‘গুপ্তধন’
নিউজ ডেস্ক
ফাইল ছবি
গুপ্তধনের প্রতি আকাঙ্খা, আসক্তি, লোভ যাই বলুন না কেনো তা যুগ যুগ ধরেই মানুষের মনে বিরাজমান। হঠাৎ গুপ্তধন পেয়ে ধনী হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন অনেক মানুষেরই আকাশকুসুম কল্পনায় ঘুরে বেড়ায়। গুপ্তধনের লালসায় যুগ যুগ ধরে মানুষ কিনা করেছে!পাড়ি দিয়েছে অতল সাগর, আরোহন করেছে উচ্চ পাহাড় পর্বতে। কেউ পেয়েছে সফলতা, কেউ পেয়েছে হতাশা আবার অনেকে করেছে নিজের জীবন উৎসর্গ। আজ আপনাদের কাছে এমনই কিছু গুপ্তধনের কথা বলব যার সন্ধান মানুষ এখনো পায় নি-
সান মিগুয়েলের ধনভাণ্ডার:
১৭১৫ সালের দিকে ১১ টি জাহাজ নিয়ে কিউবা থেকে দেশে ফিরছিল স্পানিশরা। জাহাজগুলো ছিল অমূল্য ধন সম্পদে ভরপুর। স্বর্ণমুদ্রা ছাড়াও ছিল দামী পাথর, হীরা, রূপা ও মূল্যবান সব অলঙ্কার। আটলান্টিক মহাসাগরে প্রচণ্ড ঝড় তুফান ও হারিকেনর প্রলয়ের কথা তৎকালীন সময়ের সবারই জানা ছিল। তাই তো এসব ঝড় তুফানের হাত থেকে বাচঁতে মৌসুমের আগে-ভাগেই নেমে পড়ে মহাসাগরে নামে জাহাজগুলো। কিন্তু সমুদ্রে ৭ দিন অতিবাহিত করার পর জাহাজগুলো হারিকেনের মুখোমুখি হয়। প্রচন্ড হারিকেনের তান্ডবে ফ্লোরিডা উপকূলে জাহাজগুলো ডুবে যায়। বলা হয়ে থাকে মিগুয়েলের দুই-তৃতিয়াংশ সম্পত্তি এই ঝড়ে ডুবে যায় এবং মারা যায় প্রায় এক হাজার সৈন্য। পরে চার বছর অভিযান চালিয়ে কিছু পরিমানে সম্পত্তি উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
টপলিটজ লেকের স্বর্ণ:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে যখন জার্মানির পরাজয় নিশ্চিত তখন তারা অস্ট্রিয়ার টপলিটজ লেকে লুট করা শত শত মণ স্বর্ণ-রৌপ্য ডুবিয়ে দিয়ে যায়। রাশিয়া থেকে লুট করে আনা অ্যাম্বার রুমচিও নাকি ছিলো এ সম্পদের তালিকায়। এসব সম্পদের উদ্ধারের জন্য মানুষ বছরের পর বছর অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু অভিযানের প্রায় সবগুলোই ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হল এ লেকের গভীরতা ও লেকের নিচে ছড়িয়ে থাকা অগনিত গাছের গুঁড়ি। এসব গাছের গুঁড়িতে আটকে প্রাণ গেছে অনেক ডুবুরির। যারা এত সব বাঁধা পেরিয়ে লেকের নিচে পৌঁছাতে পেরেছেন তারা জানিয়েছেন আস্ত একটা বিমানও নাকি শুয়ে আছে এ লেকের তলায়। কিন্তু ২০০৯ সালে অস্ট্রিয়ার পরিবেশবাদীরা এ লেকটিতে নামা একশত বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেন, যেখানে মানুষ আজও লুকিয়ে অভিযান চালায় গুপ্তধনের আশায়।
ওক দ্বীপের গর্ত:
কানাডার নোভাস্কটিয়ার রয়েছে ওক নামের একটি দ্বীপ। এ দ্বীপটি মানুষকে যতটা না টেনেছে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তার থেকে অনেক বেশি টানে এখানকার গুপ্তধনের খোঁজে। যুগ যুগ ধরে মানুষ গুপ্তধনের খোঁজে বার বার এসেছে এ দ্বীপে। গুপ্তধনের গুঞ্জন শুরু হয় ১৭৯৫ সালে। এক রাতে এ দ্বীপে অদ্ভুত আলো দেখতে পায় ম্যাকিংস নামক কিশোর। পরেরদিন সকালে সে দেখতে যায় সেখানে কি হয়েছিল। ম্যাকিংস কিছু সময় খোঁজ করার পর ছোট একটা গুহা দেখতে পায়। জলদস্যূরা গুপ্তধন রেখে গেছে মনে করে ম্যাকিংস তার বন্ধুদের নিয়ে খোরাখুরি শুরু করে। কিছু দূর খোড়ার পর একটি পুরনো কাঠের বাক্স দেখতে পেলেও কিন্তু সেখানে কোনো গুপ্তধন ছিল না। ম্যাকিংস চলে গেলেও গুপ্তধনের গুঞ্জনটা রয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন সময় অনেকেই চেষ্টা করেছে গুপ্তধন খোঁজার। গর্তটি ৯০ ফুট পর্যন্ত খোড়া হলে একটি পাথর পাওয়া যায় যার গাঁয়ে সাংকেতিক ভাষা অনেক কিছু লেখা ছিল,এছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। কিন্তু এ পাথর পাওয়ার পর মানুষের মনে গুপ্তধনের বিশ্বাস আরো প্রবল হয়। এরপর অনেক সময় অনেক কোম্পানি এসে এখানে খোড়াখুড়ি করে। এত খোড়াখুড়ি হয় এখানে যে মূল গর্তটাই হারিয়ে যায় কিন্তু কোনো গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া যায়নি বরং প্রাণ গিয়েছে ছয় জন মানুষের। এখনো অনেকেই খুঁজে বেড়ায় এই গুপ্তধন।
রকি পর্বতের গুপ্তধন:
১৯৮৮ সালে ক্যান্সার ধরা পরার পর মিলিনিয়র আর্ট কালেক্টর ও বৈমানিক ফরেস্ট ফিন তার সারা জীবনের সমস্ত সম্পদ রকি পাহাড়ের কোনো এক স্থানে লুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার এ সিদ্ধান্ত বাস্তবে রূপান্তর করেন ২০১০ সালে। এর মধ্যে তিনি একটি বই লেখেন যার নাম "দ্য থ্রিল অফ দ্য চ্যেস"। এই বইয়ের ভিতর তার লুকানো গুপ্তধন পাবার কিছু সূত্র দিয়ে দেন। আপনারা হয়ত ভাবছেন একজন ব্যাক্তির কাছে কতোটুকুই আর সম্পদ ছিল? কিন্তু আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, ফরেস্ট ফিনের কাছে কয়েক লাখ ডলারের স্বর্ণালঙ্কার, নগদ ডলার সহ আরো অনেক মূল্যবান সামগ্রী ছিল। তার গুপ্তধনের খোঁজে অনেক মানুষ চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত কেউই খুঁজে পাইনি। তার বইতে লেখা একটি কবিতার ভিতর নয় টি সূত্র দেয়া আছে যার অর্থ বের করতে পারলেই পাওয়া যাবে মূল্যবান গুপ্তধন। কবিতা পড়ে সূত্র বের করার চেষ্টা অনেকেই করেছে। তার বাড়ির আশেপাশেও অনেক খোড়াখুড়ি চলেছে। এমনকি তার বাবা ও ভাইয়ের কবর পর্যন্ত খুঁড়ে গুপ্তধনের খোঁজ করা হয়েছে। চাইলে বইটি সংগ্রহ করে আপনিও নেমে পড়তে পারেন গুপ্তধন খোঁজার রোমাঞ্চকর অভিযানে।
ফ্লো ডে লা মার:
চারশো টন ওজনের এ দৈত্যাকার পর্তুগীজ জাহাজটি ১৫০২ সালে লিজবনে তৈরি হয়েছিল। সে সময়কার ভারতীয় উপনিবেশে চলাচলকারী যেকোনো পর্তুগীজ জাহাজের তুলনায় এটি আকারে ছিল কয়েক গুণ বড় ও শক্তিশালী। ১৫১১ সালে এটি ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়, সঙ্গে হারিয়ে যায় হাজার কোটি টাকার স্বর্ণ ও মূল্যবান সামগ্রী। সে সময় পর্তুগীজরা মালাক্কা আক্রমণ করে দখল করে নেয়। মালাক্কা হল বর্তমান সময়ের মালয়েশিয়া। তখন মালাক্কাতে ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবার বসবাস করত। টানা দুই সপ্তাহ ধরে পুরা শহরে লুটপাট করে সমস্ত স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পর্তুগালের উদ্দেশ্যে রওনা হয় ফ্লো ডে লা মার জাহাজে করে। কিন্তু নভেম্বরের শেষে দিকে উত্তর-পূর্ব সোমাত্রা প্রণালীর কাছে প্রচন্ড ঝড়ে জাহাজটি ডুবে যায়। জাহাজের চারশ আরোহীর সকলেই মারা যায়। রাতের অন্ধকারে জাহাজটি ডুবে যাওয়াতে সে সময় জাহাজটির সঠিক অবস্থানের খোঁজ মেলেনি। বর্তমানে সঠিক অবস্থান জানা গেলেও এ গুপ্তধন নিয়ে ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া ও পর্তুগালের সরকারের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। তাই বিলিয়ন ডলার মূল্যের সামগ্রী আজও পানির নিচে
নিউজওয়ান২৪/ইরু
- বাঙালির বংশ পদবীর ইতিহাস
- গন্ধভাদালি লতার উপকারিতা
- ‘ময়ূর সিংহাসন’
- মিশরীয় সভ্যতা এবং নীল নদ
- মধ্যযুগের ইতিহাস
- ব্যবহারের আগে জানুন প্লাস্টিক বোতলে চিহ্নের মানে কী
- পবিত্র কাবা শরীফের অজানা যত তথ্য
- হ্যালুসিনেশন আসলে কী, রোগ না অন্য কিছু?
- পিরামিডের অজানা তথ্য…
- বিকাশ নগদ এবং রকেট’র ভুল নম্বরে টাকা চলে গেলে ফেরত পাবেন যেভাবে
- চুম্বকের আদ্যোপান্ত...
- ‘চুম্বন’ আদর ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ
- ‘রক্ত’ রঙের রহস্য...
- ‘ধানমন্ডি’ নামকরণের ইতিহাস
- মানুষের পর বুদ্ধিমান প্রাণী...