ঢাকা, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
সর্বশেষ:

তিনি আমার দিকে মহাবিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন!

সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ১৮ জুলাই ২০১৬   আপডেট: ০৬:১০, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ইন্টারমিডিয়েটে পড়বার সময় কলেজের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বড় ভাইকে সুখবরটি দিলাম। তিনি আমার দিকে মহাবিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন, তারপর হাসলেন।

আমি মিনমিন করে তাঁর হাসির কারণ জানতে চাইলাম। তিনি মুখভার করে বললেন, “বুঝলাম কলেজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে”! তাঁর কথার মানেটা টের পেয়ে কেটে পড়লাম।

অথচ তখনও আমার কলেজে নিয়মিত কালচারাল উইক হত, নাটক হত। প্রতিবছর নিয়মিত প্রকাশিত হত কলেজ বার্ষিকী,একই সাথে কম করে হলেও চার ফর্মার বই আকারে প্রকাশিত হত কলেজের সাহিত্য পত্রিকা ‘বিবর্তন’।

স্থানীয় ফুটবল লীগে দেবেন্দ্র কলেজ লাল এবং দেবেন্দ্র কলেজ সবুজ নামে দুটি টিম নামতো,ক্রিকেট লীগে ছিল দুর্ধর্ষ টিম। জমজমাট থাকতো ইনডোর গেমস্ । প্রতিবছর জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দেবেন্দ্র কলেজ ছিল আলোচিত টিম। সনটা ঠিক মনে নেই শেষবার, সেবার নামকরা তিনটি কলেজকে পরাজিত করে আমাদের দল টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌছেছিল। তিনজনের সেই দলে আমি ছিলাম প্রথম বক্তা,মানে অপেক্ষাকৃত দুর্বল বক্তা ।

এতকিছুর পরও আমার বড়ভাইর কাছে তাঁর কলেজের মান ছিল পতিত। কারণ তিনি আমাকে ভালকরেই চিনতেন। অামি যখন চ্যাম্পিয়ন তখন তার হাসবারই কথা ।

এখন এই কলেজে কয়েক ডজন অনার্স-মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এখন সেই কলেজ,সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের বার্ষিক নাটক শেষ কবে হয়েছে কেউ জানেন না । শেষ কোন বছর কলেজ বার্ষিকী,সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছে তা রীতিমত গবেষণা করে বের করতে হবে। স্থানীয় ক্রিকেট কিংবা ফুটবল লীগে দেবেন্দ্র কলেজের কোন টিম নামে না প্রায় তিন যুগ ধরে। সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সপ্তাহ সেও নিখোঁজ। অার টিভি বিতর্ক সেতো এখন সোনার পাথরবাটি।

এমন দুর্গতির খবর আমার বড়ভাই (অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) যদি জানতেন তা হলে যে অট্টহাসিটা দিতেন সে হাসির শব্দ হয়তো প্রশান্তমহাসাগরের তীরে দাঁড়িয়েও শোনা যেত।

এই চিত্র কেবল আমার কৈশরের বিদ্যাপীঠ দেবেন্দ্র কলেজের না,দেশের ৯৯.৯৯ভাগ কলেজেরই। এমন ক্ষয় যেখানে,যে সময়ে,সে সময়ে আমাদের সন্তানেরা,তরুনেরা অন্ধকার পথে হাঁটবেই,আত্মঘাতি পথে যাবেই,ফেরাবে কে ! আমার জেলা শহরের কথা আরেকদিন না হয় বলবো।

[ দ্রষ্টব্য :: আমার বড়ভাইদের সময়ে এই কলেজের কালচারাল উইকে “তবলা লহরা” নামে তবলা বাদনের প্রতিযোগিতাও হত ! ভাবা যায়,উচ্চাঙ্গ তাল-লয়ের তবলা লহরা ! আর অামার সেই বড়ভাই একাধিকবার তবলা লহরায় প্রথমও হয়েছেন। সেই জয়ের ধারাবাহিকতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময়েও ধরে রেখেছিলেন।]

লেখক: মানিকগঞ্জ নিবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

 

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত