‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে’
নিউজ ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪
প্রকাশিত : ০৯:০৪ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৯:২৩ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বুধবার
ফাইল ছবি
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’ শুধু তাই নয়, নামাজ মানুষের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক পবিত্রতা সাধনের অনন্য হাতিয়ার।
ঈমানের পর ইসলামের মূল রুকন বা স্তম্ভ হলো নামাজ। মানুষের জন্য ফরজ ইবাদত ও ইসলামের দ্বিতীয় রুকনও এ নামাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা দৈনিক পাঁচবার মানুষের জন্য নামাজকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। এ ফরজ কাজ করার মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নামাজের রয়েছে সুদূর প্রসারী প্রভাব ও উপকারিতা।
অশ্লীলতা ও অন্যায় দূরকারী:
নামাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ জীবন থেকে অশ্লীল ও অন্যায় বিদুরিত হয়ে সামাজিক শৃঙ্খলার উন্নতি হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।’
সাম্য ও ঐক্য প্রতিষ্ঠাকারী:
জামাআতে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে সমাজের উঁচু-নিচু, ধনি-নির্ধন দূরত্ব হ্রাস করে সাম্য প্রতিষ্ঠা করে। পাশাপাশি নামাজের মাধ্যমেই মুসলিম সমাজের ঐক্য গড়ে ওঠে।
দায়িত্ববোধ ও সময় সচেতনকারী:
প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে সব মানুষ সময়জ্ঞান ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়।
নেতৃত্ব ও আনুগত্যবোধ:
জামাআতে নামাজ আদায়কারী সমাজের প্রত্যেক মানুষের মাঝে ইমাম ও মুক্তাদির আনুগত্যবোধ জাগ্রত হয়।
পারস্পরিক সহযোগিতা সৃষ্টি:
নামাজের জন্য মসজিদ তৈরি ও তার রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমেই সমাজের প্রতি মানুষের সহযোগিতার গুণ সৃষ্টি হয়।
নিষ্ঠা ও একাগ্রতা তৈরি:
নিয়মিত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মানুষের মাঝে নিষ্ঠা ও একাগ্রতা তৈরি হয়।
উত্তম চরিত্রের অধিকারী:
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মানুষের খারাপ গুণগুলো দূরীভূত হয়ে ভালো গুণের অধিকারী হয়, যা সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কাজে লাগে।
আত্মনিয়ন্ত্রণকারী:
নিয়মিত নামাজ আদায় ও নামাজের নিয়ম-পদ্ধতির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেপরোয়া ও উচ্ছৃঙ্খল গুণ দূর হয়। সমাজের প্রতিটি কাজে ধীরস্থিরভাবে নিয়ন্ত্রিত কাজ করার সুযোগ হয়।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নামাজের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত নামাজ আদায় করলে মানুষের মাঝে এ গুরুত্বপূর্ণ গুণগুলোর সমাবেশ ঘটবে, যা মানুষের জন্য সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নামাজের উপকারিতা:
শুধু তাই নয়, নামাজের মাধ্যমে নামাজি ব্যক্তি অনেক শারীরিক উপকার লাভ করে। যার কিছু তুলে ধরা হলো-
দাঁড়ানো:
মানুষ যখন নামাজে দাঁড়ায়; তখন সব চোখ সিজদার স্থানে স্থির থাকে। ফলে মানুষের একাগ্রতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
রুকু:
নামাজি ব্যক্তি যখন রুকু করে এবং রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে দাঁড়ায় তখন মানুষের কোমর ও হাঁটুর ভারসাম্য রক্ষা হয়। রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে কোমর ও হাটু ব্যাথা উপশম হয়।
সিজদা:
নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন নামাজি ব্যক্তির মস্তিস্কে দ্রুত রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে তার স্মৃতি শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আবার সিজদা থেকে ওঠে যখন দুই সিজদার মাঝখানে বসে এতে তার পায়ের উরু ও হাঁট সংকোচন এবং প্রসরণ ঘটে। এতে করে মানুষের হাঁটু ও কোমরের ব্যথা উপশম হয়।
ওঠা বসা:
নামাজের সময় নামাজি ব্যক্তিকে দাঁড়ানো, রুকুতে যাওয়া, রুকু থেকে ওঠে সোজা হয়ে স্থির দাঁড়ানো, আবার সিজদায় যাওয়া, সিজদা থেকে ওঠে স্থিরভাবে বসা, আবার সিজদা দিয়ে দাঁড়ানো বা বসা। এ সবই মানুষের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়াম। এতে মানুষের শারীরিক বহুবিদ উপকার সাধিত হয়।
মানসিকতার পরিবর্তন:
নামাজের মাধ্যমে মানুষের মন ও মানসিকতায় অসাধারণ পরিবর্তন আসে। গোনাহ, ভয়, নীচুতা, হতাশা, অস্থিরতা, পেরেশানি ইত্যাদি দূরভীত হয়। ফলে বিশুদ্ধ মন নিয়ে সব কাজে সম্পৃক্ত হওয়া যায়।
দেহের কাঠামোগত উন্নতি:
নামাজ মানুষের দেহের কাঠামোগত ভারসাম্যতা বজায় রাখে। ফলে স্থুলতা ও বিকলঙ্গতা হার কমে যায়। মানুষ যখন নামাজে নড়াচড়া করে তখন অঙ্গগুলো স্থানভেদে সংবর্ধিত, সংকুচিত হয়ে বিশেষ কাজ করে থাকে। অঙ্গ ও জোড়াগুলোর বর্ধন ও উন্নতি এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।
পরিচ্ছন্ন রাখে:
নামাজের জন্য মানুষকে প্রতিদিন পাঁচবার অজু করতে হয়। আর এতে মানুষের ত্বক পরিষ্কার থাকে। অজুর সময় মানুষের দেহের মূল্যবান অংশগুলো পরিষ্কার হয় য দ্বারা বিভিন্ন প্রকার জীবানু হতে মানুষ সুরক্ষিত থাকি।
চেহারার লাবন্যতা বৃদ্ধি:
নামাজের জন্য মানুষ যতবার অজু করে, ততবারই মানুষের মুখমণ্ডল ম্যাসেস হয়ে থাকে। যাতে মুখমণ্ডলে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে মানুষের চেহারার লাবন্যতা বৃদ্ধি পায়, মুখের বলিরেখা ও মুখের দাগ কমে যায়।
বিশেষ করে…
নামাজ মানুষের মানসিক, স্নায়ুবিক, মনস্তাত্ত্বিক, অস্থিরতা, হতাশা-দুশ্চিন্তা, হার্ট অ্যাটাক, হাড়ের জোড়ার ব্যাথা, ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ, পাকস্থলীর আলসার, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস, চোখ এবং গলা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত, নামাজ মানুষকে সব সময় সতেজ রাখে, অলসতা এবং অবসাদগ্রস্ততাকে শরীরে বাড়তে দেয় না।
পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মের মধ্যে নামাজের মতো এমন সামগ্রিক ইবাদত আর নেই। নামাজির জন্য এটা একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, এটা একান্তই সামগ্রিক ব্যায়াম। যার প্রভাব মানুষের সব অঙ্গগুলোতে পড়ে এবং মানুষের প্রতিটি অঙ্গ নড়াচড়ার ফলে শক্তি সৃষ্টি হয় এবং সুস্বাস্থ্য অটুট থাকে।
মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে সময় মতো নামাজ আদায়ের মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি মানুষকে সুন্দর ও উত্তম গুণের অধিকার হওয়ার এবং উল্লেখিত গুণগুলো অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।
নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ