ঢাকা, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫
সর্বশেষ:

মাশরাফিকে চিকিৎসকদের কটুক্তিতে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর অসন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ১০ মে ২০১৯  

২৫ এপ্রিল আকস্মিকভাবে নড়াইল সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে অধিকাংশ চিকিৎসককে গড়হাজির পান এমপি মাশরাফি    -ফাইল ফটো

২৫ এপ্রিল আকস্মিকভাবে নড়াইল সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে অধিকাংশ চিকিৎসককে গড়হাজির পান এমপি মাশরাফি -ফাইল ফটো

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে ক্যাপ্টেন ও নড়াইলের এমপি বাংলাদেশ মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে কয়েকজন চিকিৎসক  যেসব মন্তব্য করেছেন, তা কোনোভাবেই ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান।

আজ (শুক্রবার) চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক।

নড়াইল-২ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাশরাফি গত ২৫ এপ্রিল আকস্মিকভাবে তার নির্বাচনী এলাকার নড়াইল সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে অধিকাংশ চিকিৎসককে গড়হাজির পান। হাজিরা খাতায় তিন চিকিৎসকের স্বাক্ষর না দেখে তিনি দুজন চিকিৎসককে ফোন করে কথাও বলেন। এছাড়া হাসপাতালের পরিবেশও নোংরা পান এমপি মাশরাফি। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসাসেবার নিম্নমানের বিষয়েও জানতে পারেন তিনি। এর জের ধরে পরে ওই হাসপাতালের চারজন চিকিৎসককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওএসডি করা হয়। তাদের কারণ দর্শানোর চিঠিও দেওয়া হয়। 

এছাড়া চিকিৎসকদের সঙ্গে এলাকার এমপি মাশরাফির কথাবার্তার ওই ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে কোনো কোনো চিকিৎসক মাশরাফির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন স্ট্যটাস দেন, মন্তব্য করেন। বিষয়টি কটুক্তির পর্যায়ে চলে যায়।

ঘটনার ধারাবাহিকতায় ফেইসবুকে কটূক্তি করা ছয় চিকিৎসককে কারণ দর্শাও নোটিস দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান সে প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “মাশরাফিকে এদেশের মানুষ একজন ‘হিরো’- একজন দেশপ্রেমিক যোদ্ধা বলে মনে করে। শুধু একজন ভালো ক্রিকেটার হিসেবে না। মাশরাফির ভিতরে যে চেতনা, সাতবার অস্ত্রোপচারের পরেও সে যেভাবে অসম্ভব শারীরিক কষ্ট সহ্য করে খেলে…”

মন্ত্রী আরো বলেন, এই যে ধৈর্য্য, সহ্য, দেশপ্রেম- সবকিছু মিলিয়ে মাশরাফি। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নড়াইল থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন। বিপুল ভোটে জিতেছেন। দেশের যে কোনো জায়গায় দাঁড়ালে নির্বাচিত হবেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেলা পর্যায়ের হাসপাতালের সভাপতি থাকেন সংসদ সদস্য। এলাকার হাসপাতালে সমস্যা থাকলে সেটা দেখভালের দায়িত্বও এমপির। উনি সভাপতি হিসেবে গিয়েছেন, রোগীদের কষ্টের কথা শুনেছেন। ডাক্তার সাহেবদেরকে ওই মুহূর্তে পান নাই। যাকে পান নাই নম্বর নিয়েছেন, কথা বলেছেন। কিছু কথার মধ্যে হয়তো একটু ক্ষোভ প্রকাশ হয়েছে। হতে পারে।

“যারা ‘অতি উৎসাহী হয়ে’ ওই ঘটনা ভিডিও করেছেন এবং পরে আবার ফেইসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন, তাদের ওই কাজ কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত ছিল না” বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ডাক্তার সাহেবরা এ বিষয় নিয়ে তাকে (মাশরাফি) খুব বেশি রকম আক্রমণ করা, এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি শুধু একজন জাতীয় ক্রিকেট খেলোয়াড় না, মাননীয় সংসদ সদস্যও বটে। সংবিধানে তার মর্যাদা অনেক।

চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। মানুষের সেবা করা আমাদের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য। হ্যাঁ মাশরাফি ভাই বলেছে… আমাকে ওইভাবে বলতে হবে কেন?

মাশরাফির সাথে তো আমাদের ডাক্তারদের কোনো ঝগড়া নাই, বিবাদ নাই। মাশরাফির মতো মানুষ যদি একটা কথা বলেই ফেলে, যদি আমার কাছে ঠিক মনে নাও হয়, আমি কোনোদিনই ওইভাবে এটার প্রতিবাদ করতাম না।

ডা. মুরাদ হাসান বলেন, আমরা সেবা করব মানুষের। সেবা করতে গিয়ে যদি আমরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করি, অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলি- এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এটার জন্য তাদের শোকজ করা হয়েছে। সমাধান আমরা বের করবো। তাদের সতর্ক হতে হবে, সংশোধন হতে হবে। সম্মানিত কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে এভাবে কেন লিখবে? তাদের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। একজন চিকিৎসক সবচেয়ে মেধাবী। তাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। তারা আরো অনেক ধৈর্য্যশীল সহ্যশীল হবেন- এটাই আমাদের আশা।

এসময় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট নিয়ে সাংবাদিকরা প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এর উত্তর দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, জরুরি বিভাগে ২টা পর্যন্ত ডাক্তাররা বেশি থাকে। এরপর ডাক্তারদের সংখ্যা কমে যায়। সারাদেশের সকল হাসপাতালে সকাল ৮টা-৯টা থেকে সকল ডাক্তাররা দুইটা-আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। এরপর শিফটিং। এটা অনেকেই বোঝেন না। প্রত্যেক ডাক্তার যদি ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করেন তাহলে তো তার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব না।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে
 

       

আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত