হিজাবের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ (পর্ব-২)
ধর্ম ডেস্ক
নিউজওয়ান২৪
প্রকাশিত : ০৯:০০ এএম, ২৩ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার
ফাইল ফটো
বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের গবেষণায় হিজাব করার যৌক্তিকতা ও সুফল সহজেই প্রমাণিত হয়। তা নিম্মে তুলে ধরা হলো-
আরো পড়ুন>>>হিজাবের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ (পর্ব-১)
১ম পর্বের পর থেকে...
পদার্থ বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি: মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمِن كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
‘আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে শিক্ষা গ্রহণ কর।’ (সূরা: সূরা আয-যারিয়াত: ৪৯)।
আল্লাহর ঘোষণা মোতাবেক যেহেতু সবকিছুতেই জোড়া আছে তাই আমরা বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও দেখতে পাই পজেটিভ ওনেগেটিভ। আর তা একত্রে না হলে বিদ্যুত উৎপন্ন হয় না। যে কোনো পদার্থের পরমাণু মূলত পজেটিভ প্রোটন ও নেগেটিভ ইলেকট্রন এর সমষ্টি। এরা পরস্পরের প্রতি আকর্ষিত হয়, মানুষও তাই। স্বাভাবিকভাবে নর ও নারী (যা পজেটিভ ও নেগেটিভ) পরস্পর দর্শনে যৌন আকর্ষণ সৃষ্টি হয় না-এ কথা মানুষ অস্বীকার করলেও পদার্থ বিজ্ঞান তা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। (বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে পর্দা পৃষ্টা)।
আমরা সাধারণত: মাইকে কথা বলার সময় দেখি মেশিন থেকে দু‘টি তার এসে মাউথ স্পিচের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, ওই দু‘টি তারের গায়ে রাবারের পর্দা জড়ানো রয়েছে। যদি পথিমধ্যে দু‘টি তারের পর্দা ছিড়ে যায় কিংবা যদি রাবারের পর্দা ফেলে দিয়ে দু‘টিকে একত্র করে দেয়া হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে বাল্ব কেটে যায়। মাইক নষ্ট হয়ে যায়, মাইকের মূল উদ্দেশ্য ব্যবহৃত হয়। (পর্দা কী এবং কেন- আহলে লাইব্রেরি ডেস্ক, পৃষ্ঠা-১)।
সুতরাং মানুষের মধ্যেও সাধারণত দেখা যায় পর্দা বা হিজাব না করার কারণে নিয়ন্ত্রণহীন দৃষ্টির কারণে মনে জাগে নানান কুপ্রবৃত্তি যা স্বাভাবিক জীবন শৃঙ্খলায় অনভিপ্রেত। একমাত্র পর্দা প্রথার মাধ্যমেই যৌন-আকর্ষণ মূলক দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
চোখে আছে ১৩০ মিলিয়ন আলো গ্রাহক (Light receptor) কোষ সদৃশ তার এগুলো জুড়ে দেয়া আছে ব্রেনে। চোখ কোনো আকর্ষণীয় বস্তু দেখার সঙ্গে সঙ্গে ঘন্টায় ৭০ মাইল পৌছে দেয় ব্রেনে। (যুক্তির নিরীখে স্রষ্টার অস্তিত্ব, পৃষ্ঠা-৯৭)।
ব্রেনে কোনো কোনো কেমিক্যাল রিয়্যাকশন গটতে সময় লাগে ১ সেকেন্ডে দশ লাখ ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম সময়। (বিশ্ময়কর মানবযন্ত্র- দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ২৭/০৯/২০১০)।
ফটোগ্রাফার্সগণ ছবি উঠানোর জন্য কনভেক্স লেন্স (Convex Lens) এর সাহায্যে প্রতিবিম্বের সৃষ্টি করে নেগেটিভ ছবির আবির্ভাব ঘটান। এরপর তা বিশেষ পদ্ধতিতে পজেটিভ ছবির রুপ নেয়। মানুষের চোখেও রয়েছে কনভেক্স লেন্স। কোনো ছবি বিশেষ করে কোনো আকর্ষণীয় বস্তুর ছবি চোখের এই কনভেক্স লেন্সর ওপর পতিত হলে ক্যামেরার ফিল্মের ন্যায় সৃষ্টি করে নেগেটিভ ছবির । ফলে এই আকর্ষণীয় বস্তুর ছবিটা দীর্ঘদিন বিরাজমান থাকে মানব -অন্তরে,যার পরিণাম হয় অনেক সময় অনাকাঙ্খিত,অপ্রত্যাশিত। (বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে পর্দা, পৃষ্ঠা)।
জীব-বিজ্ঞানভিক্তি যুক্তি: ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্কারভাবে বলা যায়-নারীরা পুরুষদের চেয়ে কোনো অংশেই অসমান বা সামান্য নন। তবে তারা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে একটু ভিন্ন প্রকৃতির। মেয়েরা যা পারে তা পুরুষেরা এত সহজে পারে না। আবার পুরুষদের কাজও মেয়েদের জন্য দুরূহ। নারীদের এমন বহু কাজ আছে যা পুরুষরা করতে ভয় পেলেও তারা হাসতে হাসতে অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের সঙ্গে করে ফেলতে পারেন। তবে দেহের বিচারেই নারীরা একটু দুর্বল। নারীদের দেহ-সংগঠন এমন পুরুষ সম্মত আর শক্ত না হলে নারী তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক পাতাতে পারে না। কিন্তু উত্তেজিত পুরুষ যে কোনো সময় নারীকে তার শিকারে পরিণত করতে পারে। পক্ষান্তরে নারীর তুলনায় পুরুষের শারীরিক গঠন কাঠামো শক্তিশালি।
জীব-বিজ্ঞান বলছে-
১. পুরুষের দৈহিক গড় ওজন ৪৭ কেজি। পক্ষান্তরে নারীদের গড় ওজন সাধারণত ৪২.৫ কেজির ওপরে নয়।
২. পুরুষের দেহে মাংসপেশী ৪১.৫%। নারীর দেহে মাংসপেশী ৩৫%।
৩. পুরুষের দেহে হাড়ের ওজন সাধারণত ৭ কেজি। নারীর দেহে হাড়ের ওজন সাধারণত সোয়া পাঁচ কেজি।
৪. রক্তের লোহিত রক্তকণিকা তুলনামূলকভাবে নারীর চেয়ে পুরুষের দেহে বেশি। (বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে, পর্দা পৃষ্টা-৯-১০)।
৫. পুরুষের হৃৎপিন্ডের ওজন নারীর হৃৎপিন্ডের ওজনের চেয়ে ৬০গ্রাম বেশি।
৬. সাধারণতভাবে পুরুষদের মস্তিষ্কের ওজন নারীদের তুলনায় ১০০ গ্রাম এবং মস্তিষ্কের কোষকলার সংখ্যা ৪% বেশি। অধিক মাংসবহুল শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই মস্তিষ্কের প্রয়োজন।
৭. ‘ইস্টোজেন’ হরমোনের প্রভাবে নারীর শরীর অনেকটাই নমনীয় হয়ে থাকে। নারীদের মধ্যে ‘টেস্টোস্টেরন’ হরমোনের প্রয়োগ তাদের আবেগ ও অনুভূতিকে অনেকটাই প্রশমিত করে তোলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। (পুরুষ বনাম নারী মস্তিস্ক-দৈনিক যুগান্তর ২৮/০৯/১৩ইং)।
৮. মাতৃগর্ভে ছেলেশিশু আর মেয়েশিশু একই মাত্রায় বৃদ্ধি পায় না। ছেলেশিশু গড়পড়তায় মেয়ে শিশুর চেয়ে ওজনে ভারী হতে দেখা যায়।
৯. জন্মের পর মেয়েদের দৈহিক বৃদ্ধির হার ছেলেদের তুলনায় আগেই থেমে যায়, যেমন মেয়েরা ১৮ বছর পর্যন্ত উচ্চতায় বাড়তে থাকে কিন্তু এরপর আর বাড়তে থাকে না। পক্ষান্তরে অধিকাংশ ছেলেই এই বয়সের পরও উচ্চতায় বেড়ে উঠতে থাকে। সব সমাজেই ছেলেদের উচ্চতা মেয়েদের উচ্চতার থেকে গড়পড়তায় বেশি হতে দেখা যায়।
১০. একজন ছেলে যত জোরে ঘুষি মারতে পারে, একজন মেয়ে তত জোরে ঘুষি মারতে পারে না। (নর-নারীর সমতা ও ইসলাম-দৈনিক নয়া দিগন্ত ২০০০৮ইং)।
এসব কারণে নারীরা দেহের বিচারেই একটু দুর্বল। ইংরেজী ভাষায় শ্রেষ্ঠ কবি willam Shakespere তার Hamlet: নাটকে নারী সম্পর্কে উক্তি করেছেন এভাবে, `Frailty they
name is woman' অর্থাৎ দুর্বলতার নামই হচ্ছে নারী। (বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে পর্দা, পৃষ্টা-১০)।
ইসলাম তাই পুরুষকে নির্দেশ দিয়েছে, ভালবাসা দিয়ে, শক্তি দিয়ে নারীর দুর্বল অস্তিত্বকে রক্ষা করতে। তাদের দেহটাই যেহেতু দুর্বল ও আকর্ষণীয় করে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেহেতু তাদের আপাদমস্তক পর্দার স্থান। চলবে...
নিউজওয়ান২৪.কম/আরাফ