বড়ইতলা গণহত্যা দিবস আজ
নিউজ ডেস্ক

ফাইল ছবি
১৩ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বড়ইতলা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১সালের এদিন পাকিস্তানি বাহিনী একসঙ্গে হত্যা করে ৩৬৫জন নিরীহ মানুষকে। জ্বালিয়ে দেয় কয়েকটি গ্রাম। দেশের জন্য জীবন দিলেও, ওইসব হতভাগ্য লোকজন স্বাধীনতার এতবছর পরও, পাননি শহীদের মর্যাদা। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্বজনদেরও দেয়া হয়নি কোনো সান্তনা। শহীদদের স্মরণে এলাকায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেও, অযত্ন অবহেলায় সেটিও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ৪৭ বছর আগের বিভিষীকাময় দিনটির কথা মনে হলে আজও শিউরে উঠেন এলাকার প্রবীণ লোকজন।
‘দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব এ বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধিস্থলে’ শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে খোদাই করা কবিতার এ দুটি লাইন, বেদনাময় সেই রক্তাক্ত দিনটির কথা মনে করিয়ে দেয়। আর এভাবেই প্রতিবছর দুঃস্বপ্নের মতো কিশোরগঞ্জের যশোদল ইউপির বড়ইতলা গ্রামে ফিরে আসে ১৩ অক্টোবর। সেদিন কয়েকশ মানুষকে হত্যা করে উল্লাস করে হানাদার বাহিনী। বছর ঘুরে দিনটি ফিরে এলে সেই দুঃসহ স্মৃতি কাঁদায় স্বজনহারাদের।
একাত্তরের ১৩ অক্টোবর সকালে পাকসেনাদের একটি ট্রেন এসে থামে বড়ইতলা গ্রামের কাছে। ট্রেন থেকে নেমে তারা স্থানীয় রাজাকারদের নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে একটি সমাবেশ করার চেষ্টা চালায়। এ সময় এক পাকসেনা দলছুট হয়ে পড়ায় রাজাকাররা গুজব রটিয়ে দেয় তাকে হত্যা করা হয়েছে। এরপরই পশুর মতো নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। বড়ইতলা, চিকনিরচর ও দামপাড়াসহ আশপাশের এলাকার পাঁচ শতাধিক লোককে ধরে এনে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেল লাইনের পাশে জড়ো করে তারা। এক পর্যায়ে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে, রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় ৩৬৫ জনকে। এ সময় আহত হয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি।
বড়ইতলা স্মৃতিসৌধটি যেখানে তৈরি করা হয়েছে সে জমিটি দান করেছিলেন মো. মর্ত্তুজ আলী। আর সেই জমির উপরেই দাড়িয়ে আছে বর্তমান স্মৃতিসৌধটি। তিনি আপেক্ষ করে বলেন, বর্তমান সরকার স্মৃতিসৌধটির আংশিক কিছু কাজ করলেও পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারেনি। দিনের পর দিন এ স্মৃতিসৌধটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে আছে। ১৩ অক্টোবর ছাড়া কখনও এ জায়গা বা স্মৃতিসৌধটির খোঁজ কেউ রাখে না। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে, স্মৃতিসৌধটি রক্ষার জন্য বাউন্ডারি, গেইট ও একটি পাঠাগারের দাবি জানান তিনি।
পুরো বড়ইতলা ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক গণকবর। প্রতিটি পরিবারই হারিয়েছে কোনো না কোনো স্বজনকে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পূর্বচিকনিরচর গ্রাম। এখানকার বহু মানুষকে হত্যাসহ জ্বালিয়ে দেয়া হয় পুরো গ্রামটিকেই। কিন্তু স্মৃতিস্তম্ভে গণহত্যার শিকার লোকজনকে শহীদ উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে তাদের দেওয়া হয়নি শহীদের মর্যাদা। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দেয়া হয়নি কোনো ধরনের সহায়তা।
বেয়নেটের আঘাতে আহত চিকনিরচর গ্রামের মোমতাজ উদ্দিন বলেন, পাকসেনারা আমাকে ও আমার ভাইকে রাস্তা থেকে ধরে বড়ইতলা নিয়ে যায়। হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে একজন পাকসেনা আমাকে বেয়নেট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে গুরুতর আহত হয়ে অচেতন হয়ে মাটিতে লাশের স্তুপের উপর পড়ে যাই। পাকসেনারা আমি মারা গেছি মনে করে ফেলে রেখে যায়। পুরো একদিন আমি লাশের স্তুপের মধ্যে পড়েছিলাম। পরদিন একজন মহিলা আমাকে লাশের স্তুপ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন গণহত্যার স্থানটি অবহেলায় পড়ে থাকার পর ২০০০ সালে শহীদদের স্মরণে উক্ত স্থানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। জেলা পরিষদের উদ্যোগে বড়ইতলায় ৬৬৭ বর্গফুট এলাকা জুড়ে নির্মিত হয় ২৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি স্মৃতিসৌধ। মূল সৌধের পাশে বড়ইতলা গণহত্যায় শহীদদের নাম সম্বলিত দু’টি সু-উচ্চ পিলার। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো, মূল সৌধের পাশে দু’টি সু-উচ্চ পিলারে বড়ইতলা গণহত্যায় দেড় শত শহীদদের নাম সম্বলিত ফলক লাগানো হলেও এখন পর্যন্ত বাদ বাকি শহীদদের নাম সংগ্রহ করে তাতে উঠানো হয়নি। এছাড়া নিম্নমানের দায়সারাভাবে লেখার কারণে অধিকাংশ নামই মুছে গেছে ফলক থেকে। এখনও বড়ইতলার শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সংগ্রহ করে ফলকে না উঠানোয় ক্ষোভ রয়েছে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে।
ডিসি সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, এ হত্যাকাণ্ড একটি নৃশংসতম ঘটনা। বড়ইতলায় একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে যেখানে সবার নাম নেই। আমরা চেষ্টা করছি আরো যারা মারা গিয়েছেন তাদের নাম সংগ্রহ করে সেখানে যুক্ত করতে। এছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় যে সব রাজাকার, আলবদররা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে যেন বিচারের আওতায় আনা হয়, সে ব্যাপারেও মন্ত্রণালয়ে কথা বলব।
এলাকাবাসীর অভিযোগ এ তালিকাটিও অসম্পূর্ণ। এসব নিয়ে আক্ষেপ, ক্ষোভ ও হতাশার শেষ নেই তাদের। গণহত্যার শিকার লোকজনকে শহীদের মর্যাদা, তাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধটির সংস্কার ও স্থানীয় রাজকারদের বিচার এবং সেই সঙ্গে দিনটিকে সরকারিভাবে পালনের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
নিউজওয়ান২৪/জেডএস
- ঠাকুর অনুকুল চন্দ্র আশ্রমের সেবককে কুপিয়ে হত্যা
- পরকীয়া, গোয়েন্দাগিরি আর ব্ল্যাকমেলিংয়ের জটিল কাহিনী
- পুলিশ ঘটনার শেষে নয়, আগেও আসে তাহলে!
- গাছের পাতা চুরি: রংপুরে বেগম রোকেয়া কলেজে তুলকালাম
- ত্রিশালে ‘অলৌকিক পানি’, ১৪৪ ধারা জারি
- টেকনাফে সোয়া লাখ ইয়াবা উদ্ধার
- সবুজ পাতার খামে হেমন্তের চিঠি
- সীমান্তরক্ষায় বিজিবিতে এবার নারী
- আধমণের হরিণ গিলে খেল পনের ফুটের অজগর (ভিডিও)
- নয়াপল্টনে হঠাৎ ড্রোন, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক!
- শিকলে বাঁধা বাকপ্রতিবন্ধী ছেলের জন্য কেঁদে মরছেন মা-বাবা
- জামিন নামঞ্জুর, মানিকগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা তাপস সাহা জেলহাজতে
- ছাগলনাইয়ার ‘উভয় পক্ষের লোক’ যুবলীগ নেতা ফারুক!
- ব্যবসায়ী সাইফুল সাভারে মুক্ত
- ভারত সফরে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি হয়নি: শেখ হাসিনা