ঢাকা, ২২ এপ্রিল, ২০২৫
সর্বশেষ:

শীতল পাটির গ্রাম

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১৭, ২ অক্টোবর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

শীতল পাটি। গরমে ঘুমানোর জন্য স্বস্তিদায়ক বলে গ্রামে শীতল পাটির কদর যুগ যুগ ধরে। শহরেও এর চাহিদা অনেক। মায়ার জাল বিছিয়ে বোনা শীতল পাটির সংস্পর্শ যেন পুরনো দিন গুলোকে মনে করিয়ে দেয়।

উঠানে শীতল পাটিতে বসে গল্পে মেতে ওঠার সেই দিনগুলো এখনও হারিয়ে যায়নি। গ্রামের মানুষ আরামের জন্য তোষকের উপর এখনও শীতলপাটি বিছিয়ে তৃপ্ত হন।

পরশুরামের গ্রামে গ্রামে একসময় বোনা হত শীতল পাটি। এখন সেটির পরিসর ছোট হয়ে এসেছে। পৌরসভার কোলাপাড়া গ্রামে (যুগী গ্রাম) এখনো কয়েকশ পরিবার শীতল পাটি বোনার সাথে যুক্ত।

শীতল পাটি ছাড়াও বিভিন্ন পাটি বোনা হয় এখানে। এখন শীতল পাটির চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু পাটি তৈরি উপকরণের অভাবে বোনা যাচ্ছে না শীতল পাটি।

পরিবারের অভিজ্ঞরা বোনেন শীতল পাটি । প্রথমে বাজার থেকে পাটি পাতা (মোর্তাক) কিনতে হয়। বাঁশের কঞ্চির মতো দেখতে এ গাছ সাধারনত নদী, খাল, পুকুর পাড়ে বা পরিত্যাক্ত জমিতে জন্ম নেয়। এক আটি পাতার দাম পড়ে ২৫০/৩০০ টাকা। বাড়িতে এনে কচি মোর্তাক ৩ ফালি করে কাটতে হয়। এগুলোকে নীল বলে। এটি দিয়েই বোনা হয় শীতল পাটি। মোর্তাকের সাদা অংশও ফেলনা নয়। এটি দিয়েও তৈরি হয় পাটি। তবে সেটি শীতল পাটি নয়।

নীল পাতলা করে কেটে গরম পানিতে সিদ্ধ করতে হয়। তারপর এটিতে রং লাগিয়ে কখনো বা রং ছাড়া শীতল পাটি বোনা হয়। এছাড়া পুরো পাটি তৈরির পর চারপাশে বাঁধ দিতে হয় বেত দিয়ে যা জালি বেত নামে পরিচিত। ৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫ ফুট প্রস্থের একটি পাটি তৈরিতে একজন কারিগরের ৭-৮দিন সময় লাগে। একটি পাটি বিক্রি হয় ১২শ’ থেকে ১৪শ’ টাকায়। এছাড়া ছোট বড় সাইজের পাটিও তৈরি হয়। দামেও থাকে ভিন্নতা। পাটি তৈরি উপকরণের লাগামহীন দাম ও দুর্লবের কারনে শীতল পাটির শিল্প অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।

পৌরসভার পশ্চিম কোলাপাড়া গ্রামে প্রায় ৫ শতাধিক হিন্দু পরিবার রয়েছে। মূলত তাদেরকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে শীতল পাটি শিল্প। এখানকার প্রায় ২০০ পরিবার শীতল পাটি তৈরির সঙ্গে জড়িত।

কয়েকশ’ বছর ধরে তাদের পেশা এটা। তবে শীতল পাটি শিল্প অনেকটাই উঠে যাচ্ছে। অনেকে ছেড়ে দিয়েছেন এ পেশা। এরপরও কিছু মানুষ নাড়ির টানে বাপ-দাদার এ পেশাকে জিইয়ে রেখেছেন।

জ্যোতি রানী ও মিশুকা রানী জানান, আমাদের মা বাবারা এ পেশা ছাড়তে নিষেধ করে গেছেন। তাই আমরা এ পেশা ছাড়তে পারছি না।

পাটি তৈরির কারিগর রাঁধা রানী জানান, বাজারে পাটি বিক্রি করে যা পাই তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে।

পাটি তৈরির প্রবীণ কারিগর ধীরেন্দ্রকুমার নাথ জানান, সরকারের সহযোগীতা না পেলে পাটি শিল্প ধংস হয়ে যাবে।

এখানকার পাটি কারিগরদের দাবি, পাটি শিল্পকে সরকার সহযোগিতা করলে এ শিল্প আরও উন্নত হবে। কারিগরদের আগ্রহ বাড়বে। বেঁচে থাকবে শীতল পাটি শিল্প।

পরশুরামের ইউএনও মনোয়ারা বেগম জানান, সরকারি বরাদ্দ পেলে পাটি তৈরির কারিগরদের সহায়তা দেয়া হবে।

নিউজ ওয়ান২ ৪/জেডএস

আরও পড়ুন
স্বদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত