সাইড নামক সালফারের একটি উদ্বায়ী যৌগ। এই যৌগ বাতাসে ভেসে চলে আসে আমাদের চোখে। পরে তা চোখের জলীয় অংশের সঙ্গে বিক্রিয়ায় তৈরি করে সালফিউরিক এসিড। আর এই এসিডের কারণেই চোখে জ্বালাপোড়া হয়। তখন চোখের ভেতরে ঢুকে পড়া এসিড দূর করে দিতেই মূলত চোখের ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি থেকে পানি বের হয়।
বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে মানুষের শারীরিক অনেক পরিবর্তন হয়। ছোট থেকে বড় হওয়া, তারপর বার্ধক্য, চামড়ায় ভাঁজ, দুর্বলতা, চুলে পাক ধরা, চুল পড়ে যাওয়া সহ আরো অনেক পরিবর্তন। কিন্তু একমাত্র অক্ষিগোলকের আয়তন এবং চোখের পানি উৎপাদন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চলে।
নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ