ঢাকা, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

সাড়ে ৩ পাওয়া শিফাকে ভিকারুন্নিসা অধ্যক্ষ করতে গোপন মিটিং! 

প্রকাশিত: ১৮:৫২, ৬ মে ২০১৯  

ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় মোট ৩০ নম্বরে মাত্র সাড়ে ৩ পাওয়া রুমানা শাহীন শিফাকে নিয়োগ দিতে গতকাল (রবিবার) সন্ধ্যায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের রুমে এক গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এ গোপন বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসী বেগম, সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার, শিক্ষা অধিদপ্তরের অনেক বিতর্কের জন্ম দেওয়া পরিচালক আলোচিত-সমালোচিত শাহেদুল খবীর চৌধুরী ও গভর্নিং বডির সদস্য আতাউর রহমানসহ আরেক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

যদিও ভিকারুন্নিসার অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক হারুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত স্কুলের গভর্নিং বডিকে দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়েছে, নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগটি তদন্তপূর্বক নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে লেখা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়, গত ২৬ এপ্রিল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আনোয়ারুল হক স্বাক্ষরিত এই চিঠির অনুলিপি ভিকারুননিসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানকেও দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্য আর্থিকভাবে লাভবান হতে না পেরে গত ৮ বছরেও অধ্যক্ষ নিয়োগ দেননি ভিকারুন্নিসায়। তবে মেয়াদের শেষ দিকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বর্তমান কমিটি। এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়ার দাবি ছিল অভিভাবকদের। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগ কমিটি তাদের পছন্দের ব্যক্তি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফাকে অর্থের বিনিময়ে অধ্যক্ষ নিয়োগের পাঁয়তারা করে। 

বিষয়টি অভিভাবকরা জানতে পেরে গত ২৫ এপ্রিল অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু মহাপরিচালক এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে ২৬ এপ্রিল পরিচালক শাহেদুল কবির চৌধুরীকে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান। নিয়োগ কমিটি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্রে ৩০ নম্বরের ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ৭টি প্রশ্ন ইংরেজি ভাষায় উত্তর দেয়ার জন্য এবং ৩টি বাংলা ভাষায় উত্তর দেয়ার জন্য নির্ধারণ করেন। ২৭ এপ্রিল সকালে লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় মোট ১৫ জন প্রার্থীর অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন। মোট ১০ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা শাহীন শেফাকে ভিকারুন নিসার অধ্যক্ষ হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়, যিনি লিখিত পরীক্ষায় মাত্র সাড়ে ৩ নম্বর পেয়েছেন। তবে মৌখিক পরীক্ষায় ও একাডেমিক পারফরমেন্সের মাধ্যমে তাকে পরীক্ষায় প্রথম করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র জানিয়েছে, পরীক্ষার দিন বিকালে গভর্নিং বডির বৈঠকে সদস্য অ্যাডভোকেট ইউনূস আলী আকন্দ সব প্রার্থীর পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর জানতে চান। ওই সদস্য জানান, লিখিত পরীক্ষায় কে কত নম্বর পেয়েছে আমি জানতে চাই। কিন্তু কে কত নম্বর পেয়েছে তা গভর্নিং বডির অন্য সদস্যদের জানাতে গড়িমসি করা হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর কে কত নম্বর পেয়েছে তা জানানো হয়। দেখা গেছে, সবাই ফেল করেছে। এই সদস্য বলেন, সবাই যেহেতু পরীক্ষায় ফেল করেছে এ কারণে আমাকে খাতা ও নম্বর দেখাতে চাইছিল না।

সূত্র জানিয়েছে, লিখিত পরীক্ষায় ফেল করলেও মৌখিক পরীক্ষায় ও একাডেমিক পারফরমেন্স মিলিয়ে রুমানা শাহীন শেফাকে ১৯ নম্বর দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রার্থীরা যথাক্রমে সাড়ে ১৮ ও ১৮ নম্বর পেয়েছেন। আর প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হাসিনা বেগম পেয়েছেন ১৭।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভিকারুন নিসায় পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ১০টির মধ্যে ৭টি প্রশ্ন করা হয়েছে ইংরেজিতে। তবুও তাকে লিখিত পরীক্ষায় পাস করানো যায়নি। ইংরেজিতে প্রশ্ন করার পরও ইংরেজির শিক্ষক যখন পরীক্ষায় ফেল করেন, তখন তার যোগ্যতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে।

জানা গেছে, ভিকারুন নিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার। যিনি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডিরও সদস্য। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ভিকারুননিসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টায় নানামুখী প্রশ্ন তৈরি হয়েছে এ সূত্রে। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ভিকারুন নিসার সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। ২৮ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর অনিয়ম ও অবৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের আবেদন করলে তা চিঠি পাঠিয়ে স্থগিত করা হয়।

অভিভাবকদের  অভিযোগ, পরীক্ষায় সাড়ে ৩ পাওয়া রুমানা শাহীন শেফাকে নিয়োগের জন্য গতকাল (রবিবার) গোপন বৈঠকে বসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসীসহ মাউশির পরিচালক শাহেদুল খবীর চৌধুরী ও গভর্নিং বডির সদস্য আতাউর রহমানসহ আরেক সদস্য। তারা পরীক্ষার খাতাও পাল্টে ফেলতে পারেন বলে অভিভাবকরা আশঙ্কা করছেন। 

এ ব্যাপারে ভিকারুন নিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসী বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সোমবার তদন্ত কমিটি তদন্ত করতে আসবেন। সেখানে শাহেদুল খবীরকেও ডাকা হয়েছে কিনা তা জানতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, তিনি (খবীর) প্রতিষ্ঠানটিতে এসেছিলেন এবং তিনি চলে গেছেন। তবে কোনো গোপন বৈঠক হয়নি। কিছু কুচক্রি মহল প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে বলে এসময় অভিযোগ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসী। সোমবারই সব কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে বলে তিনি দাবি করেন।
নিউজওয়ান২৪.কম/আরকে

আরও পড়ুন
শিক্ষাঙ্গন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত