এটিএম শামসুজ্জামান আর নেই
বিনোদন প্রতিবেদক
নিউজওয়ান২৪
প্রকাশিত : ১১:২৫ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শনিবার
এটিএম শামসুজ্জামান
একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
হাসপাতাল থেকে শুক্রবার বাসায় ফিরে শনিবার দিবাগত রাতে ঘুমের মধ্যে মারা যান তিনি। বাদ আসর রাজধানীর পুরান ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিনেতার মেয়ে কোয়েল আহমেদ।
সূত্রাপুর জামে মসজিদে এই কিংবদন্তির দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারে তার মরদেহ রাখা হয়। প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয় বাদ জোহর নারিন্দার পীর সাহেব বাড়ি মসজিদে।
এর আগে এটিএম শামসুজ্জামানের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নারিন্দার পীর সাহেব তার গোসলের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এছাড়াও এফডিসি বা অন্য কোথাও মরদেহ অন্য কোথাও না নিতে জীবিত অবস্থায় বলে গেছেন তিনি।
এটিএম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিল আরেক অভিনেতা প্রবীর মিত্র। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে। তারপর জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। তার পিতা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মাতা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।
হাসির ছলে কূটচালে মানুষের ক্ষতি করতে সিনেমার পর্দায় এটিএমের জুড়ি মেলা ভার। তার চরিত্রগুলো চিত্রনাট্যে সেভাবেই লেখা হতো। দীর্ঘ একটা সময় তিনি খল চরিত্রে সিনেমার নির্মাতাদের কাছে সেরা ভরসা হিসেবে ছিলেন।
এরপর তিনি ঝুঁকে পড়েন কৌতুক প্রধান চরিত্রের অভিনয়ে। বেশরিভাগ সময়ই তাকে দেখা যেতে লাগলো হাস্যরসের সংলাপে। ধীরে ধীরে তিনি কমেডি চরিত্রে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে গেলেন। সিনেমার পাশাপাশি টিভি নাটক ও টেলিফিল্মেও এটিএম শামসুজ্জামান নতুন করে সারাদেশের মানুষকে বিনোদিত করতে শুরু করেন। চলচ্চিত্র ‘টক জাল মিষ্টি’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘জামাই শ্বশুর’, ‘মোল্লাবাড়ির বউ’, নাটক ‘পত্র মিতালী’সহ অনেক কাজ রয়েছে চলচ্চিত্রে।
১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন।
১৯৮৭ সালে কাজী হায়াত পরিচালিত দায়ী কে? চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান বরেণ্য এ অভিনেতা।
শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয় কৌতুক অভিনেতা হিসেবে। জলছবি, যাদুর বাঁশি, রামের সুমতি, ম্যাডাম ফুলি, চুড়িওয়ালা, মন বসে না পড়ার টেবিলে চলচ্চিত্রে তাকে কৌতুক চরিত্রে দেখা যায়।
তার অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় আমজাদ হোসেনের নয়নমণি চলচ্চিত্রটি। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি আলোচনায় আসেন। এর আগে নারায়ণ ঘোষ মিতার লাঠিয়াল চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়াও খল চরিত্রে তার কিছু উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল- অশিক্ষিত, গোলাপী এখন ট্রেনে, পদ্মা মেঘনা যমুনা, স্বপ্নের নায়ক।
এছাড়াও বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনয় করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অনন্ত প্রেম, দোলনা, অচেনা, মোল্লা বাড়ির বউ, হাজার বছর ধরে, চোরাবালি।
১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর বিষকন্যা চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তদের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর ২০০৯ সালে প্রথম পরিচালনা করেন শাবনুর-রিয়াজ জুটির এবাদত নামের ছবিটি।
অভিনয়-নির্মাতার পাশাপাশি একজন লেখক হিসেবেও এটিএম শামসুজ্জামান নন্দিত। কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান গল্প, কবিতা লেখারও চর্চা করেছেন নিভৃতে।
অভিনয় জীবনের শুরুতে ষাটের দশকে টিভি নাটকে অংশগ্রহণ ছিল তার। তার উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকসমূহ হলো- রঙের মানুষ, ভবের হাট, ঘর কুটুম, বউ চুরি, নোয়াশাল, শতবর্ষে দাদাজান।
এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে-মলুয়া, বড় বউ, অবুঝ মন, ওরা ১১ জন, শ্লোগান, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, সংগ্রাম, ভুল যখন ভাঙ্গলো, চোখের জলে, লাঠিয়াল, অভাগী, নয়নমনি, যাদুর বাঁশি, গোলাপী এখন ট্রেনে, অশিক্ষিত, সূর্য দীঘল বাড়ী, ছুটির ঘণ্টা, লাল কাজল, পুরস্কার, প্রিন্সেস টিনা খান, রামের সুমতি, ঢাকা ৮৬, দায়ী কে?, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, দোলনা, পদ্মা মেঘনা যমুনা, অজান্তে, স্বপ্নের নায়ক, তোমার জন্য পাগল, ম্যাডাম ফুলি, চুড়িওয়ালা, শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ, জামাই শ্বশুর, আধিয়ার, শাস্তি, মোল্লা বাড়ির বউ, হাজার বছর ধরে, আমার স্বপ্ন তুমি, দাদীমা, আয়না, ডাক্তার বাড়ী, চাঁদের মতো বউ, মন বসেনা পড়ার টেবিলে, এবাদাত, বিশ্বাসসহ অসংখ্য ছবি।