জাকাত: সম্পদ বৃদ্ধি ও পবিত্র করে
গাজী ফারুক আহসান

ফাইল ছবি
প্রত্যেক মুসলমানকে যেমন জাকাত ফরজ হওয়ার বিষয় সম্পর্কে বিশ্বাস করতে হবে, ঠিক তেমনিভাবে যার ওপর জাকাত ফরজ তাকে তা নিয়মিত পরিশোধও করতে হবে।
জাকাতের শাব্দিক অর্থ পবিত্রতা, বৃদ্ধি, পরিশুদ্ধি, বরকত। কারণ যিনি জাকাত প্রদান করবেন, তার সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এবং সঙ্গে সঙ্গে উহা বালা-মুছিবত থেকে রক্ষা পাবে।
ইবনে তাইমিয়া হতে বর্ণিত, ‘জাকাতপ্রদানকারীর মন পবিত্র হয় এবং তার সম্পদে বরকত হয় ও বৃদ্ধি পায়।
জাকাত ফরজ হওয়ার দলীল:
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَة
তাদের এ মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে, তারা নিবিষ্ট মনে একান্তভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর এবাদত করবে, যথাযথভাবে সালাত আদায় করবে, জাকাত প্রদান করবে, আর এটাই হলো সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন। (বাইয়্যনিাহ :৫)
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُواْ الصَّلاَةَ وَآتَوُاْ الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎ কাজ করেছে, নামাজ প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং জাকাত প্রদান করেছে, তাদের জন্য পুরস্কার তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নাই এবং তারা দুঃখিত হবে না । (সূরা বাক্বারা, ২৭৭)
জাকাত ও ওশর প্রসঙ্গ:
زكاة (জাকাত) এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বৃদ্ধি ও পবিত্র হওয়া।
শরিয়তের পরিভাষায় এর অর্থ হচ্ছে, শরিয়তের নির্দেশ অনুযায়ী নিজ সম্পদের একটা নির্ধারিত অংশ গরীব প্রাপকদের মাঝে বন্টন করা এবং তার লাভালাভ হতে নিজেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা।
عُشْرٌ (ওশর) এর অর্থ হচ্ছে, উৎপন্ন শস্যের এক দশমাংশ উল্লেখিত নিয়মে বন্টন করা। অর্থাৎ বৃষ্টির পানিতে ও বিনা সিনে উৎপাদিত শস্যের দশ ভাগের এক ভাগ বা বিশ মণে দুই মণ, আর সিনের মাধ্যমে উৎপাদিত হলে বিশ মণে এক মণ বর্ণিত নিয়মানুসারে বন্টন করে দেয়া।
উল্লেখ্য যে, হিজরী ২য় সনে রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে মদিনায় জাকাত বিস্তারিত বিবরণসহ ফরজ হয়।
বলাবাহুল্য, জাকাত প্রদানের মাধ্যমে মাল বৃদ্ধি পায় ও পবিত্র হয়। পাশাপাশি কৃপণতার কলুষ-কালিমা হতে জাকাতদাতা প্রবিত্রতা লাভে ধন্য হয়। বস্তুত: জাকাত হচ্ছে ইসলামের ৩য় স্তম্ভ।
যেমন হাদিসে বলা হয়েছে:
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর স্থাপিত।
(এক) মহান আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা রাসূল এ সাক্ষ্য দেয়া।
(দুই) নামাজ কায়েম করা।
(তিন) জাকাত প্রদান করা।
(চার) হজ সম্পাদন করা।
(পাচ) রমজানের রোজা রাখা। (বুখারি, মুসলিম)
লক্ষ্যণীয় যে, উক্ত হাদিসে জাকাতকে আল্লাহর নবী ৩য় স্তম্ভ বলে ঘোষণা করেছেন। তাই জাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এর উপকারিতা বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়।
পবিত্র কোরআনের প্রায় জায়গাতেই নামাজের পাশাপাশি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাকাত প্রদানের নির্দেশ দিয়ে নামাজের মতই গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, নামাজ কায়েম করা ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। আর জাকাত আদায় করা কেবল ধনীদের জন্য ফরজ। এছাড়া নামাজের হুকুম দৈনিক পাঁচ বার পালনীয়। আর জাকাত প্রতি বছর মাত্র একবার আদায় করা কর্তব্য।
বস্তুত: নামাজ হচ্ছে ইবাদতে বদনি বা শারীরিক এবাদত, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। আর জাকাত হচ্ছে, ইবাদতে মালী বা আর্থিক ইবাদত। যা সাধারণত: অর্থ ও সম্পদ ব্যয় ও দানের মাধ্যমে আদায় করতে হয়।
জাকাত প্রদানের নির্দেশ অবশ্য প্রতিপালনীয় হওয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনুল কারিমে অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। বিশেষত; নামাজের নির্দেশের পরপরই জাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন।
তাই জাকাতের গুরুত্বকে কোনোক্রমেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আবশ্যিক বা বাধ্যতামূলক দানসমূহের মধ্যে জাকাতই হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাপকদের অভাব পূরণে প্রধানতম সহায়ক দান।
তাই এখানে জাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত, এবং জাকাত আদায় না করার পরিণতি সম্পর্কে সামান্য আলোচনা করা হবে।
নামাজের পাশাপাশি জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنْفُسِكُمْ مِنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِنْدَ اللهِ
অর্থ: ‘আর তোমরা নামাজ কায়েম করো ও জাকাত দাও। এবং নিজেদের জন্য তোমরা যে সৎকর্ম অগ্রে প্রেরণ করবে তাই তোমরা আল্লাহর নিকট পাবে।’ (সূরা বাকারা: ১১০)
জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীকে বলেন:
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا
অর্থ: ‘তুমি তাদের সম্পদ হতে সাদাকাহ অর্থাৎ জাকাত গ্রহণ করো। যা দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র করবে।’ (সূরা তাওবা: ১০৩)
জাকাত ও ওশর গ্রহণ এবং উত্তম বস্তু ব্যয়ের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন:
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের উপার্জন থেকে এবং আমি যা তোমদের জন্য ভূমি হতে উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর এবং তা থেকে নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে মনস্থ করো না, কেননা তা তোমরা কখনো গ্রহণ করবে না, তবে যদি তোমরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নাও। জেনে রেখো, আল্লাহ অভাব মুক্ত, প্রশংসিত।’ (সূরা বাকারা: ২৬৭)
জাকাত ফরজ হওয়া সম্বন্ধে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তাকে যখন খলীফা আবু বকর (রা.) বাহরাইনের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে পাঠাচ্ছিলেন, তখন তাকে এ নির্দেশনামাটি লিখে দিয়েছিলেন।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এটা ফরজ সাদকা বা জাকাত যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের প্রতি ফরজ করে দিয়েছেন এবং যার নির্দেশ মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে দিয়েছেন। যে কোনো মুসলমানের নিকট এটা নির্দিষ্ট নিয়মে চাওয়া হবে, সে যেন তা দিয়ে দেয়। আর যার নিকট এর অধিক চাওয়া হবে সে যেন না দেয়। (বুখারি)
একই বিষয়ে অপর হাদিসে আল্লাহর নবী (সা.) বলেন:
ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়ায বিন জাবালকে ইয়েমেনের উদ্দেশ্যে পাঠানোর সময় বললেন, ‘তুমি আহলে কিতাবদের নিকট যাচ্ছো। প্রথমে তাদেরকে এই সাক্ষ্য দিতে আহ্বান জানাবে- আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।
যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। অত:পর তারা যদি এটাও মেনে নেয়, তখন তাদেরকে বলবে যে, আল্লাহ তাদের ওপর সাদাকা বা জাকাত ফরজ করেছেন, যা তাদের ধনীদের নিকট হতে গ্রহণ করে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করা হবে।
যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তবে সাবধান! জাকাত গ্রহণের সময় তুমি বেছে বেছে তাদের শুধু উত্তম জিনিসসমূহ নিবে না। আর বেঁচে থাকবে মাযলুমের দোয়া হতে। কেননা মাযলুমের বদ দোয়া এবং আল্লাহর মধ্যে কোনো আড়াল নেই। (বুখারি)
বাধ্যতামূলক দান সমূহের মধ্যে জাকাত বা ওশর প্রদানের হুকুম যে অবশ্য পালনীয়, তার প্রমাণে মহান আল্লাহর পবিত্র কোরআন মাজিদের পাশাপাশি উপরের দুটি হাদিসেও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।
পবিত্র কোরআনের ৩৪ স্থানে নামাজের পাশাপাশি জাকাত প্রদানের হুকুম দেয়া হয়েছে:
وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু কর।’ (সূরা বাক্বারা, আয়াত- ৪৩)।
ফলে জাকাত ফরজ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
জাকাত পরিশোধ না করার পরিণামে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَاَلَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ
‘আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পূঞ্জীভূত করে এবং উহা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন স্বর্ণ ও রৌপ্য জাহান্নামের অগ্নিতে উহা উত্তপ্ত করা হবে এবং উহা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেয়া হবে। সেদিন বলা হবে, ইহাই উহা যাহা তোমরা নিজেদের জন্য পূঞ্জীভূত করতে। সূতরাং তোমরা যাহা পূঞ্জীভূত করেছিলে তাহা আস্বাদন কর।’ (সূরা তওবা-৩৪-৩৫)
যাদের ওপর জাকাত ফরজ:
নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক সকল মুসলিম নর-নারীর ওপর জাকাত প্রদান করা ফরজ। কোনো ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর চাঁদের হিসাবে পরিপূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হলে তার ওপর পূর্ববর্তী বছরের জাকাত প্রদান করা ফরজ। অবশ্য যদি কোনো ব্যক্তি জাকাতের নিসাবের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ঋণগ্রস্ত হয়, তবে ঋণ বাদ দিয়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপর জাকাত ফরজ হবে। জাকাত ফরজ হওয়ার পর যদি কোনো ব্যক্তি জাকাত প্রদান না করে অর্থ-সম্পদ খরচ করে ফেলে তাহলেও তার পূর্বের জাকাত দিতে হবে।
জাকাতের নিসাব:
রূপা ৫৯৫ গ্রাম (৫২.৫০ভরি) কিংবা স্বর্ণ ৮৫ গ্রাম (৭.৫০ ভরি) অথবা স্বর্ণ বা রুপা যে কোনো একটির নিসাবের মূল্য পরিমাণ অর্থ-সম্পদ বা ব্যবসায়িক সামগ্রীকে জাকাতের নিসাব বলে।
কোন ব্যক্তির মৌলিক প্রয়োজন পূরণের পর যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ তার মালিকানায় থাকে এবং চন্দ্র মাসের হিসাবে এক বৎসর তার মালিকানায় স্থায়ী থাকে তাহলে তার ওপর এ সম্পদ থেকে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ জাকাত রুপে প্রদান করা ফরজ। মনে রাখতে হবে বছরের শুরু ও শেষে এ নিসাব বিদ্যমান থাকা জরুরি। বছরের মাঝখানে এ নিসাব পূর্ণ না থাকলেও জাকাত প্রদান করতে হবে। সম্পদের প্রত্যেকটি অংশের ওপর এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয় বরং শুধু নিসাব পরিমাণের ওপর বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত। অতএব, বছরের শুরুতে শুধু নিসাব পরিমাণ অর্থ-সম্পদ থাকলেও বছরের শেষে যদি সম্পদের পরিমাণ বেশি হয় তাহলে ওই বেশি পরিমাণের ওপর জাকাত প্রদান করতে হবে। বছরের যে কোনো অংশে অধিক সম্পদ যোগ হলে তা পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়। জাকাত ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে মূল নিসাবের ওপর বছর অতিক্রম করা শর্ত। জাকাত, জাকাতুল ফিতর, কোরবানী এবং হজ এ সকল শরীয়তের বিধান সম্পদের মালিকানার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
জাকাত বহির্ভুত সম্পদ:
জমি, বাড়ী-ঘর, দালান, দোকানঘর, কারখানা, কারখানার যন্ত্রপাতি, কলকব্জা, যন্ত্রাংশ, কাজের যন্ত্র, হাতিয়ার, অফিসের আসবাবপত্র ও সরঞ্জাম, যানবাহনের গাড়ী, নৌকা, লঞ্চ , জাহাজ, বিমান ইত্যাদি, যানবাহন বা চলাচলের অথবা চাষাবাদের পশু, ব্যবহারিক গাড়ী, ব্যবহারিক কাপড়-চোপড়, ঘরের আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি, নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যবহার্য সামগ্রী, গৃহ-পালিত পাখি, হাঁস-মুরগী ইত্যাদির জাকাত হয় না। ঋণ পরিশোধের জন্য জমাকৃত অর্থের উপর জাকাত হয় না। শস্য ও গবাদি পশুর জাকাত পরিশোধ করার পর ওই শস্য বা গবাদি পশু বিক্রিকরে নগদ অর্থ প্রাপ্ত হলে ওই প্রাপ্ত অর্থের ওপর একই বছরে জাকাত দিতে হবে না। কারণ একই সম্পদের একই বছরে দুইবার জাকাত হয় না।
যে সকল সম্পদের জাকাত ফরজ:
(এক) স্বর্ণ-রূপা ও নগদ অর্থ।
(দুই) বানিজ্যিক পণ্য।
(তিন) মাঠে বিচরণকারী গবাদি পশু।
(চার) শস্য ও ফলমূল।
স্বর্ণ ও রুপার জাকাত:
যদি কারো নিকট ৮৫ গ্রাম বা ৭.৫০ ভরি (১ভরি=১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণ অথবা ৫৯৫ গ্রাম (৫২.৫০ ভরি) রূপা থাকে তাহলে তার ওপর জাকাত ফরজ। স্বর্ণ-রুপা চাকা হোক বা অলংকার, ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত, স্বর্ণ বা রৌপ্যনির্মিত যে কোনো বস্তু, সর্বাবস্থায় স্বর্ণ-রূপার জাকাত ফরজ। হীরা, ডায়মন্ড, হোয়াইট গোল্ড, প্লাটিনাম প্রভৃতি মূল্যবান ধাতু যদি সম্পদ হিসাবে বা টাকা আটকানোর উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়, তাহলে বাজার মূল্য হিসাবে তার জাকাত দিতে হবে। অলংকারসহ সকল প্রকার স্বর্ণ-রূপার জাকাত দিতে হবে।
নগদ অর্থের জাকাত:
নগদ অর্থ, টাকা-পয়সা, ব্যাংকে জমা, পোষ্টাল সেভিংস, বৈদেশিক মূদ্রা (নগদ, এফসি একাউন্ট, টিসি, ওয়েজ আর্নার বন্ড), কোম্পানির শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, ঋণপত্র বা ডিবোর, বন্ড, সঞ্চয়পত্র, জমাকৃত মালামাল (রাখী মাল), প্রাইজবন্ড, বীমা পলিসি (জমাকৃত কিস্তি), কো-অপারেটিভ বা সমিতির শেয়ার বা জমা, পোষ্টাল সেভিংস সার্টিফিকেট, ডিপোজিট পেনশন স্কীম কিংবা নিরাপত্তামূলক তহবিলে জমাকৃত অর্থের জাকাত প্রতি বছর যথা নিয়মে প্রযোজ্য হবে। প্রতিষ্ঠানের রীতি অনুযায়ী বাধ্যতামুলকভাবে চাকুরীজীবির বেতনের একটি অংশ নির্দ্দিষ্ট হারে কর্তণ করে ভবিষ্য তহবিলে জমা করা হলে ওই অর্থের ওপর জাকাত ধার্য হবে না, কারণ ওই অর্থের ওপর চাকুরীজীবির কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভবিষ্যৎ তহবিলের অর্থ ফেরৎ পাওয়ার পর জাকাতের আওতাভুক্ত হবে। ঐচ্ছিকভাবে (অপ্শনাল) ভবিষ্যৎ তহবিলে বেতনের একটা অংশ জমা করা হলে তার ওপর জাকাত প্রযোজ্য হবে অথবা বাধ্যতামূলক হারের চাইতে বেশি হারে এই তহবিলে বেতনের একটা অংশ জমা করা হলে ওই অতিরিক্ত জমা অর্থের ওপর বছরান্তে জাকাত প্রযোজ্য হবে। চাকুরীজীবির অন্যান্য সম্পদের সঙ্গে এই অর্থ যোগ হয়ে নিসাব পূর্ণ হলে জাকাত প্রদান করতে হবে। পেনশনের টাকাও হাতে পেলে জাকাত হিসাবে আসবে। মানড়বত, কাফ্ফারা, স্ত্রীর মহরের জমাকৃত টাকা, হজ ও কোরবানীর জন্য জমাকৃত টাকার ওপরেও বছরান্তে যথানিয়মে জাকাত দিতে হবে। ব্যাংক জমা বা সিকিউরিটির (ঋণপত্র বা ডিবোর, বন্ড, সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি) ওপর অর্জিত সুদ ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ উপার্জন নয় বিধায় জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যোগ করা যাবে না। অর্জিত সুদ কোনো জনহিতকর কাজে ব্যয় করতে হবে। তবে মূল জমাকৃত অর্থের বা সিকিউরিটির ক্রয় মূল্যের ওপর জাকাত প্রদান করতে হবে। ব্যাংক জমার ওপর বৈধ মুনাফা প্রদান করা হলে ওই মুনাফা মূল জমার সঙ্গে যুক্ত করে জাকাতযোগ্য অন্যান্য সম্পত্তির সঙ্গে যোগ করতে হবে।
বৈদেশিক মুদ্রার ওপর জাকাত:
জাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হলে মালিকানাধীন সকল বৈদেশিক মুদ্রার নগদ, ব্যাংকে জমা, টিসি, বন্ড, সিকিউরিটি ইত্যাদি জাকাত প্রদানকারী ব্যক্তির বসবাসের দেশের মুদ্রাবাজারে বিদ্যমান বিনিময় হারে মূল্য নির্ধারণ করে অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যোগ করে জাকাত প্রদান করতে হবে।
মোহরাণার অর্থের ওপর জাকাত:
মোহরাণার বিধানের মাধ্যমে ইসলাম নারীদের জন্য এক অনন্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। কনে, বরের সঙ্গে তার বিবাহবন্ধনে স্বীকৃতির সম্মানীস্বরূপ, বরের কাছ থেকে মোহরাণা পেয়ে থাকে। মোহরাণা বাবদ প্রাপ্ত জমাকৃত অর্থের ওপর জাকাত ধার্য হবে। মোহরাণার অর্থ নিসাব মাত্রার হলে অথবা অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যোগ হয়ে নিসাব পূর্ণ হলে জাকাত প্রদান করতে হবে। মোহরাণার যে অর্থ আদায় করা হয়নি তার ওপর জাকাত ধার্য হবে না, কারণ এই অর্থ তার আওতাধীনে নাই। প্রচলিত মুদ্রায় (টাকায়) ধার্যকৃত মোহরাণা বিয়ের সময় সঙ্গে সঙ্গে পরিশোধ না করে, বিলম্বে প্রদান করা হলে তা আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়। বর্তমানকালে বিদ্যমান মুদ্রার ক্রমবর্ধমান মূল্যহ্রাসের ফলে এই পাওনা পরবর্তীতে যখন পরিশোধ করা হয়, তখন মোহরাণার বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থ একান্ত নগণ্য বা তুচ্ছ পরিমাণ হয়ে যায়। শরীয়াহ বিশারদগণ এই সমস্যার সমাধানে দৃঢ় মত পোষণ করেন যে, প্রচলিত মূদ্রার পরিবর্তে স্বর্ণ বা রৌপ্যের পরিমাণের ভিত্তিতে মোহরাণা নির্ধারণ করা উচিত, যাতে করে বিবাহিত নারীদের এই অধিকার যথার্থভাবে সংরক্ষিত থাকে এবং পরবর্তীকালে প্রচলিত মুদ্রার মূল্যহ্রাসজনিত কারণে তাদের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
শেয়ার:
যৌথ মূলধনী কোম্পানির মোট মূলধনকে সমমূল্য বিশিষ্ট বহুসংখ্যক ক্ষুদ্রাংশে বিভক্ত করা হয়। এরূপ ক্ষুদ্রাংশগুলোকে শেয়ার বলে। শেয়ার মালিককে কোম্পানির নিট সম্পত্তির একজন অংশীদার হিসাবে গণ্য করা হয়। শেয়ার ক্রয়ের উদ্দেশ্য বৃহৎ কোম্পানির ব্যবসায় বিনিয়োগ, কোম্পানির আংশিক মালিকানা অর্জন এবং লভ্যাংশ বা মুনাফা উপার্জন করা। ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ যেমন-
অসামাজিক বা অনৈতিক ব্যবসায়ে লিপ্ত, নিষিদ্ধ পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয় বা সুদী কারবার ও দৈবনির্ভর লেনদেনে নিয়োজিত কোম্পানির শেয়ার ক্রয় বৈধ নয়। কোম্পানি নিজেই যদি শেয়ারের ওপর জাকাত প্রদান করে তা হলে শেয়ারমালিককে তার মালিকানাধীন শেয়ারের ওপর জাকাত দিতে হবে না। কোম্পানি জাকাত প্রদান করতে পারবে যদি কোম্পানির উপ-বিধিতে এর উল্লেখ থাকে অথবা কোম্পানির সাধারণ সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় অথবা শেয়ারমালিকগণ কোম্পানিকে জাকাত প্রদানের ক্ষমতা প্রদান করেন।
কোম্পানি নিজে তার শেয়ারের ওপর জাকাত প্রদান না করলে শেয়ার মালিককে নিম্নোক্ত উপায়ে জাকাত প্রদান করতে হবে:
(১) শেয়ারমালিক যদি শেয়ারগুলো বার্ষিক লভ্যাংশ অর্জনের কাজে বিনিয়োগ করে, তা হলে জাকাতের পরিমাণ নিম্নোক্ত উপায়ে নির্ণয় করা হবে:
(ক) শেয়ারমালিক যদি কোম্পানির হিসাবপত্র যাচাই করে তার মালিকানাধীন শেয়ারের বিপরীতে জাকাতযোগ্য সম্পদের পরিমাণ জানতে পারেন, তাহলে তিনি ২.৫% হারে জাকাত প্রদান করবেন।
(খ) কোম্পানির হিসাবপত্র সম্পর্কে যদি তার কোনো ধারনা না থাকে তাহলে তিনি তার মালিকানাধীন শেয়ারের ওপর বার্ষিক অর্জিত মুনাফা জাকাতের জন্য বিবেচ্য অন্যান্য সম্পত্তির মূল্যের সঙ্গে যোগ করবেন এবং মোট মূল্য নিসাব পরিমাণ হলে ২.৫% হারে জাকাত প্রদান করবেন।
(২) শেয়ার মালিক যদি শেয়ার বেচা-কেনার ব্যবসা (মূলধনীয় মুনাফা) করার জন্য শেয়ারগুলো ব্যবহার করেন তা হলে যেদিন জাকাত প্রদানের ইচ্ছা হবে, শেয়ারের সেদিনের বাজার মূল্য ও ক্রয়-মূল্যের মধ্যে যেটি কম তারই ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে ২.৫% হারে জাকাত প্রদান করবেন। একজন শেয়ার মালিক ইচ্ছে করলে যে কোনো সময় শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারেন। কোম্পানির শেয়ার ক্রয় ও বিক্রয়ের এই স্বাধীনতা শেয়ার বাজারকে এমন পরিণতির দিকে নিয়ে যায় যে, কিছু ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে শেয়ারের মূল্য বাড়িয়ে বা কমিয়ে একটি সাধারণ ব্যবসা কার্যক্রমকে প্রায় জুয়াখেলায় পরিণত করে। ইহা ইসলামী শরীয়ার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অবৈধ।
বানিজ্যিক সম্পদের জাকাত:
ব্যবসার নিয়তে (পুনঃবিক্রয়ের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ মুনাফা অর্জনের জন্য) ক্রয়কৃত, আমদানী-রপ্তানী পণ্য, ট্র্যানজিট বা পরিবহন পণ্য, বিক্রয় প্রতিনিধির (এজেন্ট) কাছে রাখা পণ্যদ্রব্য ও মজুদ মালামালকে ব্যবসার পণ্য বলে। ব্যবসার পণ্যের ওপর সর্বসম্মতভাবে জাকাত ফরজ। এমনকি ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জমি, দালান বা যে কোনো বস্তু অথবা মালামালের মূল্যের ওপরও জাকাত প্রদান করতে হবে। বাকী বিক্রির পাওনা, এলসি মার্জিন ও আনুষঙ্গিক খরচ, ব্যবসার নগদ অর্থসহ অন্যান্য চলতি সম্পদ জাকাতের হিসাবে আনতে হবে। অন্যদিকে ব্যবসার দেনা যেমন বাকীতে মালামাল বা কাঁচামাল ক্রয় করলে কিংবা বেতন, মজুরী, ভাড়া, বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও গ্যাস বিল, কর ইত্যাদি পরিশোধিত না থাকলে উক্ত পরিমাণ অর্থ জাকাত যোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে। জাকাত নির্ধারণের জন্য বিক্রেতা তার
পণ্যের ক্রয়-খরচ মূল্যকে (ক্রয়মূল্যের সঙ্গে ভাড়া সহ ক্রয়-সংক্রান্ত অন্যান্য খরচ যোগ করে) হিসাবে ধরবেন। ‘আল্লাহ তায়ালা ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সূরা বাক্বারা,আয়াত-২৭৫) উৎপাদিত পণ্য তৈরি বা উৎপাদিত পণ্য, উপজাত দ্রব্য, পঙক্রিয়াধীন পণ্য, উৎপাদন পঙক্রিয়ায় ব্যবহৃত কাঁচামাল ও প্যাকিং সামগ্রী ইত্যাদি জাকাতের আওতাভুক্ত হবে। জাকাত নির্ধারণের জন্য তৈরি বা উৎপাদিত পণ্যের মূল্যায়ন উৎপাদন খরচ মূল্যের অথবা পাইকারী বাজার দরের ভিত্তিতে হবে। পঙক্রিয়াধীন বা অসম্পূর্ণ পণ্যের মূল্যায়ন ব্যবহৃত কাঁচামাল ও অন্যান্য উপাদানের খরচের ভিত্তিতে করতে হবে। মজুদ কাঁচামাল এবং উৎপাদন পঙক্রিয়ায় কাঁচামালের সঙ্গে ব্যবহৃত প্যাকিং সামগ্রী ক্রয়- খরচ মূল্যের ভিত্তিতে হিসাব হবে এবং জাকাতের আওতাধীন পণ্যদ্রব্যসহ ব্যবসার নগদ অর্থ ও অন্যান্য চলতি সম্পত্তির সঙ্গে যোগ করে জাকাত নির্ধারণ করতে হবে। উৎপাদন পঙক্রিয়ায় নিয়োজিত স্থায়ী সম্পদ যেমন- জমি, দালান, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, যানবাহন ইত্যাদির ওপর জাকাত প্রযোজ্য হবে না।
স্থায়ী সম্পত্তির জাকাত:
স্থায়ী সম্পত্তি বলতে বুঝায় জমি, দালানকোঠা, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, যানবাহন ইত্যাদি।
(ক) বসবাস, ব্যবহার, উৎপাদন কাজে বা কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত স্থায়ী সম্পত্তির উপর জাকাত ধার্য হয় না।
(খ) আয় উপার্জনের জন্য ভাড়ায় নিয়োজিত স্থায়ী সম্পত্তি যেমন- গৃহ, দোকান, দালানকোঠা, জমি, যন্ত্রপাতি, গাড়ি, যানবাহন ইত্যাদির ওপর জাকাত ধার্য হয় না। তবে এসব সম্পত্তি থেকে ভাড়া বাবদ অর্জিত নিট আয় অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পত্তির সঙ্গে যোগ করে ২.৫% হারে জাকাত প্রদান করতে হবে।
(গ) বেচা-কেনার উদ্দেশ্যে নিয়োজিত স্থায়ী সম্পত্তি যেমন- জমি, গৃহ, দোকান, এপার্টমেন্ট, দালানকোঠা, আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, গাড়ি, যানবাহন ইত্যাদি ব্যবসায়িক পণ্য বলে গণ্য করা হবে এবং এগুলোর মূল্যের ওপর জাকাত ধার্য হবে।
ঋণদাতার ওপর জাকাত:
(ক) আদায়যোগ্য ঋণ আদায় হওয়ার পর অন্যান্য জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যোগ করে জাকাত প্রদান করতে হবে।
(১) যে ঋণ নগদে বা কোনো দ্রব্যের বিনিময়ে কারো কাছে পাওনা হয়, এরূপ ঋণ আদায় হওয়ার পর জাকাত দিতে হবে, এবং বিগত বৎসরসমূহেরও জাকাত প্রদান করতে হবে।
(২) যে পাওনা কোনো দ্রব্য বা নগদ ঋণের বিপরীতে নয়, যেমন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অস্থাবর সম্পদ, দান, অছিয়ত, মোহরাণার অর্থ ইত্যাদি বাবদ প্রাপ্ত হয়। এরূপ ক্ষেত্রে আদায়ের পর জাকাত ধার্য হবে। এগুলোর ওপর বিগত বৎসরসমূহের জাকাত প্রদান করতে হবে না।
(খ) আদায় অযোগ্য বা আদায় হবার ব্যাপারে সন্দেহ থাকলে সে ঋণ জাকাতের হিসাবে আসবে না। যদি কখনো উক্ত ঋণের টাকা আদায় হয়, তবে কেবলমাত্র এক বছরের জন্য উহার জাকাত দিতে হবে।
ঋণগ্রহিতার উপর জাকাত:
(ক) ঋণগ্রহিতার ঋণের টাকা মোট জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে। কিন্তু যদি ঋণগ্রহিতার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্থায়ী সম্পত্তি (যেমন-অতিরিক্ত বাড়ী, দালান, এপার্টমেন্ট, জমি, মেশিনারী, যানবাহন, গাড়ী ও আসবাবপত্র ইত্যাদি) থাকে যাহা দ্বারা এরূপ ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম, তবে উক্ত ঋণ জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে না।
(খ) স্থাবর সম্পদের ওপর কিস্তিভিত্তিক ঋণ (যেমন-হাউজিং লোন ইত্যাদি) জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে না। তবে বার্ষিক কিস্তির টাকা অপরিশোধিত থাকলে তা জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে।
(গ) ব্যবসায়ে বিনিয়োগের জন্য ঋণ নেয়া হলে উক্ত ঋণের টাকা জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে। কিন্তু যদি ঋণগ্রহিতার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্থায়ী সম্পত্তি থাকে তবে উক্ত ঋণ জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে না।
(ঘ) শিল্প-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঋণের টাকা জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে। তবে যদি ঋণগ্রহিতার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্থায়ী সম্পত্তি থেকে উক্ত ঋণ পরিশোধ করা যায় তবে তা জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে না।
(ঙ) যদি অতিরিক্ত স্থায়ী সম্পত্তির মূল্য ঋণের পরিমাণের চেয়ে কম হয়, তবে ঋণের পরিমাণ থেকে তা বাদ দিয়ে বাকী ঋণের টাকা জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে। বিলম্বে প্রদেয় বা পুণ:তপসিলিকৃত ঋণের বেলায় শুধুমাত্র ঋণের বার্ষিক অপরিশোধিত কিস্তি জাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে বাদ যাবে।
পশুর জাকাত:
উটের সর্বনিম্ন নিসাব পাঁচটি, গরু-মহিষের ত্রিশটি এবং ছাগল-ভেড়ার চল্লিশটি। তবে এ ধরণের পশু বৎসরের অর্ধেকের বেশি সময় মুক্তভাবে চারণভূমিতে খাদ্য গ্রহণ করলেই এসব পশুর ওপর সংখ্যা ভিত্তিক জাকাত ধার্য হবে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যে কোনো পশুসম্পদ প্রতিপালন করা হলে সেগুলোকে ব্যবসায়িক পণ্য বলে গণ্য করা হবে এবং এদের ওপর জাকাত সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, মূল্যের ভিত্তিতে ধার্য হবে। ব্যবসার উদ্দেশ্যে খামারে পালিত মৎস্য, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল ইত্যাদি এবং খামারে উৎপাদিত দুধ, ডিম, ফুটানো বাচ্চা, মাছের রেণু, পোনা ইত্যাদি ব্যবসার সম্পদ হিসাবে জাকাত প্রদান করতে হবে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) পানিতে বাস করা অবস্থায় মাছ ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। মাছ যখন বিক্রির জন্য ধরা হবে তখনই এর জাকাত পরিশোধ করতে হবে।
শস্য ও ফলের জাকাত (উশর):
শস্য ও ফলমূলের জাকাতকে উশর বলে। জমি থেকে উৎপন্ন সকল প্রকার শস্য, শাকশব্জি, তরি-তরকারি ও ফলের ওপর জাকাত প্রযোজ্য। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ করা হলে বনজ বৃক্ষ, ঘাস, নলখাগড়া, ওষুধি বৃক্ষ, চা বাগান, রাবার চাষ, তুলা, আগর, ফুল, অর্কিড, বীজ, চারা, কলম ইত্যাদি জাকাতের আওতাভুক্ত হবে। ফসল আসার সঙ্গে সঙ্গে উশর পরিশোধ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার প্রয়োজন নাই। বৎসরে একাধিকবার ফসল আসলে একাধিকবার উশর পরিশোধ করতে হবে। অনেক ধরনের ফল, ফসল ও শাকশব্জি একই সঙ্গে কাটা বা উত্তোলন করা যায় না। যেমন- মরিচ, বেগুন, পেঁপে, লেবু, কাঁঠাল ইত্যাদির পরিপক্কতা বুঝে কিছু কিছু করে কয়েকদিন পর পর পুরো কৃষি মৌসুমে বার বার উত্তোলন করা হয়। ফসলের মালিক যদি ফসলের আনুমানিক পরিমাণ নিরূপণ করতে সমর্থ হন এবং তা যদি নিসাব পরিমাণ হয় তবে প্রথম থেকেই প্রতি উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে উশর (জাকাত) পরিশোধ করবেন। যদি মালিকের পক্ষে ফল-ফসলের পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব না হয়, তবে তিনি প্রথম উত্তোলন থেকে ফসলের হিসাব রাখবেন এবং যখনি মোট উত্তোলিত ফসলের পরিমাণ নিসাব পরিমাণে পৌঁছবে তখনি ওই দিন পর্যন্ত মোট উত্তোলিত ফসলের জাকাত পরিশোধ করবেন এবং তৎপরবর্তী প্রতি উত্তোলনের সঙ্গে সঙ্গে জাকাত পরিশোধ করবেন। জ্বালানি কাঠ, আসবাবপত্র ও গৃহনির্মাণে ব্যবহার উপযোগী বৃক্ষের ক্ষেত্রে, এরূপ বৃক্ষ যখন কাটা হবে তখন এগুলোর ওপর জাকাত প্রযোজ্য হবে, তা যত দীর্ঘ সময় পর কাটা হউক না কেন। যে জমিতে সেচ প্রয়োজন হয় না, প্রাকৃতিকভাবে সিক্ত হয়, তার ফসলের জাকাত হবে দশ ভাগের একভাগ (১০%) আর যে জমিতে সেচের প্রয়োজন হয়, তার ফসলের জাকাত হবে বিশ ভাগের একভাগ (৫%)। ফসল উৎপাদনের ব্যয় যেমন- চাষ, সার, কীটনাশক, বপন ও কর্তণ ইত্যাদি খরচ উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ থেকে বাদ যাবে, তবে এ সব খরচ মোট উৎপাদিত ফসলের এক তৃতীয়াংশের বেশি বাদ যাবে না। ফসলের নিসাবের পরিমাণ ৫ ওয়াস্ক বা ৬৫৩ কিলোগ্রাম। অনেক কৃষি ফসল আছে যা মাপা বা ওজন করা হয় না। যেমন বিভিন্ন ধরনের ফল, ফসল, শাকশব্জি, ফুল, অর্কিড, চারা, বৃক্ষ ইত্যাদি। এগুলোর নিসাব নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশের সাধারণ ফসল চাল বা গমের ৬৫৩ কেজির মূল্য (স্থানীয় বাজারে গড় মূল্য) নিসাব হিসাবে গণ্য করা যাবে।
নিয়ত:
নিয়ত জাকাতের একটি গুরুত্ব রোকন। জাকাতের অংশ মূল সম্পদ হতে বের করার সময় নিয়ত অবশ্য করতে হবে। এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হতে হবে।
জাকাত আদায় করার সময়:
নিসাবের মালিক হওয়ার পর এক বৎসর অতিবাহিত হলেই সঙ্গে সঙ্গে জাকাত ওয়াজিব হয়। বিলম্ব করা জায়েয নাই। তবে বর্ষপূর্তির পূর্বে আদায় করা জায়েয। জাকাত প্রদানের খাত-
(১) ‘নিঃস্ব,
(২) অভাবগ্রস্ত ও
(৩) তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য,
(৪) যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য,
(৫) দাসমুক্তির জন্য,
(৬) ঋণ ভারাক্রান্তদের,
(৭) আল্লাহর পথে ও
(৮) মুসাফিরের জন্য ।’ (সূরা তওবা, আয়াত-৬০)
অসহায় এতিম, গরীব, মিসকীন, আশ্রয়হীন, গরীব বাস্তুহারা, দরিদ্র শিক্ষার্থী প্রভৃতি দুঃখী জনগোষ্ঠি জাকাতের প্রকৃত হকদার। ইহাদের মধ্যে গরীব আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশী অধিক হকদার। কর্মঠ গরীবদেরকে আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায়। দ্বীনের প্রসারে ও দ্বীনী শিক্ষার বিস্তারে জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায়। যথার্থ কারণে ঋণগ্রস্ত এবং ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়লে তাদের ঋণ মুক্তির জন্য জাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করা যায়। সফরকারী যদি আর্থিক অসুবিধায় পতিত হয়, তবে তাকে জাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করা যায়, যদিও তার বাড়ীর অবস্থা ভালো হয়। নও-মুসলিমকে পুনর্বাসনের জন্য জাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করা যায়। জাকাত এমন লোককেই দিতে হবে যারা জাকাত নিতে পারে।
যাদের জাকাত দেয়া যাবে না:
ধনী ব্যক্তির জন্য জাকাত খাওয়া বা ধনী ব্যক্তিকে জাকাত দেয়া জায়েয নয়। আপন দরিদ্র পিতা-মাতা, দাদা-দাদী তথা ঊর্ধ্বস্থ সকল নারী-পুরুষ, অনুরূপ ভরণ- পোষণে নির্ভরশীল পুত্র-কন্যা এবং স্বামী স্ত্রীকে জাকাত প্রদান করা জায়েয নাই। জাকাত বহির্ভুত সম্পদের দ্বারা তাহাদের ভরণ-পোষণ করা ওয়াজিব।
অনুরূপ মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রকৃত বংশধরদের সম্মান ও মর্যাদার কারণে জাকাতের অর্থ দ্বারা সাহায্য করা জায়েয নয়। একমাত্র দানের অর্থ দ্বারাই তাদের খেদমত করা জরুরি। মসজিদ, মাদরাসা, রাস্তা-ঘাট ইত্যাদি নির্মাণের জন্য জাকাতের অর্থ ব্যয় করা নিষেধ। সাধারণ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করাও জায়েয নয়। তবে আশ্রয় কেন্দ্রে দুরাবস্থা সম্পসারণ আশ্রয় প্রার্থীদের ব্যক্তি মালিকানাধীন ঘর-বাড়ী নির্মাণ করে দেয়া জায়েয। মনে রাখতে হবে জাকাত পরিশোধ হওয়ার জন্য ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেয়া শর্ত। সুতরাং জাকাতের অর্থে মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করাও জায়েয নয়। জাকাত দেয়া যেমন শরীয়তের বিধান, অনুরূপ জাকাত পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিকেই জাকাত দেয়া শরীয়তের বিধান। সঠিক পাত্রে জাকাত প্রদান না করলে জাকাত পরিশোধ হবে না।
সামাজিক কল্যাণে জাকাত:
ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে জাকাত অর্থনৈতিক স্তম্ভ। ইসলামে জাকাত ব্যবস্থা সমাজের দারিদ্র্য ও দুঃখ-কষ্ট দূর করা ও মানবতার কল্যাণ সাধন করা। ধনীদের সম্পদে গরীব ও বি তের হক রয়েছে। সঠিক হিসাব করে নিয়মিত জাকাত প্রদান করার ফলে ধনীর সম্পদের ওপর গরীবের হক পরিশোধ হয়। ফলে সম্পদ পরিশুদ্ধ ও হিফাযত হয়, জাকাতদাতার মনকে লোভ থেকে পবিত্র করে এবং দান ও ত্যাগ স্বীকারে অভ্যস্থ হতে সাহায্য করে। জাকাত প্রদানকারীর জন্য রয়েছে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট হতে অগণিত পার্থিব ও পারলৌকিক কল্যাণ। জাকাতের উপকারভোগী সমাজের দূঃখী-দরিদ্র জনগোষ্ঠি। জাকাতের অর্থে সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠির অভাব পূরণে সহায়তা করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস পায় এবং সমাজে ধনী- দরিদ্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহানুভূতির গুণাবলী বৃদ্ধি পায়।
দান-খয়রাত:
সম্পদ উপার্জনের লক্ষ্য দুনিয়ার ও আখিরাতের শান্তি লাভ করা। উপার্জনকারী নিজের প্রয়োজন পূরণের পর তার নিকট যে সম্পদ অবশিষ্ট থাকে, তা সমাজের অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার বিধান রয়েছে। তাই জাকাত ছাড়াও সম্পদ হতে স্বীয় আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, এতিম, মিসকিন ও সাহায্য প্রার্থীদের এবং আল্লাহর রাস্তায় দান করতে হয়। আল্লাহ তায়ালা দানকে বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধ করেন।
জাকাত হিসাব করার পদ্ধতি:
নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক প্রত্যেক মুসলমানকে বছরান্তে জাকাত প্রদান করতে হবে। সম্পদের প্রকৃতি ও ধরণ অনুযায়ী জাকাতের হার ভিন্ন ভিন্ন হবে ।
(ক) স্বর্ণ, রৌপ্য, নগদ অর্থ, ব্যবসায়িক মালামাল, আয়, লভ্যাংশ, কাজের মাধ্যমে উপার্জন, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির ওপর জাকাত ২.৫% হারে হিসাব করতে হবে।
(খ) ফল ও ফসল উৎপাদনে যান্ত্রিক সেচ সুবিধা গ্রহণ করলে ৫% হারে জাকাত হিসাব করতে হবে।
(গ) ফল ও ফসল উৎপাদনে জমি প্রাকৃতিকভাবে সিক্ত হলে ১০% হারে জাকাত হিসাব করতে হবে।
স্বর্ণ বা রূপার নিসাবের ভিত্তিতে প্রতি চন্দ্র বছরে (৩৫৪ দিন) নিজের পূর্ণ মালের জাকাত হিসাব করে প্রথমে সম্পদ থেকে জাকাতের অংশ অর্থাৎ পূর্ণ মালের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ বা শতকরা আড়াই ভাগ বা ২.৫% পৃথক করে নিতে হবে। আর যদি হিসাবপত্র সৌর বছর অর্থ্যাৎ ৩৬৫ দিনের (যেমন ৩০ চৈত্র, ৩০ জুন বা ৩১ ডিসেম্বর) ভিত্তিতে হয় তাহলে জাকাত ধার্য হবে ২.৫৭৭% হারে। স্বর্ণের বাজার দর প্রতি গ্রাম ৪,০০০ টাকা হলে ৮৫ গ্রামের মূল্য ৩,৪০,০০০ টাকা যার ওপর জাকাত হবে ২.৫% হারে = ৮,৫০০.০০ টাকা। আর রুপার বাজার দর প্রতি গ্রাম ১৫০ টাকা হলে ৫৯৫ গ্রামের মূল্য ৮৯,২৫০ টাকা যার ওপর জাকাত হবে ২.৫% হারে = ২২৩১.২৫ টাকা। জাকাত হিসাব করার সময় এসব স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিক্রয় মূল্যের (অর্থ্যাৎ জাকাত হিসাব করার সময় বিক্রয় করতে চাইলে যে মূল্য পাওয়া যাবে) ভিত্তিতে জাকাত হিসাব করতে হবে। জাকাতের অংশ পৃথক করার সময় বা প্রদান করার সময় অবশ্যই নিয়ত করতে হবে। নচেৎ জাকাত পরিশোধ হবে না। যৌথ মালিকানার মালের জাকাত ব্যক্তিগতভাবে নিজের অন্যান্য মালের সঙ্গে দেয়া যায় আবার সম্মিলিতভাবেও শুধু যৌথ মালিকানার মাল থেকে জাকাত পরিশোধ করা যায়।
জাকাত নগদ অর্থে প্রদান করা উচিত। গরীবের কাছে নগদ অর্থই অধিকতর কল্যাণকর। কারণ নগদ অর্থের দ্বারা যে কোনো প্রয়োজন মিটানো যায়। জাকাত কোনো প্রকার দয়া বা অনুগ্রহ নয়।
মুসলিম সমাজ যদি জাকাত, সদকা প্রদানে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন করত তবে সারা বিশ্বের মুসলিম সমাজ আজকের মত দারিদ্র্যের যাতাকলে পিষ্ট হত না।
নিউজওয়ান২৪/আ.রাফি
- যে দোয়ায় গলার কাঁটা নেমে যাবে ইনশাল্লাহ!
- ফরজ নামাজের পর প্রয়োজনীয় কিছু আমল
- দরুদে ইব্রাহিম
- মা-বাবার জন্য দোয়া
- তাহিয়্যাতুল-মাসজিদ
মসজিদে ঢুকেই দু’রাকাত নামাজ... - পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি...
- দরুদে ইব্রাহিম
- কোরআন হাদিসের আলোকে জুমা’র দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- ঋণ মুক্তির সর্বোত্তম আমল
- ফজিলতপূর্ণ কিছু দোয়া ও আমলসমূহ
- পবিত্র কোরআনের তথ্যকণিকা
- জুমার দিনের ৩ আমল
- হযরত আদম আ. এর বিয়ের মহর কত ছিল!
- ফেরেশতা পরিচিতি...
- ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে’