যে সব কারণে একজন মানুষ আত্মহত্যা করেন ও তা ঠেকানোর কৌশল
লাইফস্টাইল ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ০১:৪৬ এএম, ১২ জুলাই ২০১৭ বুধবার
ফাইল ফটো
আত্মহত্যার প্রবণতা বা চেষ্টা একটি Psychiatric Emergency. যারা আত্মহত্যার কথা বলে তাদের একটি বড় অংশ পরে কোনো না কোনো কারণে ঠিকই আত্মহত্যাচেষ্টায় লিপ্ত হয়। এই সুপ্ত মনের ইচ্ছাকে ও কার্যকরের প্রচেষ্টাকে মোটেও সহজভাবে নেওয়া যাবে না।
আত্মহত্যার পেছনে লুকিয়ে থাকা ৯৫% কারণ হয়ে থাকে মানসিক ও বাকী ৫% কারণ থাকে শারীরিক কোনো আঘাত বা ভিন্ন কোনো ঘটনা।
যেসব মানসিক কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয় তার মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:
* বিষণ্ণতা
* স্কিজোফ্রেনিয়া
* অস্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব ( Borderline Personality Disorder)
* নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন
এছাড়াও যারা দীর্ঘদিন যাবত কষ্ট ও রোগে-শোকে ভুগছেন তারা জীবন থেকে মুক্তি পাবার আশায় আত্মহত্যার মতো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। কিছু কষ্টকর রোগের মাঝে রয়েছে:
* Chronic pain
* Parkinsonism
* Cancer
* Paralysis etc.
সঠিক সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত ও জনসচেতনতার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসাই পারে আত্মহত্যার প্রবণতাকে রোধ করতে।
আসলে ঠিক কাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি?
পরিসংখ্যান কী বলছে?
আসুন জানি সেসব কারণ যেগুলো শ্রেণি ভেদে আত্মহত্যার ঘটনাকে প্রভাবিত করে:
* বয়স: যত বয়স বাড়ে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে।
* জেন্ডার: যদিও আত্মহত্যা চেষ্টা নারীরা বেশি করে থাকে কিন্তু ‘সাফল্যের’ দিক দিয়ে পুরুষরা এগিয়ে
* ধর্ম: ধর্মে বিশ্বাসীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা কম দেখা যায়। এছাড়া বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক কম দেখা যায়।
* পেশা: কৃষক, পশু ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী ও ফিজিশিয়ানদের (চিকিৎসক) মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
* বেকারত্ব: বেকারদের মাঝে কর্মজীবীদের চেয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি কাজ করে
* বিবাহ: বিবাহিত ব্যক্তিদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা কম থাকে কারণ হিসেবে বলা যায় সন্তানের প্রতি পিছু টান ও দায়িত্ব বোধ।
* পূর্বে আত্মহননের চেষ্টা: আগে আত্মহত্যার ব্যর্থ চেষ্টাকারীদের আত্মহত্যার ঝুঁকি অনেক বেশি।
* যুদ্ধ: যুদ্ধের সময় আত্মহত্যার হার কমে যায়।
* সোশ্যাল ফ্র্যাগমেন্টেশন (বিচ্ছেদ, বিভাহন): ডিভোর্স, সেপারেশন, ব্রেকআপ আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ায়।
* মিডিয়া: অনেক সময় নিজের অজান্তেই মন মিডিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়। মাত্রাতিরিক্ত ভায়োলেন্স মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে যা আসতে পারে কার্টুন, নাটক প্রভৃতি দেখেও।
আত্মহত্যা রোধ করতে কী করবো?
কেউ যদি নিজের জীবন হারাতেই চায়, তবে তাকে বাঁধা দেওয়া বা আটকে রাখা আসলে কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। আপনি চাইলেও কারো ওপর সর্বক্ষণ নজর রাখতে পারবেন না। তবে আগে থেকেই যদি আত্মহত্যা করার মানসিকতা সনাক্ত করা সম্ভব হয়, তবে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সেখান থেকে কাউকে জীবনের পথে, জীবন ধারণের ইতিবাচক মানসিকতায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
প্রতিরোধ করুন সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট
যৌন উৎপীড়ন ও কমবয়সী স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা করার প্রবণতা বর্তমানে আমাদের দেশে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইভটিজিং নামক অপরাধ যেন দিন কে দিন বেড়েই চলেছে।
গ্রামে সালিশ নামের অবিচারও সাধারণ মানুষের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতাকে উসকে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান তথা বিচার বিভাগের আরও নিরপেক্ষ, সৎ ও কঠোর হওয়া জরুরি। প্রভাবশালীদের অন্যায় প্রভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে, নীতি বহির্ভূত বিচার একমাত্র প্রতিবাদের মাধ্যমেই রোধ করা সম্ভব।
বিষণ্ণতা রোধে কাউন্সেলিং
তীব্র বিষণ্ণতায় আক্রান্ত মা অনেক সময় নিজের মানসিক স্থিতি হারিয়ে তার সন্তানদের হত্যা করে অথবা নিজেই আত্মহননের পথ বেছে নেয়। তার মাঝে এই ধারণার সৃষ্টি হয় যে মায়ের অবর্তমানে সন্তানরা নির্যাতিত হবে। তাই আমরা প্রায়ই মিডিয়ায় মা ও শিশু হননের দুঃখজনক খবর শুনতে পাই।
গণমাধ্যম
আত্মহত্যা রোধে ও জনসচেতনা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের প্রচার একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ডেল্টা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মিরপুর ঢাকা, প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
নিউজওয়ান২৪.কম