রায় পক্ষে গেলে ঐতিহাসিক বিপক্ষে ফরমায়েশি: হাইকোর্ট
নিউজ ওয়ান টুয়েন্টি ফোর ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ০৯:৩৬ এএম, ২০ অক্টোবর ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ১০:১৮ এএম, ২০ অক্টোবর ২০১৭ শুক্রবার

ফাইল ছবি
সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদিনের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচিন হবে না মর্মে-দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দেয়া চিঠির বৈধতার প্রশ্নে জারিকৃত রুলের ওপর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, যে কোনো একটি রায় হলেই তার আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। পক্ষে-বিপক্ষে হলো কিনা তা দেখা হচ্ছে? রায় পক্ষে গেলে ঐতিহাসিক আর বিপক্ষে গেলে ফরমায়েশি হয়ে যাচ্ছে। এমনকি রায়ের বিরুদ্ধে মানবন্ধন, ধর্মঘট করা হচ্ছে। আমাদেরকে (বিচারক) রাস্তায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের ডিভিশন বেঞ্চে বৃহস্পতিবার এই শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে বিচারপতি জয়নুলের আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের চিঠির পরও দুদক তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। প্রথমে তথ্য সরবরাহ না করলেও পরে সুপ্রিম কোর্ট সব তথ্য দিয়েছে। তাই ওই চিঠির আর কার্যকারিতা নেই।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, একজন বিচারক সাংবিধানিক পদে ছিলেন বলে তিনি দায়মুক্তি পেতে পারেন না। ফুল কোর্টের সিদ্ধান্ত ছাড়া প্রধান বিচারপতির এভাবে চিঠি দেওয়ার সুযোগ নেই। এ চিঠির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালে যেমন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয় ঠিক তেমনি সুপ্রিম কোর্টের এ চিঠি।
এ পর্যায়ে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশ্যে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক কোনো আদেশের বিচার করার এখতিয়ার হাইকোর্টের আছে কি? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ক্ষমতা বহির্ভূত কোনো আদেশ দেওয়া হলে তা দেখার এখতিয়ার হাইকোর্টের রয়েছে। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। যদিও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সব তথ্যই দুদককে সরবরাহ করেছে, তারপরও এবিষয়ে একটি আদেশ থাকা প্রয়োজন।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্যই এ চিঠি দিয়েছেন। কোনো ব্যক্তিকে রক্ষার জন্য নয়। কারণ বিচার বিভাগ খুবই স্পর্শকাতর জায়গা। সুপ্রিম কোর্ট কাউকে দায়মুক্তি দিতে পারে কি? জবাবে ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ওই চিঠিতে বিচারপতি জয়নুলকে দায়মুক্তি দেয়া হয়নি।
দুদক কৌসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, গত ২৮ মার্চ অতিরিক্ত রেজিষ্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী দুদককে যে চিঠি দিয়েছিলেন তাতে নির্দেশিত হয়ে জানানোর বিষয়টি উল্লেখ ছিলো। এরপর অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান ব্যক্তিগতভাবে অরুনাভ চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করেন। এ বিষয়ে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে বলেছেন যে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে এই চিঠি দেয়া হয়েছে বলে অরুনাভ চক্রবর্তী তাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।
আদালত বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সব তথ্য দিয়েছে। এরপর কি আর এ ধরণের চিঠির গুরুত্ব আছে? খুরশীদ আলম খান বলেন, দুদক আইনের ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী দুদকের কাজে বাধার সৃষ্টি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য ৩ বছর সাজা হতে পারে। আদালত বলেন, এক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য কি?
জবাবে দুদক কৌসুলি বলেন, আইনে আছে। তবে দুদক এখনও এ ধারা প্রয়োগ করেনি। এক্ষেত্রেও অতদূর যেতে চাচ্ছি না। তবে সুপ্রিম কোর্টের এ চিঠির ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত না পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে অন্যরাও সুযোগ নেবে।
বিচারপতি জয়নুল আবেদিনের বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচিন হবে না মর্মে-দুদককে দেয়া সুপ্রিম কোর্টের চিঠি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে গত ১০ অক্টোবর রুল জারি করে হাইকোর্ট। আগামী ২৪ অক্টোবর তিন অ্যামিকাসকিউরি এই র“লের শুনানিতে অংশ নেবেন।