ঢাকা, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
সর্বশেষ:

টেনশনে পাকিস্তানি সাংবাদিক সিরিল গর্বিত ভারতীয় পত্রিকা আনন্দবাজার

অ-সম্পাদিত ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৪৪, ১৭ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ১৫:০৭, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

নিজদেশের বেসামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে সামরিক নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ করে দৃশ্যত ঝামেলায় পড়ে যাওয়া এবং আলোচনার ঝড় তোলা পাকিস্তানি সাংবাদিক সিরিল আলমিডা তার পরিবেশিত সংবাদের বস্তনিষ্ঠতার বিষয়ে অবিচল রয়েছেন। সম্প্রতি টু্ইটারে এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন- সত্যি সংবাদ সবার সামনে আনার জন্য অনুতপ্ত নন।

আলমিডার আশঙ্কা, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলায় প্রাণে মেরে ফেলা হতে পারে তাকে। এ কারণেই দেশ ছাড়তে চেয়ে আবেদন করেছিলেন সংশ্রিষ্ট দপ্তরে। কিন্তু, পরপর তিনবার ‘এক্সিট কন্ট্রোল লিস্ট’-এ ফেলে দেওয়া হয়েছে তাকে।

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে সেনা প্রভাবিত দেশ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বাদানুবাদ নিয়ে সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রভাবশালী মিডিয়া ডন একটি লেখা ছাপে। এতে বলা হয়, বেসামরিক নেতৃত্ব সেনাবাহিনীকে বলেছে, হয় জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়ুন নয় আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে যাওয়ার বিপদ মোকাবেলা করুন। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ করে আসছে ভারত দীর্ঘদিন ধরে।

গত রবিবার দ্য ডন-এ প্রকাশিত নিজের লেখা ‘এ উইক টু রিমেম্বার’-এ সিরিল আলমিডা লিখেছেন, তিনি কঠিন অস্বস্তিতে আছেন নিজেই সংবাদের শিরোনাম হয়ে। প্রসঙ্গত, দুনিয়াজুড়ে প্রচার পায় সিরিলের ওই প্রতিবেদন এবং এর পরপরই তাকে বিদেশে যেতে সরকারের বাধা দেওয়ার ঘটনাটি।

আলোচিত লেখাটি সম্পর্কে রোববারের কলামে তিনি জানান, তিন অক্টোবর সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পরপর ওই প্রতিবেদনটি সুচারুভাবে প্রস্তুত করা হলেও এটি প্রকাশ করা হয় ছয় অক্টোবর। এই দেরিটা করা হয় তথ্যসূত্র যাচাই এবং প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেওয়ার কারণে।

প্রতিবেদনে আলমিডা লিখেছিলেন, দুই দেশের মাঝে সৃষ্ট আতঙ্কের কারণ ওই সন্ত্রাসীরা যারা পাকিস্তান থেকে পরিচালিত হয় এবং ভারত ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা ঘটায়। ছয় অক্টোবর ডনে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের সূত্রের বরাতে আলমিডা আরও জানান, নওয়াজ শরিফ সরকার সেনা নেতৃত্বকে বলে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পেছনে কথিত সন্ত্রাসে মদদদানের ভূমিকা রয়েছে।

তবে সংবাদটিকে অসত্য বলে ঘোষণা করে পাকিস্তান সরকার। একই সঙ্গে প্রতিবেদক সিরিল আলমিডার বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে পরবর্তীতে মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনা ও চাপের মুখে আলমিডার নাম ‘এক্সিট কন্ট্রোল লিস্ট’ থেকে বাদ দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের চিরশত্রু হিসেবে খ্যাত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার হুমকি দেন। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার সূত্রে সম্প্রতি দুই প্রতিবেশির মধ্যে উত্তেজনা ও সীমান্ত সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করে।

ওই হামলায় ১৮ ভারতীয় সৈনিকসহ হামলাকারী ৪ আত্মঘাতীও নিহত হয়।
পরবর্তীতে পাকিস্তানি কাশ্মিরে কথিত জঙ্গি আস্তানায় সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নামক সেনা অভিযান চালিয়ে ভারত ৯ পাকিস্তানি সেনাকে হত্যার দাবি করে। পরে পাকিস্তানও ভারতীয় ৮ সেনাকে হত্যা ও একজনকে আটকের কথা জানায়।

উরি নিয়ে ভারতকে অভিযুক্ত করে সিরিলের আগের লেখা
পাকিস্তানের প্রভাবশালী দৈনিক ডনের অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর হিসেবে কর্মরত সাংবাদিক সিরিল আলমিডা পাকিস্তানের সামরিক ও অসামরিক প্রশাসনিক মহলের মধ্যে মতবিভাজন ওবাদানুবাদের সংবাদ পরিবেশন করে নিজদেশের নির্বাচিত সরকারের বিরাগভাজন হয়েছেন। তবে একই বিষয় উৎসারিত এর আগের একটি লেখায় (সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত) তিনি কিন্তু উরিসেনানিবাসে হামলার জন্য ভারতকে দায়ি করে কলাম লিখেছিলেন। তার ওই লেখার শিরোনামের বাংলা ছিল এরকম- ‘উরি আক্রমণ ভারতের বোকামির ফল’।

নিজের লেখায় তিনি উরি আক্রমণকে ভারতের বোকামির কারণে সৃষ্টি উল্লেখ করে বলেন, এটি আসলে ভারতের নিজের পায়ে নিজের কুড়াল মারার শামিল। নিজের মতের সমর্থনে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৮ জুলাই কোনও কারণ ছাড়াই ভারত কাশ্মীরের বুরহান ওয়ানি নামে এক ২২ বছর বয়সী তরুণকে হত্যা করে। ওই ঘটনাকে পাকিস্তান তো বটেই, ভারতেরও অনেকেই বোকামি বলে আখ্যা দেন। এর ফলে কাশ্মিরে তীব্র আন্দোলন দানা বাঁধে। যাতে ভারতের সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ ও নিপীড়ন চালায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এর ফলে ধর্মীয় জঙ্গিবাদীরাও সেই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। ওই আক্রমণ থেকে কাশ্মীরে পুনরায় জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বলে দাবি করেন। এর ধারাবাহিকতায় উরির ঘটনা ঘটে বলে মত প্রকাশ করেন আলমিডা।

এর কারণ হিসেবে আলমিডা বলেন, কাশ্মিরে ভারতের ওই সময়ের চালানো নিপীড়নের সময় মানবাধিকার সংগঠন ও দেশত্যাগী কাশ্মিরিরা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নজর কাড়তে লেখালেখি শুরু করেন যা মোটেই সফল হয়নি। একইভাবে এই ইস্যুকে আন্তর্জাতিকীকরণ প্রচেষ্ঠায়ও পাকিস্তান একেবারেই ব্যর্থ হয়। উল্টো দুই মাস ধরে কাশ্মীরে চলমান হত্যাযজ্ঞের কোনও জবাবদিহিতাই করতে হয়নি ভারতকে।

আলমিডা আরও লিখেন, এর ফলে কাশ্মিরকে আক্রান্ত দেখে স্বাধীনতাকামী জিহাদিরা সেখানে তৎপর হয়েছে। কাশ্মিরে ভারতের কর্মকাণ্ডকে যদি পাকিস্তানে ভালোভাবে প্রচার করা যেত তাহলে সেটি একটি জিহাদ তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যেত। একই সঙ্গে, বিশ্বের মনোযোগও আকর্ষণ করা জরুরি ছিলো। ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ে বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষিত হয় কেবল যুদ্ধ পরিস্থিতি হলে। সবকিছু যোগ করলে উরির ঘটনাটি ভারতের নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার ফলাফল বৈ আর কিছু নয়।

উরি আক্রমণ দুই পক্ষের কাজ হতে পারে, হয় পাকিস্তানের কাজ, নইলে পাকিস্তানের কাজ নয়। ভারতের কাছে আক্রমণকারীদের দেহ আছে। যাদের সঙ্গে পরিবার, প্রশিক্ষক এবং নেটওয়ার্ক সংযুক্ত। তাই তাদের পরিচয় পাওয়া কেবল সম্ভবই নয় বরং অনিবার্য বলেও মনে করেন তিনি। ভারত-পাকিস্তান ও অন্য কয়েকটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই আক্রমণকারীদের পরিচয় জেনে গেছেন বলেও ধারনা করেন তিনি।

এখন, যদি উরি আক্রমণ পাকিস্তানিদের কাজ না হয়ে থাকে, তাহলে ভারত আরও একটি চমৎকার আত্মঘাতী কাজ করেছে বলে মনে করেন আলমিডা। কারণ এতে প্রশিক্ষিত অনুপ্রবেশকারীদের একটি নব প্রজন্মের তৈরি হবে। ফলে বিশ্বের মনোযোগ এখন কাশ্মীরে ভারতের কর্মকাণ্ডেরর দিকে যাবে বলে লেখেন আলমিডা।

কৌশলে ভারতকে ধারাশায়ী করে তিনি আরও বলেন, আর যদি উরি আক্রমণ পাকিস্তানি ‘নন-স্টেট’দের কাজ হয়ে থাকে, তাহলে এটি ভয়ের থেকে বেশি হতাশার হবে। কারণ ভারত ইতিমধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছে হত্যা করে পার পেয়ে যাওয়া যায়।

প্রশ্ন হলো মাত্র কদিন আগে দেশের স্বার্থে এমন লেখা যিনি লেখেন, তিনিই কি দেশের স্বার্থ বিরোধী লেখা লেখতে পারেন- অন্তত ডনের মতো পত্রিকার দায়িত্বশীল পদে থাকা কোনো সাংবাদিক!

এদিকে, ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার সিরিলের সাহসিকতায় রীতিমতো গর্ব প্রকাশ করেছে। তবে এই প্রকাশ পাকিস্তানি বা ভারতীয় হিসেবে নয়- উপমহাদেশীয় হিসেবে।

এখানে আলোচিত বিষয়ে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়র কয়েকটি লাইন উল্লেখ করা যায়- ”ভারতীয় উপমহাদেশীয় পরিচিতি লইয়া গর্বিত হইবার দিন আজ। গর্বের কারণ— পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম। সরকারি ছড়ির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় স্তম্ভ যে ভাবে জেহাদ ঘোষণা করিয়াছে, গোটা উপমহাদেশে তাহা এক বিরল নৈতিক মেরুদণ্ডের লক্ষণ। আক্ষরিক অর্থে ইহা জেহাদ, কেননা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হইয়াছে, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভাবে তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য পরিবেশনই সংবাদমাধ্যমের একমাত্র ধর্ম, তাহার আর কোনও ধর্ম নাই। বিশেষ করিয়া, সরকারি তর্জন অনুযায়ী পুতুলনাচ কোনও মতেই তাহার কাজ হইতে পারে না।”

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত