NewsOne24

দায় শুধু আরবের আত্মভোলা শাসকদের নয়...

তামিম রায়হান

নিউজওয়ান24.কম

প্রকাশিত : ১১:৫৪ এএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৬ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:২২ পিএম, ১৮ মে ২০১৬ বুধবার

সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানিতে আশ্রয় নেওয়া মুসলিম শরণার্থীদের জন্য ইউরোপ ও আরবের ইসলামী সংস্থা ও সংগঠনগুলো কী করেছে- তা এখনও অস্পষ্ট। কিন্তু আশ্রয় নেওয়া এসব অসহায় মানুষদের সঙ্গে ইউরোপের বিশেষ করে জার্মানির গীর্জাগুলোর সদাচারণ এবং পাদ্রীদের আতিথেয়তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে।

ইতিমধ্যে অনেক আরব শিশুকে- যুদ্ধে যাদের মা-বাবা মারা গেছে, জার্মানির বিভিন্ন খ্রিস্টান পরিবারে তাদের ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে ওই পরিবারগুলোর বদান্যতা এবং সাহচর্যে খ্রিস্টধর্ম এবং নতুন করে জীবনের দীক্ষা পায় শিশুরা।

মার্টিন্জ নামে একজন পাদ্রী সম্প্রতি ৩০০ শরণার্থীকে ডেকে বক্তৃতা করেছেন, সবার হাতে আরবি ও অন্যান্য ভাষায় অনুদিত ইঞ্জিল (বাইবেল) কিতাব তুলে দিয়েছেন। তিনি এবং তার বন্ধু পাদ্রীরা সময় পেলেই শরণার্থীদের আশ্রয়কেন্দ্র বিভিন্ন খেলার মাঠ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাদের সুদিনের স্বপ্ন দেখান, খ্রিস্টধর্মের দাওয়াতে ব্যস্ত সময় কাটান।

শিশুদের হাতে তারা চকলেট এবং উপহারের মোড়কে ইঞ্জিল তুলে দেন। এসব শরণার্থীর বেশিরভাগই সিরিয়া, ইরান, আফগানিস্তান এবং ইরাক থেকে এসেছেন।

পাদ্রীদের এমন আচরণ ও দাওয়াতি কার্যক্রম নিয়ে হৈ চৈ হয়েছে শরণার্থী ক্যাম্পে। তাৎক্ষণিক সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় একজন ইরানি শরণার্থী খ্রিস্টান হয়ে যাওয়ায় তাকে ধরে মারধর করেছেন কিছু আফগানি শরণার্থী। বিভিন্ন ক্যাম্পে অনেক শরণার্থী পাহারা বসিয়েছেন যাতে আর কোনও পাদ্রী সেখানে ঢুকতে না পারে।

গত কয়েক বছরে যৌন নির্যাতন ও অর্থ আত্মসাৎসহ নানা কেলেঙ্কারিতে জার্মানির গীর্জাগুলোতে খ্রিস্টানদের যাতায়াত কমেছে ব্যাপক হারে। ফলে নতুন করে গীর্জাগুলো জমজমাট করে তুলতে পাদ্রীরা পিছু লেগেছেন এই শরণার্থীদের। যার যার ধর্ম প্রচারে যে কোনও প্রচারক অন্যদের নিয়ে ব্যস্ত হতে পারেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এর বিপরীতে ইউরোপের মুসলমানরা কতখানি শক্ত ভূমিকা রাখতে পারেন, এর উপর নির্ভর করছে অসংখ্য শিশু শরণার্থীর ভবিষ্যত।

জীবন বাঁচাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত নিজ দেশ ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি জমানো অসহায় মুসলিম শরণার্থীদের সামনে এখন দুটি পথ- মুসলিম শরণার্থী হিসেবে সংগ্রামের জীবন বেছে নেওয়া অথবা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করে তাৎক্ষণিক সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করা। আদর্শিক তাড়নায় নয়, শুধু পরিস্থিতির চাপে এভাবে যেসব মুসলমান ইতিমধ্যে ধর্মান্তরিত হয়েছেন এবং আরও যারা হওয়ার কথা ভাবছেন, এঁদের প্রত্যেকের দায় শুধু আরবের আত্মভোলা শাসকদের নয়, পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিম দেশের শাসক এবং নাগরিকেরও।

লেখক: কাতার প্রবাসী তরুণ সাংবাদিক ও লেখক

নিউজওয়ান২৪.কম/এসএল