ইরাক স্টাইলে হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুতেই কি মার্কিন মন্ত্রীর সফর!
ফিদানূর সুদর্শন
নিউজওয়ান24.কম
প্রকাশিত : ০২:০৯ এএম, ৬ মে ২০১৬ শুক্রবার | আপডেট: ১২:৪৬ পিএম, ২১ মে ২০১৬ শনিবার

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী রয়েছে বলে প্রমাণ করার চক্রান্তের বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
“অনেকে চাইবে, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস আছে দেখিয়ে দেশটাকে নিয়ে খেলতে। আমি বেঁচে থাকতে এই দেশকে নিয়ে কাউকে খেলতে দেব না,” জোরের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সংসদে একথা বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৫ মে) বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেন, বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিরা যোগসূত্র স্থাপন করছে। তার এ বক্তব্যের পর দশম সংসদের দশম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিসওয়াল অবম্য তার বক্তব্যে বিদেশিদের সঙ্গে বাংলাদেশি জঙ্গিদের সম্পর্ক গড়ে ওঠার বিষয়টি ‘সন্দেহ’ করছে বলে জানায়।
সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানে ইউএসএআইডি কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু তনু হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এরই ধারাবাহিকতায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঢাকায় আসেন দেশটির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। এসময় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশি জঙ্গিরা বিদেশি জঙ্গিদের সঙ্গে ‘কানেক্টেড’ হচ্ছে বলে জানান বিসওয়াল। বৈঠকে বিসওয়ালের সঙ্গে তার দেশের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটও উপস্থিত ছিলেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ইরাকে ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র আছে বলে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে তচনচ করে দেওয়া হয়। লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়, সম্পদ ধ্বংস হয় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। পরষ্পর হানাহানিতে দেশটিতে এখন নরকতুল্য পরিবেশ বিরাজ করছে। কিন্তু পরে দেখা যায় সিআিইএর কথিত যে রিপোর্টের ভিত্তিতে ইরাকে হামলা চালানো হয়েছিল তা ছিল মিথ্যা- সে ধরনের কোনো মারণাস্ত্রই ইরাকে মজুদ ছিল না। যদিও ইরাকি কয়েকটি পক্ষের আমন্ত্রণ আর যোগ সাজশেই বিদেশি শক্তি ইরাকে হামলে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করেই যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের বক্তব্যের জওয়াব দিয়েছেন সংসদে।
এক্ষেত্রে আরও একটি ভাবনার মতো বিষয় সামনে আসছে- তা হচ্ছে ‘জঙ্গি দমনে’ বা ‘বিধ্বংসী অস্ত্রের’ শিখণ্ডি ঝুলিয়ে বাংলাদেশেও ইরাক-আফগানিস্তান স্টাইলে অভিযানের প্রস্তুতি চালাচ্ছে বিদেশি শক্তি- এই গুজব তাহলে একেবারে ফেলনা নয়! এটা কঠিনভাবে আতাঙ্গিত হবারই বিষয় সাধারণ মানুষের জন্য।
এদিকে, একই ভাষণে সংসদে প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার করে বলে দেন, “এ দেশে জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান নেই। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অনেকেই খেলতে চাইবে। কিন্তু সেই খেলা আমি খেলতে দেব না।”
সাম্প্রতিক সময়ে লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, বিদেশি যাজক-পুরোহিত হত্যাকাণ্ডের বেশ কয়েকটি ঘটনায় আইএস ও আল কায়দার নামে দায় স্বীকারের বার্তা ছড়ানো হয়। একইসঙ্গে স্মর্তব্য, আইএস ও আল কায়দার পাশাপাশি তালেবান যেসব দেশে অস্তিত্বশীল (যেমন, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, সিরিয়া, পাকিস্তান, ইরাক) সেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান বা নিঃশব্দ ঘাতক বিমান ড্রোন হামলার নজির রয়েছে।
তবে বাংলাদেশে সংঘটিত বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইন্টারনেটে ছড়ানো দায় স্বীকারের বার্তাগুলোকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়ে সরকার দাবি করেছে, দেশি জঙ্গিরাই খুন করে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর নামে বার্তা ছড়ায়। পুলিশ বলছে, নিষিদ্ধ বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিম এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তারা ধারণা করছে।
গত ২৫ এপ্রিল ঢাকার কলাবাগানে বাড়িতে জুলহাজ ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে কুপিয়ে হত্যার পর আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার নামে বার্তা এসেছিল।
তবে জঙ্গি বিষয়ক চোর-পুলিশ খেলার শেষ কবে তা দেখার জন্য জনগণ কিন্তু অস্থিতর হয়ে উঠছে। তারা চায় থলের বিড়ালটাকে বের করে দেখতে। জনমনের সেই আকাঙ্খা টের পেয়ে প্রধানমন্ত্রী কি সেই থলের বিড়ালটাকেই দেখিয়ে দেওয়ার জন্য তৎপর হলেন কি না- সেটাই ভাবছেন অনেকে। আরেকটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মনে,তা হলো- প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবাণী কি সচকিত করতে পেরেছে বহুধা বিভক্ত আমাদের জাতীয় ঐক্যকে। অন্যরা কি পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না ইরাকি পক্ষগুলোর মতোই...
নিউজওয়ান২৪.কম/একে