এই নববর্ষ যেন অন্যরকম হয়
স্টাফ রিপোর্টার
নিউজওয়ান24.কম
প্রকাশিত : ১১:৪৯ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০১৬ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:৩৪ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৬ রোববার

মনমাতানো আলপনায় সেজেছে মানিক মিয়া এভিনিউ
একের পর এক অপহরণের ধারাবাহিকতায় নির্মমভাবে শিশু নির্যাতন ও হত্যা, হবিগঞ্জে একসঙ্গে চার শিশুহত্যাসহ মাত্রাতিরিক্ত নৃশংসতায় ১৪২২ সাল আপামর বাঙালিকে অনেকটাই বেদনাবিধূর করে রেখেছিল।
এরপর বছরের শেষদিকে এসে কলেজছাত্রী তনু হত্যাকাণ্ড আরও আহত করেছে বাঙালির মানসিক আবহকে। এমনি ধারায় সর্বত্র ক্রমধাবমান অবক্ষয় যেন টুঁটি চেপে ধরতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে আমাদের নীতি, নৈতিকতা, মানবিকতা, সৌন্দর্যবোধসহ ইতিবাচক সবকিছুকে। দুঃখজনকভাবে কিছু দুর্বৃত্তের কারণে ১৪২২ এর প্রথম দিনটিও ছিল মসিলিপ্ত। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নববর্ষের উৎসব চলাকালে ন্যাক্কারজনক যৌন নিপীড়নের শিকার হন কয়েকজন নারী। এরপর বছর জুড়ে যেন চলেছে অবক্ষয়জনিত অমানবিক আচরণের এই ধারা। এমনি এক আবহে বাঙালি জাতি গত বুধবার বিদায় জানিয়েছে ১৪২২কে। আজ বৃস্পতিবার থেকে জাতি একটা নতুন দিনে, নবচেতনায় আশার হিমালয় বুকে বেঁধে শুরু করেছে ১৪২৩ সালের প্রথম দিনটিকে।
অপরদিকে, ১৪২৩ বঙ্গাব্দকে সারম্ভরে বরণের প্রস্তুতি গত কয়েকদিন ধরেই দৃশ্যমান ছিল বাংলাদেশজুড়ে। বুধবার চৈত্রসংক্রান্তির নানা আয়োজনে প্রকৃতিও যেন হয়ে উঠেছিল চরম বৈরি। পূর্ণতেজে দেদীপ্যমান সূর্য তার প্রচণ্ড দাবদাহে নাভিস্বাস তুলে দিয়েছিল সবার।
অন্যান্য দিনগুলোর মতো আজকের ১৪২৩ এর প্রথম দিনটটিও বাংলাদেশের মানুষ নতুনভাবে, আরও সমৃদ্ধভাবে বেঁচে থাকার লড়াইকে সামনে নিয়েই কাটিয়ে দেবে। তবে এবার সবাই সর্বান্তকরণে এই আশা করছে যেন সামনের দিনগুলো কাটে নিরাপত্তায়, দুধে-ভাতে বা মাছে-ভাতে না হলেও বাঙালির জীবন যেন কাটে হিংসা-দ্বেষের বিষবলয়মুক্ত হয়ে সম্প্রীতি আর ভালবাসার জয়গানে অবগাহন করে।
এমন আশাবদাই ব্যক্ত হয়েছে রাজধানীতে বৈশাখ উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায়। এবার সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান নিয়ে মূল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি পংক্তির মাধ্যমে- ‘অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে’।
বৃহস্পতিবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের কথায় সুর মিলিয়ে বলা যায়, “প্রতিবারই আমরা শুভ কামনা নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করি। এবছর আমাদের মূল ভাবনার জায়গাটা সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। যার ফলে এখন মায়ের হাতে সন্তান, সন্তানের হাতে মা খুন হচ্ছে। সেই সঙ্গে ধর্ম ব্যবসায়ীদের আস্ফালনসহ নানা অবক্ষয় চলছে।
আমরা এসব থেকে মুক্তি চাই, আলোর দিকে যেতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “অন্তরাত্মাকে বিকশিত করার মাধ্যমেই কেবল এসব সমস্যার সমাধান হতে পারে। তাই এবারের মূল প্রতিপাদ্যও ‘অন্তর মম বিকশিত করো অন্তরতর হে’।
ধারাবাহিক হত্যা-ধর্ষণ আর শিশুনিপীড়ন-হত্যার ঘিনঘিনে আবহকে মানবিকতার জাগরণের পরশে মুছে দেয়ার প্রত্যয়ে মা ও সন্তানের সম্পর্ককে প্রাধান্য নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয় রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।
আমাদের বর্ণিল লোকসংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ ও প্রতীককে সঙ্গী করে শোভাযাত্রাটি চারুকলার সামনে থেকে বের হয়। ব্যাপক আড়ম্ভর আর উৎসবমুখরতার মধ্য দিয়ে এটি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (সাবেক হোটেল রূপসী বাংলা) সামনে দিয়ে ঘুরে ফের চারুকলার সামনে গিয়ে শেষ হয়।
নিউজওয়ান২৪.কম/একে