ঢাকা, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪
সর্বশেষ:

যে কারণে করিমুলের জন্য দোয়া এবং সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান 

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৫৮, ১৮ জানুয়ারি ২০২০  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চিকিৎসার অভাবে রোগীমৃত্যু যেখানে খিদে পাওয়ার মতো স্বাভাবিক, সেখানেই ভারতের কোলকাতার করিমুল রুখে দাঁড়িয়েছিলেন নিয়মের বিরুদ্ধে। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে তৈরি করেছিলেন বাইক অ্যাম্বুল্যান্স।

একদিন করিম নিজের মাকে হারিয়েছিলেন ওই অ্যাম্বুল্যান্স না থাকার কারণেই। তাই মায়ের মরদেহের সামনে দাঁড়িয়েই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে নিজের এলাকা ধুলাবাড়ির আর কারো প্রাণ যাবে না। নিজের জমানো সব টাকা দিয়ে কেনা বাইকেই তিনি তুলে নিয়েছেন বহু দুঃস্থ রোগীকে। প্রাণে বেঁচে তারা দু’হাত ভরে দোয়া করেছেন করিমুলের জন্য। অন্যদিকে আর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে পেলেন সর্বোচ্চ পদ্মশ্রী সম্মাননা। 

অন্যের জীবনে আলো ফুটিয়েও অবশ্য নিজের আঁধার কাটাতে পারেননি করিমুল। চোখের জটিল সমস্যায় ভুগছেন সেই কবে থেকে। দরকার ছিল বহু টাকার। স্থানীয় এক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশর পর বহু মানুষ নিজেদের সাধ্যমতো তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আর্থিক সাহায্য পাঠান। সেই অর্থ এবং স্থানীয় কিছু মানুষের সাহায্যে হায়দরাবাদে তার চিকিৎসাও হয়। সেই চিকিৎসা এখনো অনেকটাই বাকি, চোখের সমস্যাও এখনো মেটেনি পুরোপুরি। ভয় পান, ‘আর কদিন পর ঠিকঠাক দেখতে পাব তো?’

যে চোখে অসহায়ের জন্য একঝাঁক স্বপ্ন ভিড় করে আসে, সেই চোখ অন্ধত্বের পথে হাঁটতে-হাঁটতেও ফিরে আসে। আবার নতুন করে স্বপ্ন সাজায়। বাড়িতে এখনো আছে বাইক অ্যাম্বুল্যান্স। কিনেছেন আরেকটি অ্যাম্বুল্যান্স। 

কিন্তু সেটাই কি যথেষ্ট? করিমুল কিন্তু সন্তুষ্ট নন। তাই চোখের সমস্যাকে আপাতত চিন্তার বাইরে রেখে এবার নিজের ঘর লাগোয়া জমিতেই গড়ে তুলছেন গরিবের হাসপাতাল। নাম দিয়েছেন ‘মানব সেবা সদন।’  

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) তার বাড়ির উঠোনে বসেছিল স্বাস্থ্যশিবির। প্রবীণ মানুষদের চোখে ছানি পরীক্ষা হয়েছে। যাদের মধ্যে প্রায় ২০ জনের ছানি অপারেশন হবে আর কয়েকদিনের মধ্যেই।  যেদিন বসে স্বাস্থ্যশিবির, সেইদিনই করিমুলের বাড়িতেই সবার খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। বুধবারও ব্যতিক্রম হয়নি। খেয়েছেন প্রায় ৪০০ মানুষ। 

যাওয়ার আগে শীতের রাতে গায়ে দেয়ার জন্য কারো হাতে দিয়েছেন কম্বল, কারো হাতে বা সোয়েটার। হাসপাতাল তৈরির আগেই করিমুল যেন বাড়িটাকেই গড়ে তুলেছেন সেবা সদন। বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়াটাই যেখানে নিয়ম ছিল, সেখানে যেন জীবনের পথে বাঁশি বাজাচ্ছেন ‘হ্যামেলিনের’ করিমুল।

‘এসো আলো হারানোর দিনে, এসো ফিকে হয়ে আসা রাতে/ এসো মেঘ ভাঙা আশ্বিনে, এসো আঁধারে উল্কাপাতে...’ হানাহানি, বিদ্বেষ, হিংসা, দুর্নীতি, বিভেদের এই দুনিয়ায় করিমুল আসলে ‘আলো হারানোর দিনে’র শেষে ধুলাবাড়ির অন্ধকার থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসে উল্কা- করিমুল হক। জয়তু করিমুল। 

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড

ইত্যাদি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত