খারাপ সময় জীবনেরই অংশ: মোস্তাফিজ
নিউজওয়ান ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ১২:০৮ পিএম, ১ ডিসেম্বর ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ১২:০৯ পিএম, ১ ডিসেম্বর ২০১৭ শুক্রবার
দুপুর সাড়ে ১২টা, মিরপুর শেরেবাংলা মাঠের একাডেমি ভবনের করিডোর ধরে হাঁটছেন মোস্তাফিজুর রহমান। গন্তব্য জিমের দিকে। গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা থেকে তার কাছে আনা হয়েছে অনেক খাবার। মাছ, পেঁপে, পাকা বেল সবই মোস্তাফিজের প্রিয়। ক্রিকেটের প্রয়োজনে শহরে থাকলেও গ্রামে পড়ে থাকে তার মন।
তার মতে সেখানে থাকলেই দ্রুতই ফিট হয়ে যান।কিন্তু ক্রিকেট জীবনটা পার করতে হয় কঠিন অনুশীলনে। বিশেষ করে পেসারদের শরীরের পেশীগুলো ঠিক রাখতে জিমের বিকল্প নেই। জিমে এখন আগের চেয়ে অনেক সিরিয়াস তিনি। নিয়মিত সাইক্লিং থেকে শুরু করে সবই করেন। এই বয়সেই অনুধাবন করেছেন খারাপ সময় জীবনেরই একটি অংশ। আর সেখান থেকে বের হতে পরিশ্রমই একমাত্র পথ। এমনিতে খুব বেশি কথা বলেন না।
তিনি বলেন, ‘এখনতো বয়স অনেক কম। আরো অনেক সময় সামনে পড়ে আছে। একটা খারাপ সময় যাচ্ছে, যেতেই পারে। আমি মনে করি খারাপ সময় জীবনেরই অংশ। আমি এ সব নিয়ে ভাবি না। আমি জানি আজ খারাপ তো কাল ভালো হতেই পারে।’
ইনজুরি কাটিয়ে জাতীয় দলে ফিরেছিলেন নিউজিল্যান্ড সফরে। কিন্তু যে কাটার মাস্টারকে দেখার অপেক্ষাতে ছিলেন সবাই তাকে আর দেখা যাচ্ছে না। তার বোলিংয়েও নেই ছন্দ। সদ্য দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যে পেসার হতে পারতেন দলের তুরুপের তাস। সেই মোস্তাফিজ ছিলেন একেবারেই ম্লান। কেন এমন হলো? দক্ষিণ আফ্রিকাতো পেসারদের স্বর্গ!
মোস্তাফিজের সহজ সরল উত্তর, ‘আমি বলবো সেটি ছিল আমাদের খারাপ সময়।’ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিনি ইনজুরিতে পড়েন। টেস্ট খেললেও ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলতে পারেননি। এমনকি দেশে ফিরেও বিপিএল’র সিলেট ও ঢাকা পর্বে নিজ দল রাজশাহী কিংসের হয়ে মাঠে নামতে পারেননি। তবে চট্টগ্রাম পর্বে খেলেন তিনটি ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে কুমিল্লার বিপক্ষে ৪ ওভার বল করে ৩২ রান দিয়ে তুলে নেন ২ উইকেট। এরপর খুলনার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ে ৪ ওভারে দেন ৪৮ রান। নিতে পারেননি একটি উইকেটও। তবে চট্টগ্রামের বিপক্ষে তার দল জয়ে ফিরে। ৪ ওভারের স্পেলে ১৮ রান দিয়ে দু’টি উইকেট নেন মোস্তাফিজ। এমন বোলিংয়ের পর তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা। তবে এ নিয়ে মোস্তাফিজ খুব একটা চিন্তিত নন। তিনি বলেন, ‘দেখেন খারাপ হয়েছে, বা হচ্ছে, এখন এটি নিয়ে যদি আমি ভাবতে থাকি তাহলে আরো খারাপ হবে। চিন্তা বাদ দিয়ে যত নিজের কাজ করা যায় আমার জন্য ততোই ভালো।’
ইনজুরি থেকে ফেরার পর নেই তার সেই পুরনো ছন্দ। বিসিবি’র চিকিৎসকের মতে বল করার সময় তাকে ইনজুরিটা ভাবায়। যে কারণে ছন্দে ফিরতে একটু সময় লাগছে। এ নিয়ে মোস্তাফিজ বলেন, ‘শুরুতে বল করার সময় ইনজুরির কথাটা চিন্তায় আসতো। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততোই তা ভুলে যাচ্ছি।
এখন মাঠে নামলে যখন রিদমে থাকি তখন একেবারেই মনে হয়না ইনজুরির কথা। আর ইনজুরি কোনো ক্রিকেটারের না হয়। সবাই একদিন ফিট হয়ে ফিরে। তার জন্য যে চেষ্টা প্রয়োজন আমি সেটাই করি।’ শুধু তাই নয়, শুরুতে যে মোস্তাফিজ মাঠে নামলেই ঝুলিতে জমা পড়তো ৪/৫ উইকেট। সেখানে এখন সেটি ২/৩টিতে নেমে এসেছে। এটি নিয়ে যখন সবাই ভাবছে তখন মোস্তাফিজ জানালেন চরম বাস্তবতার কথাটি। তিনি বলেন, ‘এটিতো হবে আমিও জানতাম। কারণ দেখেন যখন নতুন ছিলাম তখন আমার বল কেউ বুঝতে পারতো না। এখন দেখেন যে প্রযুক্তি তাতে সবার কাছে আমার বোলিংয়ের ফুটেজ আছে। আমার দুর্বলতা, শক্তি সবাই জানে। তাই ব্যাটসম্যানরা সহজে উইকেট দেয় না। আর এটিতো বাস্তব একজন বোলার সবদিন পাঁচ উইকেট পাবে না। আবার যেদিন অনেক বেশি ছন্দে থাকবো সেদিন আবারো পাঁচটি পেয়ে যেতে পারি। আগে হয়তো অল্প রান দিয়ে বেশি উইকেট নিতাম। এখন হয়তো বেশি রান খরচ হবে।’
বিপিএল-এ এবার পেসাররাই দারুণ করছে। বিশেষ করে দেশি পেসারদের মধ্যে তাসকিন আহমেদ, আবু জায়েদ রাহী, আবু হায়দার রনি, এমনকি তার দলেরই তরুণ কাজী অনিক ও হোসেন আলীরা। তাহলে কি পেসাররা উইকেট থেকে সাহায্য পাচ্ছে? মোস্তাফিজ বলেন, ‘উইকেট বড় কিছু না, আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টি পেসারদের ওভারটাকে সবাই টার্গেট করতে চায় আবার ভয়ও পায়। যে কারণে উইকেট দিয়ে দেয়। আবার সন্ধ্যার পর খেলা হচ্ছে শিশির পড়ছে যে কারণে স্পিনাররাও বল গ্রিপ করতে পারছে না। আর অনিক বলেন, হোসেন আলী বলেন ওরা নতুন, ভাল করছে। আশা করি এ ধারাটা ধরে রাখতে পারবে।’
অন্যদিকে নিজের খারাপ সময় যাচ্ছে তা নিয়ে না ভাবলেও তার খারাপ লাগে অন্য একটি বিষয় ভেবে। সামনেই দুই বন্ধুকে দেখিয়ে বলেন, ‘আমার খারাপ না লাগলেও ওদের (বন্ধু) খারাপ লাগে। যারা আমার বোলিং দেখতে চায় তাদের খারাপ লাগে।’ মোস্তাফিজ বলেন ‘এখন বয়সতো কম। চেষ্টা নিজেকে ফিরে পাওয়ার। সময়ই বলে দিবে আমি টিকে থাকি কিনা? এখনো শিখছি, আমার কাছে যেটা সব সময় মনে হয় শেখার কোনো শেষ নেই।’
নিউজওয়ান২৪.কম