কুয়েতে প্রবাসীদের আয়ে ট্যাক্স, টাকা পাঠানোর `অনিয়মে` জেল-জরিমানা
স্টাফ রিপোর্টার
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ০৯:৪৭ পিএম, ৩১ মে ২০১৬ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:৪৮ পিএম, ৩১ মে ২০১৬ মঙ্গলবার
উপসাগরীয় তেলসমৃদ্ধ ধনী দেশ কুয়েতে এক কঠিন আইন জারি করা হয়েছে প্রবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। এর ফলে অন্যান্যদের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং এক ধরনের বিপদের মুখে থাকবেন বাংলাদেশি শ্রমিকরাও।
এই আইনের ফলে এখন থেকে কেউ নিজ দেশে বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ছাড়া অন্য মাধ্যমে টাকা পাঠালে তাকে সর্বোচ্চ দশ হাজার দিনার জরিমানা এবং সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেলদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
প্রসঙ্গত, মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠাতে গেলে ট্যাক্স গুণতে হয় যা বিশেষ করে সাধারণ ও স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের জন্য, যারা শরীরের রক্ত পানি করে একটা একটা করে পয়সা রোজগার করেন- তাদের ওপর অস্বস্তিকর বোঝা হয়েই দেখা দেয়।
তাই, তারা প্রায় ক্ষেত্রেই চেষ্টা করেন লোক মারফত দেশে থাকা স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে। এতে কিছু অর্থ অন্তত সাশ্রয় হয়। এখন এই আইনের ফলে তাও রুদ্ধ হয়ে গেল। আর তারাতো পাঠান অল্প টাকা- অল্প টাকায় মানি এক্সচেঞ্জের চার্জও তুলনামূলক বেশি হয়।
আজ বুধবারের মুদ্রা দর অনুযায়ী (১ কেডি= ২৬০.১৬ টাকা হিসাবে) ১০ হাজার কুয়েতি দিনার (কেডি) টাকার হিসেবে দাঁড়ায় ২৬ লাখ ১ হাজার ৫৭৮ টাকা ৫০ পয়সা।
এখানে কুয়েতি কর্তৃপক্ষ একটা বিষয় `বিবেচনায়` এনেছে। তা হলো গত পাঁচ বছরে প্রবাসীরা কুয়েত থেকে যে পরিমাণ রেমিটেন্স নিজ নিজ দেশে পাঠিয়েছে তার যোগফল হচ্ছে প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলার যা দেশটির এক বছরের জাতীয় বাজেটের সমান।
এদিকে কুয়েতি মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে আরও জানা গেছে, লেজিসলেটিভ অ্যাফেয়ার্স কমিটি পার্লামেন্টে শিগগির নয়া আইনের বিল আনতে যাচ্ছে যাতে প্রবাসীদের আয়ের ওপর ট্যাক্স বসানোর প্রস্তাব করা হবে।
কুয়েত পার্লামেন্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে, সরকার ও পার্লামেন্ট উভয়েই পরিকল্পিত বিলটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে অর্থাৎ প্রস্তাবটি উঠা মাত্র তা আইনে পরিণত হতে সময় নেবে না।
খসরা মেতাবেক, ১০০ কেডির নিচে যারা বেতন পান তাদের ওপর ২% হারে করারোপ করা হবে। যারা ১০০ থেকে ৫০০ কেডির মধ্যে পান তাদের ট্যাক্স হবে ৪% আর যারা এর ওপরে পান তাদের গুণতে হবে ৫% হারে।
সূত্র জানায়, এই খাতে অর্জিত অর্থ সরাসির রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।
বিদেশি শ্রমিকদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
এদিকে, কুয়েত সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসী শ্রমিকরা বিশেষ করে যাদের বেতন ৫০০ কেডির নিচে তারা হতাশা প্রকাশ করেছে।
লি ডাম নামের একজন সামজিক মাধ্যমে বলেছেন, গরীব প্রবাসীদের ওপর তোমাদের এই আইন চাপাচ্ছো! এক কেডি তোমাদের কাছে কিছু না কিন্তু এটা আমাদের রক্ত নিংড়ে বের করতে হয়। যাদের বেতন ৫০০ কেডির ওপরে তাদের কাছ থেকে তা নাও না কেন! কারণ, ৫০০ কেডির নিচে যাদের বেতন তারা সবাই কাজ করে মরুভূমিতে অথবা কনস্ট্রাকশন ফিল্ডে, এসি রুমে নয়।
মার্ক নামে একজন মন্তব্য করেছেন, টাকা সংগ্রহের এটা সঠিক পন্থা হলো না।
হাতিসালা নাদিয়া বলেছেন, আমাদের বেতন তো মাত্র ৮০ কেডি! এটা কুয়েতে একটা নিম্ন বেতন। এর থেকে তোমরা টাকা কাটবে? তোমাদের দেশ আসলে নীতি মানছে না।
প্রসঙ্গত, কুয়েতে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন এখন ৬০ কেডি।
ভারামাপ্পা লিখেছেন, এটা ঠিক হলো না। আমরা তোমাদের দেশে এসেছি কাজ করতে, আমাদের বাড়তি দাবিদাওয়া নেই। আর আমরা কুয়েতিদের মতো মোটা বেতনওতো পাচ্ছি না!
সৈয়দ আজম বলেছেন, যেসব গরীব শ্রমিক কুয়তে এসেছে কাজের জন্য তাদের কাছ থেকে ট্যাক্স নেবে কুয়েতের অর্থ মন্ত্রণালয়! এটা একেবারেই ঠিক হলো না। এটা `দাওলাত এ কুয়েত` (স্টেট অব কুয়েত) হলো না- এটা এখন দৌলত (সম্পদ) লোভী কুয়েত।
মাদ্দি খান লিখেছেন, ট্যাক্সে আপত্তি নাই। কিন্তু আমাদের বেতনটাও সেই অনুপাতে বাড়িয়ে দাও না!
জেমস ম্যাথু নামে একজন বলেছেন- আমাদের সবার কষ্টার্জিত অর্থ তারা গিলতে চায়! বেঁচে থাকার জন্য খাও কিন্তু অন্যের কষ্টার্জিত মুখের গ্রাস কেড়ে খাওয়ার জন্য বেঁচে থেকো না।
মাত্র ৬০ কেডি বেতন পাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিক হাসান বললেন, কী বলবো দুঃখের কথা! এরা ধনী হয়ে, রাজা হয়ে আমাদের মতো গরীবের মুখের খাবারে হাত দিতে চায়! এরা কি খুব কষ্টে আছে?
কিন্তু হাসানের এই আর্তির, এই কষ্ট নিংড়ানো প্রশ্নের জবাব নিয়ে কি কখনো ভাবেন অত ধনী দেশের শাসকরা?
নিউজওয়ান২৪.কম/একে