NewsOne24

অজ্ঞাত কঙ্কাল রহস্য

বিদেশি ক্রাইম সিরিয়াল, সাবলেট ও পরকীয়া...

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিউজওয়ান২৪

প্রকাশিত : ১১:২২ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার

গ্রেফতার তিন অভিযুক্ত সাব্বির হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও সুরুজ আলী   ছবি: র‍্যাব মিডিয়া

গ্রেফতার তিন অভিযুক্ত সাব্বির হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও সুরুজ আলী ছবি: র‍্যাব মিডিয়া

দিন দিন বাড়ছে টিভিতে ক্রাইম সিরিয়াল দেখে ধূর্ত কৌশলের হত্যাকাণ্ড ও অপরাধ থেকে বাঁচার চেষ্টায় সাজানো কূটকৌশলের গা শিউড়ানো সব ঘটনা। 

এর আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের একাধিক রোমহর্ষক ঘটনার উদঘাটন করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

সর্বশেষ উদঘাটন করা ঘটনায় দেখা যায়, স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সন্দেহে সঙ্গীদের সহায়তায় এক ব্যক্তিকে হত্যার পর মরদেহ গুম করে রেখেছিল তারই বন্ধু। বিভিন্ন অপরাধমূলক সিরিয়াল দেখে অভিযুক্তরা ওই কায়দায় গুম করার চেষ্টা করে বলে জানা গেছে।

ড্রামে মিললো পচা-গলা লাশ
গত ২৮ আগস্ট দুপুরে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া এলাকায় একটি ৫তলা ভবনের ৩য় তলার ফ্ল্যাটের গোসলখানার পানির ড্রাম হতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশটি পচে কঙ্কাল হয়ে যাওয়ায় পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না। 

এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হয় যে অজ্ঞাত পরিচয় ওই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। 

চাঞ্চল্যকর ও প্রায় ক্লুলেস হত্যাকান্ড বিধায় র‌্যাব-১ তাৎক্ষনিকভাবে নিহত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত এবং হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে ছায়া তদন্ত শুরু করে। এই সূত্রে গোয়েন্দা নজরদারীও বৃদ্ধি করা হয়।

প্রথমে জানা যায় এক সন্দেহভাজনের কথা
পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর র‌্যাব-১ এ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে ঘটনাস্থলে সোর্স নিয়োগ করে। পরবর্তীতে সোর্সের মাধ্যমে বর্ণিত বাসায় সচরাচর যাতায়াতকারী একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম ও ঠিকানা জানতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাবের আভিযানিক দলটি নাটোর জেলার গুরুদাসপুরে অভিযান পরিচালনা করে। তারা ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজনদের একজন আনোয়ার হোসেন (২০), পিতা- চাঁন প্রমানিক, জেলা- নাটোর বলে নিশ্চিত হয়। এছাড়া আরো জানা যায়, একই গ্রামে আনোয়ারের প্রতিবেশী ও ঢাকা প্রবাসী ভিকটিম জয়নালের সঙ্গে গত ১৪ আগস্ট হতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না তার বাবা-মা। 

তিন খুনির সন্ধান
তদন্তে জানা যায় যে ভিকটিম জয়নাল তার গ্রামের প্রতিবেশী আব্দুস সুকুরের ছেলে সাব্বির হোসেনের সঙ্গে ঢাকার আশুলিয়ায় একই বাসায় সাবলেটে বসবাস করে আসছিল। 

এরই ধারাবাহিকতায় আজ (৩১ আগস্ট) র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল বর্ণিত হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহভাজন ১) সাব্বির হোসেন (২২), পিতা- আব্দুস সুকুর, জেলা- নাটোরকে লালমনিরহাট জেলা হতে আটক করে। অপর সন্দেহভাজন দুই সন্দেহভাজন আনোয়ার হোসেন (২০), পিতা- চাঁন প্রমানিক, জেলা- নাটোর এবং ৩) সুরুজ আলী (১৮), পিতা- রায়হান, জেলা- নাটোর এর অবস্থানও নিশ্চিত করে। একই দিন তাদেরকেও আটক করা হয় মানিকগঞ্জ জেলা হতে। 

সাবলেট ও পরকীয়া
ধৃত ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বর্ণিত হত্যাকান্ডের সঙ্গে তারা সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং কঙ্কালপ্রায় গলিত মৃতদেহটি জয়নালের বলে নিশ্চিত করে। 

ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, সাব্বির হোসেন (২২) এবং সাথী (১৭) পরস্পর স্বামী-স্ত্রী। সাব্বির আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টে চাকরির সুবাদে স্ত্রী সাথীকে নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার ইদ্রিস কাজীর ৫ম তলা বাসার ৩য় তলায় ২ রুমের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়ায় বসবাস করছিল। ভিকটিম জয়নাল (২০) এবং সাব্বির একই গ্রামের বাসিন্দা ও পরস্পর বন্ধু হওয়ার সূত্রে সাব্বিরের ভাড়া বাসায় গত মে মাস হতে সাবলেট হিসেবে বসবাস করতে থাকে। 
একই বাসায় বসবাসের সূত্রে সাব্বিরের স্ত্রীর সঙ্গে জয়নালের সু-সম্পর্ক তৈরি হয় যা সাব্বির বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক (পরকীয়া) হিসেবে সন্দেহ করতে থাকে। একপর্যায়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে গত জুন মাসে সাব্বির তার স্ত্রী সাথীকে শ্বশুর বাড়ি লালমনিরহাটে পাঠিয়ে দেয়। জয়নালও এরপর সেখান থেকে চলে আসে। 

হত্যা পরিকল্পনা : স্ত্রীকে পাঠানো হয় বাপের বাড়ি
এদিকে, স্ত্রীকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর সাব্বির জয়নালকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যা-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চাকরি দেওযার কথা বলে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে জয়নালকে পূনরায় তার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য সাব্বির তার গ্রামের অপর বন্ধু আনোয়ার এবং সুরুজকে ঢাকায় নিয়ে আসে। 

একপর্যায়ে গত ১৪ আগস্ট ২০২১ তারিখ রাত ১১টায় ভিকটিম জয়নালকে আশুলিয়ার ওই বাসায় আনোয়ার এবং সুরুজের সহায়তায় গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য একটি পানিভর্তি ড্রামে ভিকটিমের মৃতদেহ রেখে বাসায় তালা দিয়ে তিন পালিয়ে যায় তিন বন্ধু। 

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা টিভি এবং মোবাইল ফোনে অপরাধ সংক্রান্ত বিদেশি সিরিয়াল দেখে এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে এবং গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে নিজেদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ করে রাখে। 

র‌্যাব-১ জানিয়েছে, আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। 
নিউজওয়ান২৪,কম/এসএ