ঢাকা, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

সিনেমাহলে চোখের পানি ফেলাবে ‘হাসিনা’

যাহিন ইবনাত

প্রকাশিত: ১১:৩০, ১৭ নভেম্বর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

 

এটা কোন সিনেমা নয়, তারপরেও প্রেক্ষাগৃহে সত্তর মিনিটের এই ডকু-ড্রামা দেখার জন্য গত কয়েকটা সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করছি অধীর আগ্রহে। এরই মধ্যে ইউটিউবে কয়েক’শো বার এর ট্রেলার দেখা হয়ে গেছে, একবারও বিরক্ত মনে হয়নি। মূলত ‘হাসিনা- এ ডটার’স টেল’নামের ডকু-ড্রামাটির কথা বলছি। যা নির্মিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে।

এই ছবি নির্মাণে টানা পাঁচটা বছর সময় ব্যয় করেছেন পরিচালক রেজাউর রহমান খান পিপলু। এতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নন, খুব সাদামাটা সাধারণ একটা মেয়ের জীবনের গল্পটাই দর্শকদের বলতে চেয়েছেন নির্মাতা৷

তবে অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে কাল। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মোট চারটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে ‘হাসিনা- এ ডটার’স টেল’।

‘এই সিনেমায় একটা লাইন এমন ছিল, বাংলাদেশের বাঙালিরা যে আমার বাবাকে মারবে, এটা তো ধারণারও বাইরে ছিল!’ নিঃসন্দেহে বাঙালিদের বুকে মোচড় দিয়ে ওঠার জন্যে এটাই যথেষ্ট। কণ্ঠস্বরটা ছিল শেখ রেহানার, বঙ্গবন্ধুর কণিষ্ঠ কন্যা তিনি।

এদিকে, গত সেপ্টম্বরে শেখ হাসিনার জন্মদিনে এই ট্রেলার প্রকাশিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দারুণ সাড়া জাগিয়েছে। বাংলাদেশে এই ধরনের কাজ আগে কখনো হয়নি, তাই একদমই ভিন্নরকমের এই ট্রেলারটা দেখে মোটামুটি চমকে উঠে সকলের হৃদয় স্পন্দন।

সেখানে পরিচালক যেভাবে গল্প বলতে চেয়েছেন, যেমন করে সেই সময় তুলে ধরতে চেয়েছেন, আবহ সঙ্গীত বা চিত্রধারণে যে ব্যতিক্রমী একটা ধরণ ব্যবহার করেছেন, সবকিছু মিলিয়ে আগ্রহের পারদ শীর্ষে পৌঁছেছিল ট্রেলারটা প্রকাশের পর থেকে।

তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাদের ব্যাপারে মানুষের অন্যরকম একটা আগ্রহ বরাবরই ছিল, বিশেষ করে ব্যক্তি হাসিনার ব্যাপারে জানতে চাওয়া মানুষের অভাব নেই। পঁচাত্তরের আগস্টে হুট করে দুই বোন যখন পরিবারের সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়, সে সময় থেকে শেখ পরিবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি।

এরপর থেকে বাবা মাকে হারিয়ে নিঃস্ব দুই বোনের দেশে ফিরে আসা, দলকে পুনর্গঠিত করা, ভোট জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় আসা, হাজারটা পারিপার্শ্বিক চাপ সামলে সফলভাবে রাষ্ট্রপরিচালনা করা- এসবের বাইরেও শেখ হাসিনার একদমই অন্যরকম একটা জীবন আছে।

যে জীবন একেবারেই সাধারণ, সাদামাটা৷ যেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকেন না, রান্নাঘরে ঢুকে রাধুনি বনে যান। যেখানে তিনি দাদী-নানী হয়ে নাতি-নাতনীদের গল্প শোনান, ছেলের জন্মদিনে চুলার আঁচ সয়ে বিরিয়ানি রান্না করেন৷ হুট করেই কোন এক সকালে হয়তো তার চোখ আর্দ্র হয়, মনে পড়ে তার বাবার কথা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কথা, তার আদরের রাসেলের কথা।

মূলত শেখ হাসিনার যে গল্পটা কেউ জানে না, সেটার সন্ধানেই নেমেছিলেন পরিচালক রেজাউর রহমান পিপলু। সাগর থেকে মুক্তা খোঁজার মতো করে তুলে এনেছেন গল্পগুলোকে৷ পাঁচ বছর অনেক বিশাল একটা সময় তবে কেন এই সিনেমাটা নির্মাণে এত সময় লাগলো?

এমন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন পরিচালক। বললেন, আমি যখন কোন কিছু বানায়, তখন ধীরে ধীরে বানায়। আর এরকম একজন পলিটিক্যাল লিডারকে নিয়ে কাজ করেছি, আমার কাছে মনে হয়ে পাঁচ বছর আরো কম হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী যে সময়টার কথা বলেছেন, যে গল্পগুলো আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন, চেষ্টা করেছি তার আশেপাশের সময়টাকে ৩৬০ ডিগ্রিতে ধরতে। সেজন্যে আমাকে ইতিহাস ঘেঁটে দেখতে হয়েছে, অনেক পারিপার্শ্বিক চরিত্র চিন্তা করতে হয়েছে, ভাবতে হয়েছে। মূলত এত বড় কাহিনী কিভাবে আমরা প্রেজেন্ট করবো, সেটা ঠিক করতে বড় একটা সময় আমাদের চলে গিয়েছিল।

তাছাড়া সিনেমার শুটিং নিয়েও বলেছেন পরিচালক। তিনি বলেন, আপাকে তো আমি সবচেয়ে বেশি পেয়েছি গণভবন, ধানমন্ডি ৩২ ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। এ ছাড়াও অনেক সময় সরকারি কিছু অনুষ্ঠানে দৃশ্য ধারণ করেছি।

তবে এই ছবিতে আমরা দেখব, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আপা জার্মানি, ব্রাসেলস থেকে শুরু করে দিল্লি, যেখানেই গেছেন সব জায়গায় আমাদেরও যেতে হয়েছে। আমি তথ্যচিত্রটাকে এমনভাবে পরিকল্পনা করেছি, আর শুটিংয়ের ব্যাপারটা দেশেই রেখেছি।

এই কাজটা করার সময় পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছেন পিপলু এমনটা জানিয়ে তিনি বলেছেন, আমি কিন্তু এই কাজটা করার সময় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কাজ করিনি। একজন সাধারণ শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যাকেই দেখছি। এর বেশি আর কিছু দেখার দরকার পড়েনি।

আর এই ছবিটাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দরকার পড়েও নাই, আমি দেখতেও যাইনি। আমাকেও সেই স্বাধীনতা দিয়েছেন। বলেছেন, ছবিটাকে আমি যেভাবে দেখতে চাই, সেভাবেই যেন কাজটা করি। বাঁধা-ধরা কোনো ব্রিফিং ছিল না।

সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরে দুই বোন আশ্রয় নিয়েছিলেন জার্মানীতে, সেখান থেকে রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর কাছে প্রায় পনেরো দিন ছিলেন তারা। ওইসময় শেখ হাসিনা যখন ভারতের উদ্দেশে জার্মানী ছেড়েছেন, তখন প্রবীণ এই কূটনীতিবিদ শেখ হাসিনাকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, দোয়া করি মা, তুমি বাংলাদেশের ইন্দিরা গান্ধী হও।

তবে শেখ হাসিনা ইন্দিরা গান্ধী হননি, তিনি শেখ হাসিনাই হয়েছেন৷ ইন্দিরা গান্ধীকেও তিনি জনপ্রিয়তায় ছাড়িয়ে গেছেন অনেক আগেই। বাবার মৃত্যুতে একদম শূন্য থেকে হুট করে যাত্রা শুরু করা মানুষটা দেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রজনৈতিক দলের কাণ্ডারী।

অথচ সেই মানুষটার ভেতরেই যে কী চাপা কষ্ট লুকিয়ে আছে, তা ‘হাসিনা- এ ডটার’স টেল’ না দেখলে বুঝা যাবে না। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অনুসরণ করেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, তারা সকলে একবার হলে এটি দেখতে হলে যাবেন। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, চোখের পানি না ফেলে হল ছাড়বেন না।

নিউজওয়ান২৪/জেডআই