জানা জরুরি, জ্বর হলেই করোনা নয় (পর্ব-১)
ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন
নিউজওয়ান২৪
প্রকাশিত : ০৩:০১ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২০ শুক্রবার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক কোভিড-১৯ এর বর্তমান অবস্থাকে ‘প্যানডেমিক’ ঘোষণা করেছেন
নভেল করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ ভাইরাস নিয়ে কেন এত ভীতি!
দুদিন আগে রূপা বাংলাদেশ থেকে ফোন করেছিল। সকাল থেকে ওর জ্বর, কাশি এবং গলাব্যথা। সে খুব ভয় পেয়েছে, পাছে নভেল করোনা-১৯ ভাইরাসে পেয়েছে বুঝি। সে ভয়ে অস্থির, তার কোভিড-১৯ হয়নি তো?
খুবই ভয় পাওয়া গলায় আমাকে জানালো, শুধু জ্বর নয় তার খুব অস্বস্তিও হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কবে তার জ্বর হয়েছিল অথচ অস্বস্তি লাগেনি?
আমি দেশের বাইরে তার সাম্প্রতিক ভ্রমণের ইতিহাস জানতে চাইলাম, জানামতে কোনো কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে কিংবা অন্য কোনো জ্বরের রোগীর সংস্পর্শে এসেছে কিনা জানতে চাইলাম। সবগুলোর উত্তরই না হওয়ায় পরামর্শ দিলাম, আপাতত অফিস ও অন্যান্য কাজে বাইরে যাওয়া বাদ দিয়ে বাসায় থাকো। আর শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক কোনো সমস্যা হলে ডাক্তারের কাছে যেও।
আজ সকালে রূপা ফোন করে জানিয়েছে, ওর জ্বর কমে গেছে। সম্প্রতি আবিষ্কৃত নভেল করোনা-১৯ ভাইরাস নিয়ে সারা পৃথিবী তোলপাড়। বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক কোভিড-১৯ এর বর্তমান অবস্থাকে ‘প্যানডেমিক’ ঘোষণা করেছেন। কোনো রোগ মহামারী আকারে যখন একাধিক দেশে হয়, বিশেষ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একাধিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাকে ‘প্যানডেমিক’ বলে।
কেন করোনা নিয়ে এই ভীতি?
নভেল করোনা-১৯ ভাইরাস নিয়ে সারা পৃথিবীতে জনমনে ব্যাপক ভীতি দেখা দিয়েছে। এই ভীতির কারণ কী? এর আগে একই রকমের সার্স, মার্স রোগ দেখা দিলেও তা করোনার মতো এত ব্যাপ্তি পায়নি। চীন থেকে এই অসুখে যেভাবে আমরা মৃত্যুর খবর পাচ্ছিলাম, তাতে শুরুতেই আতঙ্কিত বোধ করেছি। তারপর এই অসুখ ছড়িয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। তাছাড়া, এবারের ভীতির কারণসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো, এই ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে সংস্পর্শে আসা মানুষের শরীরে খুব দ্রুত ছড়ায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা যাকে বলি ‘ব্যাসিক রিপ্রোডাকশন রেশিও (বিআরআর), যা এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে অনেক বেশি।
দ্বিতীয়ত, কারো শরীরে নভেল করোনা ভাইরাস-১৯ প্রবেশ করলে কী হয়? এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর ওই ব্যক্তি কতটা আক্রান্ত হবেন, তা প্রধানত নির্ভর করে তার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর। একজন সুস্থ-সবল মানুষের দেহে এই ভাইরাস প্রবেশ করলে দেখা যায় তার শরীরে সামান্য জ্বর বা কাশি হতে পারে, যা অনেকটা ঠাণ্ডা জ্বরের মতো।
সমস্যা প্রকট হয় যখন আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়। যেমন কারো যদি অ্যাজমা বা হাপানি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকে, বা ক্যান্সারাক্রান্ত রোগী যাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস নিউমোনিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের নানান জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক বয়স্ক মানুষদের সাধারণত এসব অসুখের কারণে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। ফলে নভেল করোনা ভাইরাস এদের শরীরে ঢুকে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করতে পারে, এতে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যেসব দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি, সেসব দেশে তাই কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের মৃত্যুহার বেশি হবে।
তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শতকরা আশিভাগ লোকই কোনো চিকিৎসা ছাড়াই বা সামান্য চিকিৎসায়ই ভালো হয়ে যায়। বাকি ১৫-১৮ শতাংশ লোক হাসপাতালে বা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠে। আক্রান্তদের প্রায় চার-পাঁচ শতাংশ রোগীর অবস্থা বেশ জটিল হয়, যাদের অনেকের চিকিৎসার জন্য আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে। কেবলমাত্র দুই শতাংশের মতো মানুষে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
তবে নভেল করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যে জানা যাচ্ছে যে, এই ভাইরাস বারবার তার জ্বিন বদলাচ্ছে এবং এর ফলে ক্রমাগত ভাইরাসটি আরো ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। বারবার পরিবর্তনের ফলে নোভেল করোনা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ভ্যাক্সিন তৈরি করাও কঠিন হয়ে পড়ছে। চলবে...
লেখক: প্রফেসর, পাবলিক হেলথ বিভাগ, নর্দান ইউনিভার্সিটি ও চেয়ারম্যান, ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেইফটি অ্যান্ড রাইটস
নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড