এই কথাটা কখনই বছরের শুরুতে মনে হয় না!
আরিফ আহমেদ বেলাল
নিউজওয়ান24.কম
প্রকাশিত : ০১:৫৯ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৬ বৃহস্পতিবার

সময় কি দ্রুত শেষ হয়ে যায় । এক বছর কথাটা শুনলে মনে হয় সে তো বেশ অনেকটা সময়। অনেক গুলো দিন রাত্রি। এবার ধীরে সুস্থে গুছিয়ে গাছিয়ে সব কিছু করা যাবে। একটা বছর তো সময় পাওয়া গেল। এ বছর যা হয়নি সামনের বছর তা হবে। একটা বছর তো অনেক সময়।
ভাবনার আর কী আছে! প্রায় প্রতি বছরই বছরের উপান্তে এসে বেশির ভাগ মানুষই বোধ হয় একথাগুলো ভাবে। সব হতাশা আর ব্যর্থতার পর নতুন করে স্বপ্ন দেখে। এক বছরের এতগুলো দিন রাত্রি তো প্রকৃতপক্ষে একটি দীর্ঘ দিন রাত্রির সামান্য পরিসর বই আর কিছু নয়।
শেষ পর্যন্ত দেখা যায় একটি দিনরাত্রি যেভাবে শেষ হয়ে গেছে একটি বছরও শেষ হয়ে গেছে একইভাবে। বছর শেষে এসে তাই বারবার মনে হয় একটি বছর আসলে এত কম সময়।
কিন্ত এই কথাটা কখনই বছরের শুরুতে মনে হয় না। এক বছর মানে ৩৬৫ দিন, বারটি মাস। বছরকে কত দীর্ঘ মনে হয়।
ধরা যাক এক বছর পর কোনো প্রবাসী ফিরে আসবে তার প্রিয়জনের কাছে, প্রিয় সান্নিধ্য লাভ করবে কোনো বন্দীর, নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটবে কোনো আত্মগোপনকারী গেরিলার– তাদের কাছে একটি বছর খুবই দীর্ঘ। মনে হয় যেন অনন্তকাল কিছুতেই শেষ হতে চায় না।
আবার মৃত্যুপথযাত্রী কোনো বাক্তির কাছে কী দ্রুত ও অস্থির এই সময়। আর সে যদি জানে মাত্র এক বছর তার জীবনকাল– তাহলে তো কোনো কথাই নেই। সে দেখে কী দ্রুত লাফিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি দিন-রাত্রি।
বছর সম্বন্ধে বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও উপলব্ধি। কারণ, এই প্রতিক্রিয়া ঘটে তার নিজের মনের অবস্থা অনুসারে। সেজন্য বছর কারো কাছে দীর্ঘ, কারো কাছে সংক্ষিপ্ত।
যারা সময়ের সদ্ব্যবহার করতে জানে এবং জীবনে যারা সাফল্যের মুখ দেখেছে ও জীবনকে করে তুলেছে অর্থময়, তাদের নতুন বছরগুলো ব্যর্থতার অদৃশ্য চিরতা গিলে আর অনুশোচনা করে করে কাটাতে হয় না। জীবনকে তারা বিচার করে কাজ দিয়ে। সক্রিয়তাই তাদের কাছে জীবন। সেই নিরিখেই তারা জীবন ও সময়কে পরিমাপ করে।
আমরা জীবনের প্রতি এমন নির্লিপ্ত বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গীর অভাবে জীবনকে যথাযথরূপে উপলব্ধি করতে যেমন ব্যর্থ হই তেমনি জীবনের কর্তব্যও সম্যকভাবে পালন করতে পারিনা– জীবনকে অতিমাত্রায় আবেগ দিয়ে দেখলে যা হয়।
ভাববাদী ও অদৃষ্টবাদী সমাজের মানুষের কাছে জীবন কখনোই তার সত্য ও যথার্থরূপে প্রতিভাত হয় না। জীবনকে তাদের দেখতে হয় অতিমাত্রায় আশা ও স্বপ্নের রঙ্গিন চশমা দিয়ে, না হয় ব্যর্থতা ও হতাশার ধূসর কাঁচের মধ্য দিয়ে। জীবনকে তার প্রকৃত সংজ্ঞা ও অর্থে কখনোই তেমন বুঝার চেষ্টা করা হয় না।
একথা সত্য যে, সব মানুষই যে সব সময় নিষ্ক্রিয় ও চেষ্টারহিত এমন বলা যায় না। বরং অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় তারা বারবার চেষ্টা করেও নিষ্ফল ও ব্যর্থ । এই ব্যর্তা ও নিষ্ফলতার বোধও তাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্যমহীন মনোবৃত্তির জন্ম দেয়। একেকটি উদ্যোগ তার ব্যর্থ হয়েছে নতুন নতুন ব্যর্থতা আর পরাজয়ে। সে কীভাবে উদ্যমশীল ও তৎপর হবে!
মানুষের জীবনে সার্থকতা একটি বড় ব্যাপার। সাফল্য মানুষকে তার নিজের চেয়েও বড় করে তোলে। সাফল্যের পঙ্ক্ষিীরাজে চড়ে সে নিজেকেই অতিক্রম করে যায়। ব্যর্থতা মানুষকে হতাশ করে। নিজের শক্তি সম্পর্কে সে হয়ে পড়ে অবিশ্বাসী ও আস্থাহীন। এভাবে তার সুপ্ত সম্ভাবনাও ক্রমশ নষ্ট হয়ে পড়ে। এজন্য জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই যে কোনো কাজের স্বীকৃতি ও সাফল্য প্রয়োজন।
আর যারা স্বীকৃতি পায় না , তারা জানে না যে জীবনের সম্ভাবনা কতো বিশাল। তার পরিধি কতো ব্যাপক, অসীম অনন্ত তার জীবন ও কর্মের পরিধি।
ছোটবেলা থেকেই নানা বাধা নিষেধ ও নিয়ন্ত্রণের বেড়াজালে আবদ্ধ হতে হতে আমরা জীবনের এই বিশালতার কথা ভুলেই যাই। জীবন আমাদের কাছে তখন ক্ষুদ্র ও সীমিত। আমরা শুধু জানি জীবন মানেই “দিন যাপনের আর প্রাণ ধারণের গ্লানি” । কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ও সাধনা তো এই ক্ষুদ্র গণ্ডী ও শৃঙ্খলিত জীবন থেকে মুক্তি। সব মানুষই সেই মুক্তি চায়- কেউ পায় কেউ পায় না। কিন্ত তার পরেও মানবেতিহাসের এই অবিমিশ্র ধারা আমাদেরকে নিয়ত জীবন যুদ্ধে ব্যাপৃত রেখেছে।
তাই, শত ব্যর্থতা আর পরাজয়ের পরও আবার নতুন করে আশায় বুক বাঁধি, স্বপ্ন দেখি। এও মানুষের জীবনের আর এক সত্য। বাংলা বছরের শেষ প্রান্তে এসে সেই অনাগত দিনের নতুন প্রত্যাশায় সম্মুখ পানে চলার সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করার কথাটাই পুনরাবৃত্তি করতে চাই।
সবাইকে নববর্ষের শুভেছা।
[ফেসবুকের লেখকের হোমপেজ থেকে নেওয়া]
নিউজওয়ান২৪.কম/একে