NewsOne24

তিস্তা সেতু পর্যটনের সম্ভাবনা

নিউজ ডেস্ক

নিউজ ওয়ান২ ৪

প্রকাশিত : ১২:৫২ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিভিন্ন সম্প্রদায়ের যে কোন ছুটি উপলক্ষে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের প্রবেশমুখে রংপুরের তিস্তা সড়কসেতু এখন মানুষে মানুষে টইটম্বুর। ঈদসহ বিভিন্ন ছুটিতে খোলা হাওয়ায় নির্মল আনন্দ পেতে সব বয়সী মানুষ ভিড় করছেন মরা তিস্তা পাড়ের এই সেতুতে। কিন্তু এখানে দীর্ঘ আট বছরেও গড়ে ওঠেনি বিনোদনের জন্য পার্ক, ছাউনি, টয়লেটসহ দর্শনার্থীদের জন্য কোনো সুবিধা। ফলে এই সেতু ঘিরে পর্যটনের বিশাল সম্ভাবনা থমকে আছে।

২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সেতুটি খুলে দেয়া হলে এ অঞ্চলে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়। পুরনো রেলওয়ে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল অব্যাহত থাকে।উদ্বোধনের পর থেকেই প্রতিদিনই এই সেতুটিকে দেখতে আশপাশ এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন এই তিস্তা পাড়ে।

একটি নতুন সেতুর পাশে পুরনো রেলওয়ে সেতু, মাঝ দিয়ে বয়ে চলা মরা তিস্তার বিভিন্ন সময়ের খেয়ালি ভাব উপভোগ করতে আসা মানুষ একটু জিরিয়ে সময় নিয়ে দেখতে চান। বিশেষ করে সন্ধ্যায় এখানে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অনেক বেশি উপভোগ্য হয়ে ওঠে। দুই ঈদ, পয়লা বৈশাখ, দুর্গাপূজা ও বড়দিনসহ বিভিন্ন পার্বনে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে টইটম্বুর থাকে এই তিস্তার বেলাভূমি।

বিশেষ করে প্রতি শুক্র ও শনিবার মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। দাবি ওঠে সেতুটিকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছরেও এখানে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সময়ের ব্যবধানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু মানুষ স্পিড বোট ও নৌকার ব্যবস্থা করেছে।

দর্শনার্থীরা সেগুলোতে উঠে দুই সেতুর মাঝ দিয়ে তিস্তার পানির আনন্দ উপভোগ করেন। কিন্তু এখানে কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। এতে নারী ও শিশু দর্শনার্থীরা সময় নিয়ে থাকতে পারেন না। শিশুদের বিনোদনের জন্য কোনো রাইড স্থাপন করা হয়নি। ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসে খোলা আকাশের নিচে। প্রচন্ড রোদে এখানে কোনো জায়গা নেই একটু বিশ্রাম নেয়ার।

শনিবার মাগরিবের নামাজের আগে দেখা গেছে পুরনো সেতুর বিভিন্ন গার্ডার এবং সেতুর ভেতরে ও পাটাতনের ওপর মানুষে মানুষে ঠাসা। কিন্তু সেটি ঝুঁকিপূর্ণ। দর্শনার্থীরা এ কথা জানেন না। তাদেরকে এ কথা জানিয়ে দেয়ার মতো কোনো লোকও পাওয়া যায়নি সেখানে। এ ছাড়া পুরো মার্জিনাল ডাইক বাঁধে এলোমেলো মোটরসাইকেল ও ভ্রাম্যমাণ দোকানের কারণে দর্শনার্থীরা ভালোভাবে হাঁটাচলা করতে পারছেন না। সেটা দেখারও কেউ নেই।

উপরোন্তু ওই মার্জিনাল ডাইক বাঁধের ওপরেই কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে দেখা গেছে বেঞ্চ নিয়ে বসে থাকতে। স্পিড বোট ও নৌকায় একবার ঘুরে আসার জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা থাকলেও অনেক মাঝি লোক বুঝে ১০০ থেকে ২০০শ টাকা নিচ্ছেন। সেসব দেখার কেউ নেই সেখানে।

নাছির নামে এক মাঝির নৌকায় উঠেছিলেন রণজিত দাস ও তার দুই সহকর্মী। একবার ঘুরে আসার পর তাদের কাছ থেকে নেয়া হয় ১৫০ টাকা। ঈদে বখশিশ হিসেবে ৩০০ থেকে ৫০০শ টাকা নেয়া হয়। কিন্তু একইভাবে ঘুরে আসা আরেক নৌকাওয়ালা জনপ্রতি নেন ২০ টাকা করে। বিষয়টি নিয়ে নাছিরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

তিনি জানান, এখানে যার কাছে যেমন পাই, সে রকমই টাকা নেয়া হয়। অপরিচিত লোকদের কাছে একটু বেশি নেই। নাছির জানালেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তার আয় হয়েছে ৫ হাজার ৩৪০ টাকা।

পুরনো সেতুর পাশে দর্শনার্থী সানজিদা ইমরান ডেইলি বাংলাদেশকে জানালেন, এখানে এতো সুন্দর একটা ঘোরার জায়গা, কিন্তু কোনো টয়লেট নেই। শিশুদের জন্য রাইড নেই। সন্ধ্যার পর এখানে থাকা যায় না। বাজে ছেলেদের আনাগোনা বেড়ে যায়। নতুন সেতুর ওপর কথা হয় আজিজুল ইসলাম নামে একজন সরকারি কর্মকর্তার সাথে। তিনি ডেইলি বাংলাদেশকে জানালেন, সেতুটিকে ঘিরে পর্যটন কর্তৃপক্ষের অনেক আগেই পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা উচিত ছিল। কিন্তু কেন তা করা হচ্ছে না বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। এভাবে সম্ভাবনাকে নষ্ট করা ঠিক নয়।

ঘুরতে আসা ডাইক বাঁধে শিশুসন্তানকে নিয়ে বসে থাকা সিরাজুল ইসলাম ডেইলি বাংলাদেশকে জানালেন, এখানে সব জিনিসের দাম বেশি। কিন্তু মান খারাপ। শিশুরা একটা খেলনা পছন্দ করলে দোকানদাররা ইচ্ছেমতো দাম হাঁকান। উপায় না থাকায় অভিভাবকেরা চড়া দামেই কিনে দিতে বাধ্য হন। তিনি বলেন এসব নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। কারণ এখানে নির্মল বিনোদনের জন্য আমরা আসি। সরকারের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং সন্ধ্যার পর এখানে দর্শনার্থীরা নিরাপত্তার কারণে আর থাকতে চান না। অথচ এখানে মার্জিনাল ডাইক বাঁধের ওপর ছাতা করে দিলে বিশুদ্ধ বাতাসে দর্শনার্থীরা বসে তিস্তার ভাঙা-গড়ার খেলা উপভোগ করতে পারতেন।

এ ব্যাপারে সেতুটির তদারককারী প্রতিষ্ঠান লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশল আলী নুরায়েন ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, সেতুটিকে ঘিরে কিভাবে পর্যটনকেন্দ্র্র গড়ে তোলা যায় সে ব্যাপারে আমরা সরকারের উপর মহলে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। উপর থেকে জট খুললেই সেতুটিকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠবে। কারণ এত সুন্দর একটি নান্দনিক সেতু দেখতে মানুষ সব সময় আসতেই থাকবে।

নিউজওয়ান২৪/জেডএস