ঢাকা, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

লবণের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই, মজুদ পর্যাপ্ত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ১৯ নভেম্বর ২০১৯  

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

দেশে লবণের সংকট রয়েছে বলে গুজব রটেছে। এ সুযোগে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল ও অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় এর দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। 

তবে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, দেশে পর্যাপ্ত লবণের মজুদ রয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকেও এসব গুজবের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও পুলিশ প্রশাসনও সজাগ রয়েছে।

কয়েকজন লবণ ব্যবসায়ী জানান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের খামারি এবং ব্যবসায়ীদের কাছে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ আছে। যা দিয়ে কয়েক মাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এছাড়া চলতি নভেম্বর মাস থেকে খামারে নতুন লবণ উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে। 

জানা গেছে, গত সোমবার সিলেটে প্রথম লবণ সংকটের গুজব ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সন্ধ্যার পর থেকেই সিলেট শহরের বিভিন্ন দোকানে লবণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। এরপর থেকেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের চেষ্টা করছে। এরইমধ্যে দেশের কয়েকটি জেলায় স্থানীয় প্রশাসন বেশকিছু ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজাও দিয়েছে।

সোমবার সিলেটের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকার লবণ ৪০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রির ঘটনাও ঘটে। এমন খবরে সিলেট জেলা প্রশাসকের নির্দেশে রাত নয়টার দিকে মাঠে নামে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিলেট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমন্ত ব্যানার্জি ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন। বেশি দামে বিক্রি এবং মজুদের ঘটনায়  নগরের পাইকারি বাজার কালীঘাটের মেসার্স শিমুল স্টোরকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে লবণ পরিবহন করা তিনটি ঠেলাগাড়িতে থাকা প্রায় ৬০০ কেজি লবণের মালিক পাওয়া না যাওয়ায় জব্দ করা হয়।

একই চিত্র হবিগঞ্জেও দেখা গিয়েছে সোমবার। গভীর রাতে লবণের দাম বৃদ্ধির গুজব রটানো হয় শহরসহ আশপাশের এলাকায়। এ সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে শহরের চৌধুরী বাজার এলাকা থেকে চার ব্যবসায়ীকে আটক করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসির আরাফাত রানা।

এছাড়া মৌলভীবাজারে কিছু দোকানে কেজি প্রতি ৩৫ টাকার লবণ ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। লবণের দাম বৃদ্ধির এমন অভিযোগ পেয়ে সোমবার রাত থেকে মৌলভীবাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। পরে মৌলভীবাজার জেলার সাতটি উপজেলার প্রশাসন সোমবার রাতে লবণের দাম বাড়া নিয়ে গুজবে কান না দিতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। 

একই গুজব ছড়িয়ে পড়ে সুনামগঞ্জেও। সোমবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও লোকমুখে রটে যায় লবণের দাম বাড়ছে। এরপরই ভোক্তারা অধিক পরিমাণে লবণ কিনতে শুরু করেন। গভীর রাত পর্যন্ত অনেকের হাতে দুই থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত লবণ কিনে বাসায় ফিরতে দেখা যায়। গুজব নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রশাসন মাঠে নামার পর পরিস্থতি বদলে যেতে শুরু করে। রাতে ছাতকে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। ছাতক উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপশ শীল ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে পৌর শহরের আলী ট্রেডার্স ও নিতাই স্টোর নামক দুই প্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে।

এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে রাজধানীতেও লবণের মূল্য বৃদ্ধির গুজব ডালপালা মেলে। বিভিন্ন বাজার ও মহল্লার দোকানে লবণ কেনার জন্য ভিড় লেগে যায় দোকানগুলোতে। এ সুযোগে অনেক দোকানি দাম বাড়িয়ে লবণ বিক্রি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এক কেজি লবণ ১০০ টাকায়ও বিক্রি করেন অনেক ব্যবসায়ী।

কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, অধিকাংশ দোকানে প্যাকেটের গায়ে লেখা মূল্যেই লবণ বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে লবণের কোনো সংকট নেই। হঠাৎ গুজবের কারণে সবাই এসে বেশি করে লবণ কিনছে। তারা জানান, এখনো যে লবণ আছে, তা দিয়ে কমপক্ষে তিন মাসের চাহিদা মেটানো যাবে। প্যাকেটের গায়ে নির্ধারিত দামেই লবণ কেনার জন্য মানুষের প্রতি আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে  বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরুল কবির বলেন, লবণের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এটা শ্রেফ গুজব। দেশে লবণের কোনো সংকট নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমপক্ষে তিন মাসের লবণ মজুদ আছে। 

এদিকে মঙ্গলবার শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে বর্তমানে সাড়ে ছয় লাখ টনের বেশি ভোজ্য লবণ মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের লবণ চাষীদের কাছে চার লাখ ৫ হাজার টন এবং বিভিন্ন লবণ মিলের গুদামে দুই লাখ ৪৫ হাজার টন লবণ মজুদ রয়েছে। তারপরও একটি স্বার্থান্বেষী মহল লবণের সংকট রয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় লবণের দাম অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, সারাদেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি চলতি নভেম্বর মাস থেকে লবণের উৎপাদন মৌসুম শুরু হয়েছে।  কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় উৎপাদিত নতুন লবণও বাজারে আসতে শুরু করেছে। 

শিল্প মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, দেশে প্রতি মাসে ভোজ্য লবণের চাহিদা এক লাখ টনের কাছাকাছি। সেখানে লবণের মজুদ আছে সাড়ে ৬ লাখ টন। সে হিসাবে লবণের কোনো ধরনের ঘাটতি বা সংকটের প্রশ্নই ওঠে না।

লবণ-সংক্রান্ত বিষয়ে তদারকির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) প্রধান কার্যালয়ে এরইমধ্যে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এর নম্বর হচ্ছে: ০২-৯৫৭৩৫০৫ (ল্যান্ড ফোন), ০১৭১৫-২২৩৯৪৯ (সেল ফোন)। লবণ-সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যের জন্য কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে কক্সবাজারে লবণ উৎপাদনে ৫৮ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কক্সবাজারে এবার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হয়েছে। মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই গত মে মাসে লবণ উৎপাদন ১৮ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যায়। যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে লবণ আমদানির প্রয়োজন পড়বে না। এ অবস্থায় লবণ সংকটের বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যা ও গুজব।

অর্থ-কড়ি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত