ঢাকা, ২২ এপ্রিল, ২০২৫
সর্বশেষ:

পাকিস্তানে আমার বোন নিরাপদ নয়: আসিয়ার ভাই

প্রকাশিত: ০২:১৫, ৪ নভেম্বর ২০১৮  

পরিবারের সঙ্গে আসিয়া     ছবি: ডন.কম

পরিবারের সঙ্গে আসিয়া ছবি: ডন.কম

 

কট্টরপন্থিদের চাপে ব্লাসফেমি মামলায় পাকিস্তানি খ্রিস্টান নারী আসিয়ার পাকিস্তান ত‌্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খালাস পাওয়ার আগে গত আট বছর তাকে মৃত‌্যদন্ড মাথায় নিয়ে কারাগারে কাটাতে হয়েছে। 

ব্লাসফেমির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ২০১০ সালে দেওয়া মুত‌্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে গত বুধবার তাকে খালাস দেয় আদালত। 

৫৪ বছর বয়সী পাঁচ সন্তানের জননী এই নারীকে নিরাপত্তাজনিত কারণে বর্তমানে অজ্ঞাতবাসে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। অচিরেই আসিয়া বিবির আনুষ্ঠানিক মুক্তি হবে বলে জানান তার ভাই জেমস মসিহ।

জেমস বলেন, তার বোনের আর কোন বিকল্প নেই দেশত‌্যাগ বিনা। তাড়াতাড়িই আসিয়া দেশ ছাড়বে। কোথায় কোন দেশে গিয়ে আশ্রয় নেবেন আসিয়া সে বিষয়ে কিছু বলেননি তার ভাই। তবে ফ্রন্স এবং স্পেন তাকে রাজণৈতিক আশ্রয় দিতে প্রস্তুত বলে জানা গেছে। 

আসিয়ার স্বামী আশিক মসি তাদের সন্তানদের নিয়ে সম্প্রতি ব্রিটেন থেকে ফিরেছেন। তারাও আসিয়ার সঙ্গে খো করার জন‌্য উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছে। 

অপরদিকে, ধর্ম অবমাননা আইনের ফাঁস থেকে খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবিকে বাঁচানোর পরই পাকিস্তান ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমান তার আইনজীবী সাইফুল মুলুক। গত বুধবারই তার প্রশ্নের ভিত্তিতে আসিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করে পাক সুপ্রিম কোর্ট।

৪৭ বছর বয়সী ওই খ্রিস্টান নারীকে মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তার আইনজীবী সাইফুল মুলুককেও নিশানা করেছে কট্টরপন্থী রাজনৈতিক ও জঙ্গি সংগঠনগুলো।

শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণ বাঁচাতে শনিবার সকালেই দেশ ছাড়লেন তিনি। একই সঙ্গে তার পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন এই পাক আইনজীবী।

শেষ পর্যন্ত নিজের প্রাণ বাঁচাতে শনিবার সকালেই দেশ ছাড়েন তিনি। একই সঙ্গে তার পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন এই পাকিস্তা আইনজীবী।

২০১০ সালে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আসিয়া বিবিকে ফাঁসির সাজা দিয়েছিল নিম্ন আদালত। পাকিস্তানের পাঞ্জাবের শিকরপুরায় মাঠে বেরি তুলতে গিয়ে দুই প্রতিবেশী নারীর সঙ্গে বচসা বাঁধে খ্রিস্টান নারী আসিয়া নুরিন ওরফে আসিয়া বিবির। ঝগড়ার সময় ইসলাম ধর্মের নবী মোহাম্মদ (সাঃ)কে  অবমাননা করেছেন, আসিফার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছিল। যদিও পরে সেই মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞায় স্থগিতাদেশ জারি করে লাহৌর হাইকোর্ট।

আসিয়া বিবির মামলা নিঃসন্দেহে গত এক দশকে পাকিস্তানের অন্যতম হাই প্রোফাইল মামলা। তার মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছেন সারা দুনিয়ার একাধিক মানবতাবাদী সংগঠন। তার পরিবারের পক্ষ থেকে খ্রিস্টানদের শ্রেষ্ঠ যাজক ভ‌্যাটিকানের পোপের সঙ্গেও দেখা করা হয়েছে।

পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট এবং পোপ ফ্রান্সিস, পরপর দুই খ্রিস্টান ধর্মগুরু তার মুক্তির জন্য পাকিস্তানি সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন।  

বিদেশ যেতে বাধা
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পাকিস্তানের নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবিকে খালাস করে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতিবাদে চলা কয়েকদিনের বিক্ষোভ অবশেষে থেমেছে। কট্টরপন্থি মুসলিম দল তেহরিক-ই-লাবাইকের (টিএলপি) সঙ্গে ইমরান খান সরকারের চুক্তির পর আন্দোলনকারীরা আটকে রাখা সড়কগুলো ছেড়ে দিয়েছে।

আসিয়ার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে এ দলটিই সর্বাত্মক বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল; হুমকি দিয়েছিল রায় ঘোষণা করা বিচারকদের বিরুদ্ধেও। মুক্তি পাওয়ার পর আসিয়া তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারে এমন ইঙ্গিতের মধ্যেই টিএলপি ও সরকারের মধ্যে চুক্তিটি হয়।

চু্ক্তি অনুযায়ী সরকার আসিয়ার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেবে; সুযোগ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেরও। 

তবে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ থেকে যাদের আটক করা হয়েছে, সরকার তাদের ছেড়ে দিলেও যারা সহিংসতা করেছে তাসঙ্তদের বিরুদ্ধে মামলা চলবে। এর বদলে টিএলপি বিক্ষোভ বন্ধ করবে এবং সমর্থকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নেবে। 

প্রসঙ্গত, দেশটির রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ায় বিভিন্ন আইনেও এর প্রভাব বিদ্যমান; তারই একটি এ ব্লাসফেমী আইন। যদিও এটি মূলত ব্যক্তিগত রেষারেষির প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যবহৃত হয়, আহমদিয়া এবং খ্রিস্টানরাই এর কোপে পড়ে বলে দাবি সমালোচকদের। সূত্র: ডন.কম,আলজাজিরা.কম

আরও পড়ুন
বিশ্ব সংবাদ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত