মুফতি হান্নানসহ শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করতে সক্রিয় হচ্ছে হুজি!
স্টাফ রিপোর্টার
নিউজওয়ান২৪.কম
প্রকাশিত : ১১:৫০ পিএম, ৪ মার্চ ২০১৬ শুক্রবার | আপডেট: ১১:৫২ পিএম, ৪ মার্চ ২০১৬ শুক্রবার

হান্নানসহ গ্রেফতার শীর্ষ জঙ্গি নেতারা -ফাইল ছবি
ঢাকা: শীর্ষ নেতাদের কারাগার থেকে মুক্ত করতেই দেশজুড়ে সক্রিয় হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) সদস্যরা।
সম্প্রতি রাজধানীর পুরনো ঢাকা ও উত্তরা থেকে গ্রেফতার হওয়া হুজি সদস্যদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই জানতে পেরেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিউজওয়ান২৪.কমকে এসব তথ্য জানান।
গোয়েন্দা ও অপরাধতথ্য বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) মাহমুদা আফরোজ লাকী নিউজওয়ান২৪.কমকে বলেন, “গ্রেফতার ব্যক্তিদের মূল টার্গেট ছিলো হুজির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কারাগার থেকে মুক্ত করা। আর এর জন্য তারা নিজেদের উপার্যনের পুরো টাকাই খরচ করতো।”
এসি লাকি বলেন, “এছাড়াও কুয়েত ও সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশে অবস্থানরত কিছু প্রবাসী বাংলাদেশিও এই কাজে অর্থায়ন করতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।”
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হুজির শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নান ও জাহাঙ্গীর আলমকে কারাগার থেকে বের করতে জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যরা দেশজুড়ে সক্রিয় হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর কোতোয়ালী থানা এলাকার জিন্দাবাহারের সিরাজ-উদ-দৌলা পার্ক ও উত্তরা এলাকায় গোপন বৈঠকে উপস্থিত হন হুজির ৬ সদস্য। পরে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও কাউন্টারর এন্টি টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা তাদের আটক করে।
আটকদের মধ্যে মুফতি সাজ্জাদুর রহমান কুষ্টিয়া অঞ্চলের কমান্ডার। তিনি কুষ্টিয়া লাহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি প্রাইভেট পড়িয়েও টাকা আয় করতেন।
মেজবাউর রহমান প্রদীপ কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের একজন গাড়িচালক। তিনিও টাকা পয়সা সংগঠনের কাজে ব্যয় করতেন। বাকীদের মধ্যে আবুল বাশার মসজিদের ইমাম ও আশরাফ কম্পিউটার অপারেটর। এছাড়া আজিজ বাবু ও শফিক পলাশ ওরফে বিজয় নামে দুজন ঢাকায় গার্মেন্টে উচ্চ বেতনের কর্মচারি।
গোয়েন্দা সূত্র আরো জানায়, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মধ্যে দুটি ভাগ আছে। এর মধ্যে একটি ভাগ বিদেশে জিহাদী যুদ্ধে অংশ নিতে চেয়েছিলো। অন্য অংশ সংগঠনের মূল নেতাদের কথা মতো নিজ দেশেই ‘জিহাদী কাজ’ পরিচালনা করছিলো। সেই লক্ষেই তারা কথিত খেলাফত কায়েম করতে নাশকতা ও হামলার ছক তৈরি করছিলো।
এর আগে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে বোমা হামলা চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত দল জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের তিন মৃত্যৃদণ্ড প্রাপ্ত আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
হুজির ভয়াবহ সব কর্মকাণ্ড
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অনেকেই মনে করেন যে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং অপর আটজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পর থেকে সংগঠনটি বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ সূত্রে ভাটা পড়েছে তাদের কর্মকাণ্ডে। তবে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ঘটনায় বোঝা যায় ভয়াবহ এই সংগঠনটি এত সহজে নিস্তেজ হবার নয়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের দেওয়া নানা তথ্যে এটাই প্রমাণ হয়।
প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত হুজি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে চারটির বিচার সম্পন্ন হয়েছে। ২৮টি মামলা বিচারাধীন আর চারটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল হয়েছে।
১৯৯৯ সালে কবি শামসুর রাহমানকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা চালানোর মাধ্যমে হুজির অস্তিত্ব জনসমক্ষে প্রকাশ পায়। এর পরের বছর ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার নীলনকশা করে মুফতি হান্নান ও তার সঙ্গীরা। এ ঘটনায় হুজিকে অভিযুক্ত করা হয়।
হুজি পহেলা বৈশাখ (২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল) রমনা বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে ভয়ংকর বোমা হামলা চালায়। এতে ১০ জন প্রাণ নিহত ছাড়াও অনেকে মারাত্মক আহত হন। এরপর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের প্র্রকাশ্য সমাবেশে নির্মম গ্রেনেড হামলা করে। এতে মহিলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা আইভি রহমানসহ ২৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয় এবং ৫শর বেশি নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। এই ঘটনায় আহত হওয়ার সূত্রেই পরবর্তীতে মারা যান ঢাকার সাবেক মেয়র হানিফ।
হুজি ২০০৫ সালে সিলেটে হযরত শাহজালালের দরগাহ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যার চেষ্টা চালায়। এ হামলায় তিনজন নিহত হলেও আনোয়ার চৌধুরী বেঁচে যান।
এ পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মুফতি হান্নানসহ হরকাতুল জিহাদের দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
নিউজওয়ান২৪.কম/টিওএ