হাত ধোয়া জীবন বাঁচায়
নিউজ ডেস্ক
নিউজ ওয়ান২ ৪
প্রকাশিত : ০১:১৫ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০১৮ সোমবার

ফাইল ছবি
হাত পরিষ্কার রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস যার মাধ্যমে সহজেই অসুস্থতা থেকে বাঁচা যায়। আমাদের পরিচিত অনেক রোগই কিন্তু ছড়ায় পরিষ্কার পানি আর সাবান দিয়ে হাত না ধোয়ার ফলে।
চিকিৎসকরা বলেন, হাত ধোয়ার মতো সাধারণ অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে শিশুদের আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস, ডায়রিয়া, কৃমির মতো রোগের সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যায়। হাতের লোমকূপের গোড়ায় এক বর্গ-মিলিমিটার জায়গায় ৫০ হাজার জীবাণু থাকতে পারে। যা খালি চোখে দেখা যায় না। সারাদিনের নানা কাজে নানা বস্তু স্পর্শ করার মাধ্যমে এসব জীবাণু হাতে আসে। এই হাতে অন্যজনকে স্পর্শ করলে, তার কাছেও জীবাণু ছড়ায়।
তাই ময়লা-আবর্জনা স্পর্শ করার পর, হাত দিয়ে নাক ঝাড়লে অবশ্যই সাবান বা জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ধুতে হবে। শৌচকর্মের পরে ও খাওয়ার আগে জীবাণুমুক্ত করতে হাত ধুতে হবে।
কিভাবে জীবাণু আমাদের হাতে আসে এবং মানুষকে অসুস্থ করে:
টয়লেট ব্যবহারের পর ভালোভাবে হাত না ধোয়ার কারণেই সাধারণত জীবাণু সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। মানুষ এবং অন্যান্য পশুর বিষ্ঠায় সালমোনেলা, ই-কোলাই এবং নোরোভাইরাসের মতো জীবাণু থাকে যা ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। শুধু তাই নয় এগুলো শ্বাসনালীর সংক্রমণ যেমন এডিনোভাইরাস এবং হ্যান্ড-ফুট-মাউথ রোগেরও কারণ। এই ধরনের জীবাণু মানুষের হাতে আসে টয়লেট থেকে বা বাচ্চার ডায়াপার বদলানোর পর হাত ভালভাবে না ধোয়া থেকে, এমনকি এই জীবাণু কাঁচা মাংস নিয়ে কাজ করলেও হাতে আসতে পারে।
এছাড়াও কফ, হাঁচি, কাশি থেকে জীবাণুর সংক্রমণ হয়। দুষিত কোনো কিছুর সংস্পর্শে আসলেও মানুষের হাতে জীবাণু আসতে পারে। আর হাতে লেগে থাকা এই জীবাণু যদি ধুয়ে না ফেলা হয় তাহলে শুধু যিনি বাহক তিনিই নন, তার সংস্পর্শে যারাই আসবেন সবাই-ই সংক্রমিত হতে পারেন।
কখন হাত ধোয়া উচিত:
> খাবার তৈরি করার আগে, মাঝখানে এবং পরে।
> খাওয়ার আগে
> অসুস্থ কারো সেবা করার আগে এবং পরে
> দেহের কাঁটা ছেড়া বা ক্ষতর চিকিৎসা করার আগে ও পরে
> পায়াখানা প্রস্রাবের পরে
> বাচ্চার ডায়াপার বদলানো বা বাবুর পায়খানা পরিষ্কারের পরে
> নাক ঝাড়া, কফ ফেলা বা হাঁচি দেবার পরে
> কোনো পশুপাখি বা পশুপাখির খাবার বা পশুর বিষ্ঠা ধরার পরে
> পোষা জীব জন্তুর খাবার ধরার পরে
> আবর্জনা ধরার পরে
কিভাবে হাত ধোয়া উচিৎ:
> পরিষ্কার পানিতে হাত ভেজান, হাতে সাবান দিন
> হাতে হাত ঘষে ফেনা তৈরি করুন, আঙুলের ফাকে, নখের মধ্যে পরিষ্কার করুন
> অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ডলে পরিষ্কার করুন।
> পরিষ্কার চলমান পানিতে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
> পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে হাত মুছুন অথবা বাতাসে শুকিয়ে নিন।
হাত ধোয়া জীবন বাঁচায়:
হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যকর চর্চা ডায়রিয়ার ঝুঁকি প্রায় অর্ধেক কমিয়ে দেয়। হাত ধোয়া বিভিন্ন রোগের সংক্রমণের হাত থেকে আমাদের বাঁচায়, যেমন:
> মানুষ প্রায় সময়েই অন্যমনস্ক ভাবে তাদের চোখ, নাক বা মুখে হাত দেয়। এইভাবে চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমে হাতে থাকা জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
> হাত না ধুয়ে খাবার তৈরি বা পরিবেশন করলে হাতে থাকা জীবাণু খুব সহজেই খাবারে প্রবেশ করতে পারে। এমনকি কিছু পরিবেশে অনেকক্ষণ থাকলে খাবারের সেই জীবাণু বংশবৃদ্ধি করে বেড়ে যেতে পারে বহুগুণে এবং সেই খাবার খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
> হাত থেকে জীবাণু অন্যান্য জিনিসপত্রে যেতে পারে যেমন, সিঁড়ির রেলিং, টেবিল, খেলনা, যা থেকে অন্য মানুষের হাতে জীবাণু ছড়ায়।
> কিছুক্ষণ পর পর হাত ধোয়া ডায়রিয়া, শ্বাসনালীর সংক্রমণ, ত্বক ও চোখের সংক্রমণ থেকে আমাদের বাঁচায়।
তাই বাচ্চাদের এবং বড়দের হাত ধোয়া শেখানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের চারপাশের মানুষকে সুস্থ রাখতে পারি। নিয়মিত হাত ধোয়া -
> ডায়রিয়ার সংক্রমণ কমায় ৩১ শতাংশ।
> পেটের অন্যান্য রোগ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে হয়, তা কমায় শতকরা ৫৮ ভাগ।
> শ্বাসনালীর সংক্রমণ, ঠাণ্ডা, ফ্লু ইত্যাদি কমায় ১৬ থেকে ২১ শতাংশ।
শিশুদের হাত ধোয়ার অভ্যাস তাদের বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে।
নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ