ঢাকা, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

আইসিইউতে ‘জব্বর আলী’, দোয়া চেয়েছে পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ১৯ নভেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

দেশীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নির্মাতা ‘জব্বর আলী’ খ্যাত আমজাদ হোসেন। গতকাল সকালে ব্রেইনস্ট্রোক করে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে অভিনেতা ও নির্মাতা সোহেল আরমান।

তিনি বলেন, ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত আমজাদ হোসেনকে গত রোববার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অচেতন অবস্থায় সকাল ১০টার দিকে বাবাকে ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে আমজাদ হোসেনের পরিবার। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

আরো জানা গেছে, রোববার সকাল ৯টার দিকে আমজাদ হোসেনের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার তাকে বিছানার নিচে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। কখন থেকে তিনি অচেতন হয়েছেন তা টের পাননি কেউই!

এদিকে আমজাদ হোসনের পরিবারের পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়েছে, ডাক্তার এরই মধ্যে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। 

তাছাড়া গতকাল আমজাদ হোসেনের অসুস্থতার খবর পেয়ে চলচ্চিত্রের অনেকেই ছুটে যান ইমপালস হাসপাতালে। তাকে দেখতে যান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান। 

তিনি জানান, নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে থাকায় তার সঙ্গে আপাতত কেউ দেখা করতে পারছেন না। একই সঙ্গে ডাক্তাররাও তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাইছেন না। তিনি আমজাদ হোসেনের পরিবারের পক্ষে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

চলতি বছরই অসুস্থ হয়ে থাইল্যান্ডের সুকুমভিত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আমজাদ হোসেন। সেখানে তার ক্ষুদ্রান্ত্রে দু’টি সফল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন এই কিংবদন্তি।

৭৬ বছর বয়সী এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব বহুমুখী প্রতিভাধর একজন মানুষ। চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, গল্পকার, অভিনেতা, গীতিকার ও সাহিত্যিক হিসেবে সফলতা পেয়েছেন তিনি।

আমজাদ হোসেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৪ই আগস্ট, জামালপুরে। শৈশব থেকেই তার সাহিত্য চর্চা শুরু। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত হন। প্রথমেই তিনি অভিনয়ে নিজেকে তুলে ধরেন পাবনার সন্তান মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে। এরপরপরই তিনি অভিনয় করেন মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে। তবে এরপরের ইতিহাসটা একেবারেই অন্যরকম। বি বাড়িয়ার সন্তান সালাহ উদ্দিন আমজাদ হোসেনের লেখা নাটক ‘ধারাপাত’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এতে আমজাদ হোসেন নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। এরপর আমজাদ হোসেন জহির রায়হানের ইউনিটে কাজ শুরু করেন। এভাবেই দীর্ঘদিন কাজ করতে করতে ১৯৬৭ সালে তিনি নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। নাম ‘জুলেখা’। 

এরপর নূরুল হক বাচ্চুর সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেন ‘দুই ভাই’। তার পরিচালিত ব্যাপক দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’,‘প্রাণের মানুষ’,‘সুন্দরী বধূ’,‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’ ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি। গুণী এই পরিচালক ১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। 

তাছাড়া বিটিভিতে হুমায়ূন আহমেদের যুগ শুরু হওয়ার আগে ‘জব্বর আলী’ চরিত্র নিয়ে আমজাদ হোসেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। প্রতি ঈদের আগে টিভি দর্শকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন ‘জব্বর আলী’ শিরোনামের নাটকটি দেখতে। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করতেন আমজাদ হোসেন।

নিউজওয়ান২৪/জেডআই