আজ আমাদের কোনো কিছুতেই বিজয় নেই কেন? কারণ...
অসম্পাদিত
নিউজওয়ান২৪
প্রকাশিত : ১২:১৩ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ শনিবার
প্রতীকী ছবি
একাত্তরে আপনার শত্রু ছিল সুনির্দিষ্ট। আপনি চিনতেন আপনার শত্রুকে। আপনি জানতেন লড়াইটা কার বিরুদ্ধে করতে হবে। আপনার লড়াই-সংগ্রাম-যুদ্ধ যাই বলেন না কেন, তা ছিল একমাত্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
লক্ষ্য যখন সুনির্দিষ্ট থাকে, তখন মরিয়া হয়ে লড়াই করা যায়। জয় পাওয়া সহজ হয়।
আজ আমাদের কোনো কিছুতেই বলার মতো বিজয় নেই কেন? কারণ আমাদের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট নয়। শত্রু সুনির্দিষ্ট নয়।
আজ আপনি হাজার রকমের শত্রু পরিবেষ্টিত। কার বিরুদ্ধে লড়বেন? ঘর থেকে বের হয়ে ফের ঘরে ফেরা পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক ধাপে ধাপে আপনাকে শত্রুর মোকাবিলা করতে হয়।
একাত্তরে আপনাকে লড়াই করতে হয়েছে শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। কারণ পাকিস্তান আপনাকে শোষণ করত। আজ আপনাকে শোষণ করে পাড়ার মুদি দোকান থেকে শুরু করে রাস্তার লোকাল বাসের হেলপার পর্যন্ত। গলির স্কুল থেকে বিশাল ক্যাম্পাসওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। মোড়ের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ঝাঁ চকচকে হাসপাতাল পর্যন্ত। তস্য গলির ভাতের হোটেল থেকে ফাইভ স্টার পর্যন্ত। আলো ঝলমলে করপোরেট চাকরি থেকে সরকারি চাকরি পর্যন্ত...।
বুকে হাত দিয়ে এমন কোনো সেক্টর দেখাতে পারবেন, যেখানে আপনাকে শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য, অন্যায়, অবিচারের শিকার হতে হয় না? ঠকতে হয় না?
আমাদের ক্রিয়েটিভি নেই কেন? উল্লেখ করার মতো কোনো অর্জন নেই কেন? আমাদের ছেলেমেয়েরা ধান্দাবাজ, বাটপাট, শঠ ও কপট হয়ে উঠল কেন? কখনো ভেবে দেখেছেন? ঘর থেকে বের হয়ে সারাটা দিন যাকে প্রতি পদে পদে লাড়াই করতে হয়, সে ক্রিয়েটিভ হবে কী করে? ভালো কিছু করার সঞ্জীবনী শক্তি তার থাকবে কী করে? সে তো অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ধান্দাবাজ হবেই।
আজ আপনার সামনে সুনির্দিষ্ট কেনো শত্রু নেই। আপনাকে লড়াই করতে হয় লুটেরা বণিকদের সঙ্গে, বেনিয়াদের সঙ্গে, চোর, বাটপার, জোচ্চোর, খুনি, লুচ্চা, ভন্ড ধার্মিকের সঙ্গে। আপনাকে লড়াই করতে হয় স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকারের জন্য, কথা বলার অধিকারের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, তিনবেলা ভাতের জন্য, মাথা গোঁজার একটু ঠাঁইয়ের জন্য, ন্যূনতম নাগরিক অধিকারের জন্য। আপনাকে লড়াই করতে হয় খোদ রাষ্ট্রের সঙ্গে। নাগরিককে যখন রাষ্ট্র কাঠামোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়, তখন সেই নাগরিকের চেয়ে অসহায় প্রাণি আর দ্বিতীয়টি হয় না।
আপনি আসলে কার বিরুদ্ধে লড়বেন? কতজনের বিরুদ্ধে লড়বেন?
আপনি তাই লড়াই করেন, কিন্তু বিজয়ী হতে পারেন না। প্রতি বছর বিজয় দিবস আসে, কিন্তু আপনার জীবনে আর ‘বিজয়’ আসে না।
- মারুফ ইসলাম
নিউজওয়ান২৪.কম/রাজ