ঢাকা, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
সর্বশেষ:

এবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার আদালত পালানো ‘ধর্ষক রুবেল’

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১২:২০, ১৫ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ১২:০২, ১৯ নভেম্বর ২০১৬

ধর্ষক রুবেল                   -ফাইল ফটো

ধর্ষক রুবেল -ফাইল ফটো

ঢাকা: আদালতে নিজেদের হেফাজত থেকে পালানো রাফসান হোসেন রুবেল ওরফে ‘ধর্ষক রুবেলকে’ ফের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে র‌্যাব গ্রেপ্তার করলেও এবার পুলিশই তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাজধানীর ‘বাড্ডার আতঙ্ক’ হিসেবে পরিচিত উত্তর বাড্ডার মিশ্রীটোলা এলাকার মফিজ উদ্দিন ওরফে মফু মিয়ার ছেলে রুবেলকে ওই বাড্ডা থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান মহানগর পুলিশ উপকমিশনার (গণমমাধ্যবম) মাসুদুর রহমান।

তিনি জানান, মঙ্গলবার ভোরে বাড্ডা এলাকা থেকে রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি পুলিশ।

গত রোববার বিকেলে ঢাকা মহানগর হাকিম সাব্বির ইয়াসির আহসান চৌধুরীর আদালতের খাস কামরা থেকে পালিয়ে যায় রাজধানীর বাড্ডায় গারো তরুণী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি রুবেল। প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের হাত থেকে বহুল আলোচিত ধর্ষণ মামলার এই আসামি পালিয়ে যাবার পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বাড্ডা থানার এসআই এমরান উল হাসান ও কনস্টেবল দীপক চন্দ্র পোদ্দারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। অবশ্য এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন সাময়িক বরখাস্ত এসআই এমরান উল হাসান।

রুবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতির প্রস্তুতি, মাদক ও অন্যান্য সন্ত্রাসী ঘটনায় বাড্ডা থানায় আটটি এবং রামপুরা থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা রয়েছে। একটি মামলায় সে সাজাপ্রাপ্ত। অভিযোগে জানা গেছে, এর আগে আরও দুটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় রুবেল। এসব কারণে অনেকেই তাকে ‘ধর্ষক রুবেল’ হিসেবে চেনে।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার
গত ২৮ অক্টোবর বাড্ডা থানায় দায়ের ধর্ষণ মামলার এক নম্বর আসামি রুবেলকে ১১ নভেম্বর বিমানবন্দর স্টেশন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় র‌্যাব। মামলা সূত্রে জানা গেছে, এক গারো তরুণীকে গত ২৫ অক্টোবর তার হবু স্বামীর সামনে থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে রুবেল।

‘কৌশল’টা আসলে কী!
গ্রেপ্তারের পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য রোববার রুবেলকে পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায় নেওয়া হয়। এসময় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নেওয়ার আগেই হাওয়া হয়ে যায় সে। দায়িত্বরত পুলিশ দলের দাবি ছিল সে ‘কৌশলে’ পালিয়ে গেছে।

তবে কথিত এই ‘কৌশল’ কোনো চাপ বা নগদ অর্থের বিনিময়ে তৈরি করা হয়েছিল কি না- তা জানা যায়নি। এ ঘটনায় দেশজুড়ে বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।

আরও কিছু ঘটনা
পুলিশি হেফাজত থেকে আসামি পালানো নয়া কোনো ঘটনা নয়। পুলিশও রক্তমাংসের মানুষ এবং মানুষ মাত্রেই বুল করে। তবে সাম্পতিক সময়ে বিশেষ করে ঢাকা মহানগর থেকে বেশ কিছু আসামি পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে যায়। এটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিকর সৃষ্টি করে পুলিশে দায়িত্বরত ন্যায়নিষ্ঠ আর দায়িত্ববান সদস্যদের জন্য।

সর্বশেষ ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব-পুলিশের মাঝে চলমান মনস্তত্ত্বিক দ্বৈরথে নয়া মাত্রা যোগ করে- কারণ, রুবেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের হাতে দিয়েছিল র‌্যাব। সেই আলোচিত মামলার আসামি যখন পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যায় তখন তা কী ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে তা সাবিই বোঝে- নিউজওয়ান২৪.কমকে বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এসআই।

এখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশের হাত থেকে আসামি পালানোর আরও কিছু ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে

ঘটনা-১
গত বছরের ১১ আগস্ট ঢাকার কেরানীগঞ্জে শিশু পরাগ অপহরণ মামলার মূল আসামি মোক্তার হোসেন ওরফে ল্যাংড়া আমির ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের হাজতখানা থেকে পালিয়ে যায়। আগের দিন (১০ আগস্ট) একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

ঘটনা-২
২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এ জামিন আবেদনের শুনানি চলছিল। জামিনের আবেদন করা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের হত্যা মামলার চার আসামি সেখানে উপস্থিত ছিল। কিন্তু আদালতে তাদের জামিন বাতিল ঘোষণার পর পর ৪ আসামিই পালিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত তাদের কাউকেই ফের গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জুবায়ের হত্যা মামলায় ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪।

ঘটনা-৩
দুদকের করা দুর্নীতির মামলায় আদালতে জামিন নিতে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। এটি ২০১৪ সালের ২৭ আগস্টের ঘটনা, স্থান ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হকের আদালত। জজ জামিন নামঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। কিন্তু জামিন বাতিলের খবর শুনেই কাঠগড়া থেকে পালিয়ে যান আসামি অধ্যাপক আতিয়ার রহমান ও প্রভাষক মশিউর রহমান। পরে তারা আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। আদালত তাদের কারাগারে পাঠায়।

সবশেষে ঘটলো রুবেলের ঘটনা।

নিউজওয়ান২৪.কম-এ আরও পড়ুন গারো তরুণী ধর্ষণ: প্রধান আসামি ‘বাড্ডার ত্রাস’ রুবেল গ্রেপ্তার 

কিছু পুলিশ সদস্যের ‘অবহেলা’ বা অনৈতিকতার কারণে সৃষ্ট এমন ঘটনা একদিকে সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিকভাবে হেয় করছে অপরদিকে আদালতের ভাবমূর্তিতেও ভুল ধারণা তৈরি করছে জনমনে। এটা সরকারের জন্যও নেতিবাচক আবহের তৈরি করে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাই সব মহলেরই তৎপর হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।

নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত