চলচ্চিত্রাঙ্গনে বেড়েই চলেছে উত্তাপ, সমাধানের চেষ্টা
শোবিজ ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ০২:৩১ এএম, ১২ জুলাই ২০১৭ বুধবার | আপডেট: ০২:৩৪ এএম, ১২ জুলাই ২০১৭ বুধবার
সংকট। এরপর সবাই বসে সমাধান। আবারো সংকট। দফায় দফায় বৈঠক। সমাধানের চেষ্টা। এরপর নানা কথাবার্তা দিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি। এমন ঘটনা এখন প্রায়ই ঘটছে দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে। দিনের পর দিন নানান ঘটনায় উত্তাপ বেড়েই চলেছে এই মাধ্যমটিতে। বিএফডিসিজুড়ে যেখানে শুটিং হওয়ার কথা সেখানে ফ্লোরগুলো খালি পড়ে আছে। নেই কোনো উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের শুটিং। হাতে গোনা কয়েকটি ছবির শুটিং হচ্ছে, সেটাও বিএফডিসির বাইরে।
গত কয়েকমাসে বেশ কয়েকটি ঘটনা নানা নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে দেশের সিনেমার গুণী অভিনয়শিল্পী নায়করাজ রাজ্জাককে কেন্দ্র করে বিএফডিসির পরিচালক সমিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনা, দুই পরিচালকের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের গায়ে হাত তোলার ঘটনা, নায়ক-পরিচালক বাপ্পারাজের বাসায় পরিচালক সমিতি কর্তৃক সদস্যপদ বাতিলের চিঠি প্রেরণ, একজন প্রযোজক কর্তৃক নায়িকা মাহির বাসায় উকিল নোটিশ পাঠানো, শাকিবের মন্তব্য নিয়ে চিত্রনায়ক ফারুকের অভিযোগ, এরপর শাকিবকে নিষিদ্ধ করা, মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক, সেন্সর বোর্ডের সদস্য ও প্রদর্শক সমিতির বর্তমান সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের উপর হামলা, মৌসুমীকে ‘বয়স্ক’ অভিনেত্রী বলে মিশার সম্বোধন এবং ওমন সানীর ফেসবুকে লাইভে জবাবসহ নানান ঘটনায় চলচ্চিত্রাঙ্গনে উত্তাপ বেড়েই চলছে। গতকালও ঘটেছে একটি ঘটনা।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে- অভিনেতা রিয়াজ, মিশা সওদাগর অভিনীত ও প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু প্রযোজিত ছবি সিনেমা হলে দেখানো হবে না। যেখানে শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা সেখানে বেড়েই চলেছে এসব ঘটনা। দিন গেলেই যেন নতুন অঘটনের সংবাদ।
এসব প্রসঙ্গে চলচ্চিত্রের সিনিয়র অভিনেত্রী সুচন্দা মানবজমিনকে বলেন, এসব ঘটনা শুনে খুব মন খারাপ হয়েছে। আমিও একজন শিল্পী ছিলাম, আমারও একটা সময় ছিল যেখানে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। আমরা অন্তর দিয়ে পরিবারের মানুষের মতো করে কাজ করেছি। কখনও কোনো পত্রিকায় শিল্পীদের মাঝে ঝগড়া বা বাজে কোনো খবর আসেনি। এখন যে সমস্ত কথা শুনছি, সংবাদপত্রে খবর দেখছি তাতে খুব কষ্ট হয়। একজন শিল্পী হিসেবে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে এসব কথা বলা উচিত না।
একজন সুস্থ মানুষ বা শিল্পী হিসেবে কোনোভাবেই এটা কারো কাম্য না। যারা চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত আছেন বা ছিলেন তাদের কাছ থেকে কোনো শিল্পী বা পরিচালককে নিয়ে কটু কথা বলা বা সম্মান না দিয়ে কথা বলা কোনোভাবেই উচিত না। তিনি আরো বলেন, চলচ্চিত্রের অবস্থা বর্তমানে তো এমনিতেই খুবই শোচনীয়। এরপর আবার যদি আমরা নিজেরা নিজেদের পরিবারের মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলি তাহলে পাঠক বা দেশের বাইরে যারা থাকেন তারা ভাববেন যে চলচ্চিত্রের মানুষরা বুঝি এই রকম হয়। তারা সম্মান দিতে জানেন না। কিন্তু পাশের দেশে দেখুন মুম্বই বা কলকাতায় একজন শিল্পীর সঙ্গে আরেকজন শিল্পী বা প্রযোজকদের মিল অনেক। কিছু ঘটলেও মিডিয়াকে জানতে দেয় না তারা। যত ঘটনা ঘটুক সেগুলো ভেতরে থাকা উচিত। বাইরের লোক জানবে কেন? বর্তমানে যা শুনছি তা ইন্ডাস্ট্রির জন্য সত্যিই দুঃখজনক এবং লজ্জাকর ব্যাপার।
গুণী নির্মাতা কাজী হায়াৎ এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের মধ্যে আসলে কিছুলোকের মানসিকভাবে অবক্ষয় হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়েছে। না হলে এসব কথা কেন বলছে আমি বুঝি না। একজন শিল্পীকে যদি আমরাই সম্মান দিতে না পারি তাহলে পাবলিক কিভাবে দেবে! সমস্ত সৃজনশীল কর্মে ঈর্ষা থাকে, নিজেকে বড় মনে করার প্রবণতাও থাকে, পরশ্রীকাতরতাও থাকে। কিন্তু সেটা প্রতিহিংসা হয়ে গেলে অনেক খারাপ হয়। সেই প্রতিহিংসা অনেক সময় প্রতিঘাতে রূপ নেয়। সেটা আরো খারাপ হয়।
আমাদের এখন ঈর্ষাটা পরশ্রীকাতরতা ছাড়িয়ে প্রতিহিংসা এবং শেষে প্রতিঘাতে পরিণত হয়েছে। যেটা অনেক খারাপ আমাদের চলচ্চিত্রাঙ্গনের জন্য। প্রতিহিংসার কারণে সবকিছু এখন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। এক কথায় বলতে হয়, চলচ্চিত্রে এখন দারুণ অস্থিরতা বিরাজ করছে।
দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র প্রযোজনার সঙ্গে থাকা সিনিয়র প্রযোজক ও রাজধানীর সনি সিনেমা হলের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী সময় থেকে আন্দোলন, সিনেমা হলের সামনে হইচইসহ অনেক ঘটনা ঘটেছে। তবে আমরা একই পরিবারের মানুষ, এখানে ঝগড়া হতেই পারে। এসব বাড়তে না দিয়ে নিজেরা বসে সমস্যার সমাধান করা উচিত। আর আমার বিশ্বাস, অচিরেই এসবের মীমাংসা হবে।
নিউজওয়ান২৪.কম