৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ (পর্ব-১)
শিক্ষাঙ্গন ডেস্ক
ফাইল ছবি
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিয়ো। আশা করি ভালো আছো। আজ তোমাদের জন্য থাকছে বাংলা ব্যাকরণের ওপর আলোচনা। আশা করি উপকৃত হবে।
ভাষা
ভাষা ভাব প্রকাশের মাধ্যম। পৃথিবীতে একমাত্র মানুষই হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত। তাই মানুষ তার মনোভাব অন্যের মধ্যে সঞ্চারিত করে অন্যকেও সেই চেতনার সঙ্গৗ করতে চায়। মানুষের এই চিন্তা-চেতনা প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হলো ভাষা।
ভাষা মৌখিক বা লিখিত দুভাবেই হতে পারে। কাছের মানুষকে মুখে বলে এবং দূরের মানুষকে লিখে আমরা মনের ভাব প্রকাশ করে থাকি। মানুষের মুখনিঃসৃত মনের ভাব প্রকাশক এসব কথামালাই হলো ভাষা। এটি কেবল মানুষেরই নিজস্ব সম্পদ। মানুষ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো জীব এই সম্পদের অধিকারী নয়। যেহেতু মানুষই একমাত্র মননশীল জীব, সেহেতু সে বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করে, হৃদয় দিয়ে অনুভব করে। সে জানতে চায়, জানাতে চায়। এভাবেই তার ভাবনা-চিন্তাকে অপরের কাছে প্রকাশ করার চিরায়ত আকাঙক্ষা থেকে ভাষা সৃষ্টি হয়।
গলনালি, মুখবিবর, কন্ঠ, জিহবা, তালু দন্ত, নাসিকা ইত্যাদি বাক প্রত্যঙ্গকে এক কথায় বাগযন্ত্র বলে।
>ভাষার সংজ্ঞা
মনের ভাব প্রকাশের জন্য মানুষ যে সকল অর্থপূর্ণ ধ্বনি ব্যবহার করে, তাকে ভাষা বলে।
ভাষা সম্পর্কে বিভিন্ন ভাষাবিদদের অভিমত:
ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর মতে, “মানুষের উচ্চারিত অর্থবহ বহুজনবোধ্য ধ্বনির সমষ্টি দিয়ে যে মনের ভাব প্রকাশ করে, তাকে ভাষা বলে।”
ড. সুকুমার সেন এর মতে, “মানুষের উচ্চারিত বহুজনবোধ্য ধ্বনির সমষ্টিই ভাষা।”
ড.মুহাম্মদ আব্দুল হাই এর মতে, “এক এক সমাজের সকল মানুষের উচ্চারিত অর্থবোধক ধ্বনিসমষ্টিই হলো ভাষা।”
ড.মুহাম্মদ এনামুল হক-এর মতে,“মানুষ তাহার মনের ভাব প্রকাশ করিবার জন্য কন্ঠ, জিহবা, তালু, ওষ্ঠ, দন্ত, নাসিকা, মুখবিবর প্রভৃতি বাগযন্ত্রের সাহায্যে অপরের বোধগম্য যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টির উচ্চারণ করিয়া থাকে, সেই ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে ভাষা বলে।”
ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়-এর মতে,“মনের ভাব প্রকাশের জন্যে বাগযন্ত্রে উচ্চারিত ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোনও বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।”
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর মতে,“সমাজ ও সমাজের লোকদের মধ্যে মনের মিলনের এবং ভাব আদান-প্রদানের উপায় স্বরুপ মানুষের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ যে সৃষ্টি, তা হচ্ছে তার ভাষা।”
সুতরাং বলা যায়, মানুষ নিজের মনোভাব প্রকাশ করার জন্য মুখ দিয়ে যে অর্থবোধক ধ্বনি উচ্চারণ করে, তাকে ভাষা বলে।
>ভাষার প্রয়োজনিয়তা
মানবজীবনে ভাষার প্রয়োজনিয়তা অপরিহার্য, আর এজন্য মানুষের সমাজে বসবাসের প্রয়োজন রয়েছে। ধরে নেয়া যাক, কোন এক মানব শিশুকে জন্মের পরই বনে রেখে আসা হলো। ঘটনাচক্রে সে বেঁচে গেল এবং বড় হলো, তার কথা বলার যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকা সত্ত্বেও সে কিন্তু মানুষের মতো কথা বলতে পারবে না। কেননা কাউকে ভাষা রপ্ত করতে হলে অনেক মানুষের সঙ্গে তাকে জীবন কাটাতে হবে। অর্থাৎ সমাজে বসবাস করতে হবে। ভাষা ব্যাপারটিই এমন যে, সমাজের মধ্যেই কেবল এটি চর্চা হয় এবং সমাজের মধ্যেই এর ব্যবহার সম্ভব।
>ভাব প্রকাশের মাধ্যম
বাগযন্ত্রের সাহায্যে ভাষা ব্যবহার করা ছাড়াও অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে মানুষ কখনো কখনো মনের ভাব প্রকাশ করে।
যেমন-
১. ইশারা-ইঙ্গিত:
মানুষ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সহায়তায় নানা রকম ইশারা বা ইঙ্গিত সৃষ্টি করে মনের ভাব ব্যক্ত করতে পারে। শিশু ও বোবা লোকেরা হাত, পা, চোখ ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশ করে। চোখের ইশারায়ও কখনো কখনো মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করা যায়। মুখে কথা না বলে চোখের ইশারায়ও অন্যকে ডাকা যায়।
মানুষ হাতের ইঙ্গিতে কাউকে ডাকতে পারে। আবার হাত দিয়ে কোনো কিছু নিষেধ করতে পারে। হাতের তর্জনি তুলে কাউকে সাবধান করা যায়। ট্রাফিক পুলিশ হাত নেড়ে রাস্তার জনগণ ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করেন। আমরা হাত নেড়ে হ বা না বুঝাই। মাথা নেড়েও মনের কথা বোঝাতে পারি।
আঙুলের বিশেষ ভঙ্গিতে টাকার কথা বুঝানো যায়। এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে কিংবা ইঙ্গিতে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়।তবে তার কাজ খুবই সীমিত।
২. নৃত্য:
কেউ যখন নৃত্য করে তখন তার নৃত্যের মধ্যদিয়ে কোনো না কোনো ভাবের প্রকাশ ঘটে। নাচের সময় বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির সহায়তায় সুখ, দুঃখ ছাড়াও নানা অনুভূতির সুন্দর প্রকাশ ঘটে। নাচের বিভিন্ন মুদ্রা বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে অনুভূতির সে কথাগুলো মানুষকে বুঝানো হয়।
৩. ছবি আঁকা:
চিত্র বা ছবি এঁকেও মনের ভাব প্রকাশ করা যায়।চিত্রশিল্পীরা নিজের মনের কথা বলার জন্য ছবি আঁকেন। অর্থাৎ ছবি এঁকে শিল্পীরা মনের ভাব প্রকাশ করেন। কোনো ছবি দেখে তার মধ্যে কি ভাব ফুটে উঠেছে তা বুঝা তেমন কঠিন নয়।
৪. কণ্ঠধ্বনি:
ব্যাপকভাবে মনের ভাব প্রকাশের জন্য মুখের ভাষাই হলো প্রধান মাধ্যম। মুখ, জিহবা, কণ্ঠ এসব বাগযন্ত্রের সাহায্যে কথা বলে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে। কণ্ঠধ্বনিই ভাব প্রকাশের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। কথা বলে আমরা মনের ভাব বেশি স্পষ্ট করে বুঝাতে পারি।
৫. লেখনি:
শিক্ষিত মানুষ কলমের সাহায্যে লিখে মনের ভাব প্রকাশ করে। লেখনির মাধ্যমে মানুষ তার মনের হাসি, কান্না, আনন্দ, বেদনা প্রকাশ করতে পারে। এভাবে মানুষ নানা উপায়ে বা মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করে। তবে,ব্যাপকভাবে মনের ভাব প্রকাশের জন্য মুখের ভাষাই প্রধান মাধ্যম।
চলবে...
নিউজওয়ান২৪.কম/আ.রাফি
- ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ (পর্ব-১)
- বিসিএস: লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির কিছু কৌশল
- পাস করেছে পূজা চেরি ও দীঘি
- পড়াশোনা
৬ষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি ব্যাকরণ (পর্ব-১) - ৬ষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি ব্যাকরণ (পর্ব-২)
- প্রাথমিকে বৃত্তি ও অর্থের পরিমাণ বাড়াচ্ছে সরকার
- জেএসসি-জেডিসি’র মঙ্গলবারের পরীক্ষাও স্থগিত
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২য় বর্ষের ২২ এপ্রিলের পরীক্ষা স্থগিত
- এইচএসসির ফল জানুন ঘরে বসেই
- বাংলাদেশের যা কিছু প্রথম
- সাড়ে ৩ পাওয়া শিফাকে ভিকারুন্নিসা অধ্যক্ষ করতে গোপন মিটিং!
- যৌন নিপীড়নের অভিযোগে আজীবন বহিষ্কার পাপ্পু
- পিইসি, ইবতেদায়ি, জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষার ফল ৩১ ডিসেম্বর
- ‘গোল্ডেন গার্ল’ শীলা! ঢাবি, জাবি, মেডিকেলের পর বুয়েটেও চান্স
- ৬ষ্ঠ শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ (পর্ব-২)