প্যারা কমান্ডোরা পাচ্ছেন জাতীয় পতাকা
নিউজ ওয়ান টুয়েন্টি ফোর ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ১২:৩৮ পিএম, ২ নভেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার
ফাইল ছবি
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সর্বোচ্চ সম্মান ও স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় পতাকা পাচ্ছে ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ আজ রাজশাহী সেনানিবাসে আড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাটালিয়নের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন।
দেশপ্রেম আর অসীম সাহসিকতার কারণে এ পতাকা তুলে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, পতাকা একটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে একটি ইউনিটকে তার অবদান, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, অভিজ্ঞতা ও সাফল্য অর্জনের জন্য জাতীয় পতাকা দেয়া হয়। এটা যেকোনো ইউনিট বা প্রতিষ্ঠানের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সর্বোচ্চ সম্মান ও স্বীকৃতি। এ সম্মান ও স্বীকৃতি একটি ইউনিট নির্দিষ্ট সময় ব্যাপী আভিযানিক, প্রশিক্ষণ, খেলাধুলা, প্রশাসনিক এবং দেশ উন্নয়নমূলক কাজের জন্য পায়।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে উদ্ভূত জিম্মি সংকটে মাত্র ১২ মিনিটে সফল জিম্মি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন। নিজেদের কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মোট ১৩ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে উদ্ধার করে দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে তারা। পরে চলতি বছরের মার্চে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় অবস্থিত আতিয়া মহলে জিম্মি পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামে চার দিনের শ্বাসরুদ্ধকর অপারেশন পরিচালনার মাধ্যমে অকৃত্রিম সাহসিকতায় দেশকে আরেকবার সফলতা এনে দেয় চৌকস কমান্ডোরা।
পৃথিবীর কাউন্টার টেরোরিজম অপারেশনের ইতিহাসে অন্যতম সফল ও দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী অভিযান হিসেবে দেশে বিদেশে সমাদৃত হয় ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ ও ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’। এই পতাকা প্রদানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ইউনিট বা প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতার প্রতি রাষ্ট্রের পরিপূর্ণ আস্থা প্রকাশ পায়। ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন নিরলস ও একনিষ্ঠভাবে দেশ সেবা করে আজ জাতীয় পতাকা পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। এই ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গৌরব।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরুল। তিনি ১৯৯৭ সালের ১১ই ডিসেম্বর ৩৭তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে কমিশন লাভ করেন। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ব্যানস্রিক-৪ (ইউনামিড) সুদান এ উপ-অধিনায়ক এবং হিসাব অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। উজ্জ্বল কর্মজীবনের অধিকারী লে. কর্নেল ইমরুল বিশেষ অবদানের জন্য সেনাবাহিনী পদকে ভূষিত হন এবং সেনাপ্রধানের প্রশংসাপত্র অর্জন করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সবুজ পতাকার উপরে একটি কমান্ডো ছুরির দুইপাশে দুটি প্যারাসুট অংকিত রয়েছে। প্যারাসুটদ্বয়, প্রধান ও সংরক্ষিত প্যারাসুটসহ একটি বিশেষ ফোর্সকে নির্দেশ করে। কমান্ডো ছুরি সাহস এবং বীরত্বেরও বহিঃপ্রকাশ ও সবুজ পটভূমি আমাদের মাতৃভূমির প্রকৃতি ও পারিপার্শ্বিকতার প্রতীক।
‘মৃত্যুপণ বিজয়ী’ মূলমন্ত্রে দীক্ষিত এই ব্যাটালিয়ন গর্ব ভরে ধারণ করে চেতনার পতাকা। ক্ষিপ্র ও আত্মপ্রত্যয়ী কমান্ডোদের ছদ্মনাম ‘চিতা’ এবং ইউনিটের স্লোগান ‘লাভ ইট অর লিভ ইট’। এই ব্যাটালিয়নের ক্যাপ ব্যাচের ‘শাপলা’ জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বেও প্রতীক, ‘শিকল’ আইন কানুন ও শৃঙ্খলার প্রতীক। ‘চিতা’ হিংস্রতা এবং দ্রুততার প্রতীক এবং ‘শীল্ড’ বিজয় এর প্রতীক। কালো রং ও কুকরি যথাক্রমে দুষ্ট চক্রের প্রতি সতর্কতা ও বীরত্বের প্রতীক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে স্পেশাল ফোর্স গঠনের অনুভবকে বাস্তবে রূপদানের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালের শেষের দিকে এসআইএন্ডটিতে বিশেষ যুদ্ধ শাখা গঠিত হয়। ১৯৮০ সালে বিশেষ যুদ্ধ শাখায় আর্মি কমান্ডো এবং কাউন্টার ইন্সারজেন্সি কোর্স শুরু হয়। একই বছর স্পেশাল ওয়ারফেয়ার উইং সম্প্রসারিত হয়ে স্পেশাল ওয়ারফেয়ার স্কুল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৮৯ সালে এসআইএন্ডটির বিশেষ যুদ্ধ শাখায় বাংলাদেশে প্রথম প্যারা প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করার পর ১৯৯২ সালের ৩০শে জুন ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন জালালাবাদ সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একই সেনানিবাসে ১৯৯৩ সালের মে মাসে ব্যাটালিয়নের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স গঠনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপলাভ করে। এই ব্যাটালিয়নের ১ম অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন লে. কর্নেল (পরবর্তীতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) মো. জহুরুল আলম, পিএসসি (অব.)।
দীর্ঘ ২৩ বছর পর ২০১৫ সালের ১লা জুন একটি পূর্ণাঙ্গ রেজিমেন্ট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন। ২০১৬ সালের ৪ঠা সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত এডহক প্যারা কমান্ডো ব্রিগেডের অধীনে থেকে সামরিক অপারেশন পরিদপ্তরের দিক নির্দেশনায় ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন নিরলস ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্যে নিয়োজিত আছে। সাফল্যমণ্ডিত ও গৌরবের সোনালী অধ্যায়ে ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন সফলতার পাতায় স্থান পেয়েছে।