মেসির স্বপ্নপূরণ, ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতল আর্জেন্টিনা
স্পোর্টস ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪
প্রকাশিত : ১২:০৬ এএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ সোমবার
বিশ্বকাপের ফাইনাল ফাইনালের মতোই হলো। শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে অবশেষে জয় আর্জেন্টিনার। নির্ধারিত সময়েরে ৭৯ মিনিটে ২ গোলে এগিয়ে থেকেও ২ মিনিটে ২ গোল খেয়ে বসে আর্জেন্টিনা। জোরা গোল করে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান কিলিয়ান এমবাপ্পে।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় ২-২ ব্যবধানে ড্র হওয়ার পর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়েও প্রথমে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন লিওনেল মেসি। এরপর মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে গোল করে হ্যাটট্রিক করার মধ্য দিয়ে ফ্রান্সকে ফের সমতায় (৩-৩) ফেরান এমবাপ্পে।
১২০ মিনিটের খেলা ৩-৩ ড্র হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলের ব্যবধানে জিতে তৃতীয় শিরোপাা নিশ্চিত করে লিওনেল মেসির নেতৃত্বাধীন আর্জেস্টিনা।
পুরো খেলা জুড়ে ছিল স্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা। এ ছিল এমন এক বিশ্বকাপ ফাইনাল যা এর আগের কোনো ফাইনালের সঙ্গেই তুলনীয় নয়। যে স্বাসপেন্সের পর সাসপেন্স আর টুইস্টের পরে টুইস্ট দিয়ে মোড়ানো হলিউড-বলিউডের কোনো থ্রিলার মুভি।
আধুনিক ফুটবলের অন্যতম পাওয়ার হাউস ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে দুই মিনিটে পরপর দুই গোল করে খেলায় ফেরান ফ্রান্সকে। এমবাপ্পের প্রথম গোলের আগেও ধারাভাষ্যকাররাও অনেকটা বলে ফেলছিলেন যে কাপ এবার আর্জেন্টিনায়ই যেতে চলেছে। আর তখনি হঠাৎ যেন বিনা মেঘে বজ্রের চমক।
এরপর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তবে এবারও ভিনগ্রহের ফুটবলার খেতাব পাওয়া ফুটবলের বরপুত্র লিওনেল মেসির গোল। ফের এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ১০৮ মিনিটে গোল করে দলকে দ্বিতীয় দফায় এগিয়ে নেন মেসি।
কিন্তু সেই অসাধারণ স্কিল আর পাওয়ারে ভরপুর এমবাপ্পে আবারও হতাশায় ডোবান মেসির আকাশি নীল-সাদা শিবিরকে। মাত্র ১০ মিনিট ব্যবধানে ডি বক্সের মধ্যে আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়ের হ্যান্ডবল হলে পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। যদিও হ্যান্ডবলটি ছিল অনিচ্ছাকৃত। তবে পেনাল্টি থেকে গোল করে হ্যাটট্রিকপূর্ণ করার মধ্য দিয়ে ফরাসিদের ফের সমতায় ফেরান এমবাপ্পে।
খেলায় প্রথম পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা যা থেকে গোল করেন মেসি। তবে ফ্রান্স তাদের প্রথম পেনাল্টি থেকে গোল করেই রিদম ফিরে পায় যেন। মাত্র ২ মিনিটেই এলোমেলো আর্জেন্টিনা। ২ গোল করে ৭৯ মিনিট এগিয়ে থেকেও দুই মিনিটে ২ গোল খেয়ে বসে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি থেকে গোল করার মাত্র ১ মিনিট ব্যবধান গোল করে ফ্রান্সকে (২-২) সমতায় ফেরান এমবাপ্পে।
৭৮ মিনিটে কুলো মুয়ানিকে ডিবক্সের ভেতর ফাউল করে বসেন ওতামেন্দি। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পট কিক থেকে বিশ্বকাপে নিজের ৬ষ্ঠ গোলটি করেন এমবাপ্পে।
এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও গোল করেন এমবাপ্পে। ৮১ মিনিটে দুর্দান্ত ভঙ্গিতে গোল করে দলকে ২-২ এ সমতায় ফেরান এই পিএসজি তারকা।
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে তৃতীয়বারের মতো শিরোপার লড়াইয়ে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স। দুই দলের রোমাঞ্চকর ফাইনালে প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় লিওনেল মেসির নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা।
লিওনেল মেসির পর ডি মারিয়ার গোল। এই দুই তারকার গোলে ফ্রান্সের বিপক্ষে ৩৬ মিনিটেই ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
পেনাল্টি থেকে গোল করে ২৩ মিনিটেই দলকে এগিয়ে নেন মেসি। আর ৩৬ মিনিটে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আনহেল ডি মারিয়া।
রোববার কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সুযোগ পান ডি মারিয়া। ইনজুরি থেকে ফিরে ডি মারিয়া প্রমাণ করলেন তিনি দলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। চোটের কারণে নকআউট পর্বে একটি ম্যাচও খেলতে পারেননি।
ফাইনালে সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেন ডি মারিয়া। ৩৬তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি তার করা গোলেও মেসির অবদান রয়েছে।
মাঝমাঠে মেসি ছোট্ট এক সুন্দর টোকায় পাস বাড়ান ডান দিকে, বল ধরে হুলিয়ান আলভারেস এগিয়ে গিয়ে সামনে বাড়ান মাক আলিস্তেরকে। তার পাস বক্সের বাঁ দিকে ফাঁকায় পেয়ে কোনাকুনি শট নেন ডি মারিয়া। ঝাঁপিয়ে পড়া ফ্রান্সের লরিসকে ফাঁকি দিয়ে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা।
খেলার ২৩ মিনিটে ডি মারিয়াকে ডি বক্সের মধ্যে ফ্রান্সের ফুটবলার উসমান দেম্বেল ফাউল করায় পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
সেই পেনাল্টি থেকে গোল করেন মেসি। চলতি আসরে এটি আর্জেন্টিনার অধিনায়কের ষষ্ঠ গোল। কিলিয়ান এমবাপেকে ছাড়িয়ে এই মুহূর্তে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন মেসি। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্ট এটি মেসির ১২তম গোল। বিশ্বকাপে তার চেয়ে বেশি গোল আছে কেবল চার জনের।
ফ্রান্স এনিয়ে চতুর্থবার বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলছে। ১৯৯৮ সালের পর ২০১৮ সালে শিরোপা জিতে নেয় ফরাসিরা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়ার পথে কিলিয়ান এমবাপ্পেরা।
অন্যদিকে আর্জেন্টিনা এনিয়ে ছয়বার বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলছে। ১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল লাতিন আমেরিকান দলটি। ১৯৩০, ১৯৯০ ও ২০১৪ সালে রানার্সআপ হয় আর্জেন্টিনা।
এরপর দীর্ঘদিন শিরোপা বঞ্চিত আর্জেন্টাইনরা ৩৬ বছরের শিরোপা খরা কাটালো এবার ফুটবল ইতিহাসের শীর্ষতম প্রতিভাদের একজন মেসির নেতৃত্বে। এই জয়ে আর্জেন্টিনা ছাড়াও বিশ্বজুড়ে আকাশি- নীল-সাদার ভক্তরা আনন্দে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। তবে এই আনন্দে আর্জেন্টিনার পরে দুনিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ম্যারাডোনা-মেসি ভক্তরা সবচেয়ে বেশি উল্লাস করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর-গ্রাম-গঞ্জ মিছিল-আতশবাজিতে সরব উৎসবমুখর হয়ে ওঠে গভীর রাতের পরিবেশ। সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বাস-উৎসব দেখা গেছে ঐতিহ্যবাহী পুরনো ঢাকায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়।
এমআর/একে