ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

মে’র ভাবনা: ভানুয়াতুতে আটকেপড়া রেমিটেন্স যোদ্ধাদের ভুলে যাবেন না 

প্রকাশিত: ০১:১১, ১ মে ২০১৯  

আটকেপড়া রেমিটেন্স যোদ্ধারা বড়ই অমানবিক অবস্থার মধ্যে আছেন              -ফাইল ফটো

আটকেপড়া রেমিটেন্স যোদ্ধারা বড়ই অমানবিক অবস্থার মধ্যে আছেন -ফাইল ফটো

বরিশালের উজিরপুরের মুন্ডপাশা, জয়শ্রী, পূর্ব মুন্ডপাশা, শিকারপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ১১ যুবক পড়েচিলেন ফাঁদে। আজ থেকে আড়াই তিন বছের আগে সেই সেই লোভনীয় ফাঁদ তাদের গলায় পেঁচাতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে যার যার সম্ভব ছিল তা দিয়ে আদম ব্যাপারীর খাঁই মিটিয়ে ‘অস্ট্রেলিয়ার পথে’ রওনা দেন তারা। মনে স্বপ্ন সেখানে গিয়ে সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ-এর চাকরি পাবেন, মাস গেলেই কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার জমা হবে অ্যাকাউন্টে। দেশগ্রামে পরিবার-পরিজন সুখের আবেশে দিন কাটাবে!

কিন্তু না। মাকড়শার জালের মতো ছিন্ন হয়ে গেছে তাদের স্বপ্ন। গত দুই বছর ধরে সেখানে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট দ্বীপদেশ ভানুয়াতুতে আাটকা পড়েছেন তারা। পলাশ নামের এক পিশাচ আদম-পাচারকারীর খপ্পড়ে পড়ে তাদের বেহাল দশা এখন। 

ওই যুবকেরা দেশে ব্যবসা করে বা মজুর খেটে মোটামুটি ভালো ছিলেন। তাদের অস্ট্রেলিয়া নিয়ে বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ দেওয়ার স্বপ্ন দেখান বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার পলাশ হাওলাদার (২৭)। তারা পলাশ নামক প্রতারকের লোভের ফাঁদে পড়ে ভিটে-মাটি বিক্রি করে ৮/১০ লাখ টাকা করে তুলে দেন তার হাতে। কিন্তু অস্ট্রেরিয়ার বদলে তাদের নিয়ে ফেলা হয় ভানুয়াতুতে।

মুন্ডপাশা গ্রামের আল আমিনের অভিযোগে জানান, মুন্ডপাশা বাজারে আমার দোকান ছিল। ব্যবসা করে কোনোমতে দুমুঠো খেয়ে-পরে দিন কাটত। পলাশের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পরে সে আমাকে অস্ট্রেরিয়া গিয়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখায়। ৮ লাখ টাকা দিলে আমাকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে বিক্রয় প্রতিনিধির চাকরি দেওয়ার কথা জানায়। লোভে পড়ে পৈতৃক ভিটা-মাটি বিক্রি করে ২০১৭ সালে তার হাতে ৮ লাখ টাকা তুলে দিই। এরপরের ইতিহাস এক নির্মম ধোঁকাবাজির ধারাবাহিক গল্পের মতো। 

বর্তমানে আল আমিন বিদেশ-বিভূঁইয়ে নিজেই অর্ধহারে-অনাহারে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পরিবারের কথা ভাবারও সময় নেই।

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের বিরামহীন জলরাশির দ্বীপ দেশ ভানুয়াতুতে আটকে পড়া উজিরপুর উপজেলার জয়শ্রী গ্রামের আমির হোসেন হাওলাদারের (৩২) অভিযোগ, পলাশ হাওলাদার প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশের ১০৩ জনকে ভানুয়াতু নিয়ে ছলচাতুরি করেন। তাদের মধ্যে তারা উজিরপুরের ১১ জন আছেন।

শেষতক ভানুয়াতু হিউম্যান রাইটস কোয়ালিশন নামে সেখানকার এক মানবাধিকার সংগঠনের সহায়তায় ভানুয়াতু পুলিশের কাছে পলাশ হাওলাদারসহ অসাধু আদম ব্যবসায়ী চক্রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা। ভানুয়াতু পুলিশ এক স্যাঙ্গাতসহ পলাশ হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে। গত দুই মাস ধরে পলাশ কারাগারে থাকায় অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে পলাশ হাওলাদারের বাবা হারুন অর রশিদ কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।

এদিকে মহান মে দিবসে শ্রমিকদের আনন্দ আর মর্যাদার এই শুভ মুহুর্তে প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধারা আশা করছেন বর্তমান জনবান্ধব প্রবাসী হিতৈষী সরকার ভানুয়াতুতে আটকে পড়া শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত পুনর্বাসন করবে। কারণ, এই শ্রমিকরা কিন্তু কেউ অপরাধী নয়, তারা অপরাধের শিকার। ভানুয়াতুবাসীকেও তারা একথা বারবার জোরের সঙ্গে জানিয়েছেন। তারা হতে চেয়েছিলেন রেমিটেন্স যোদ্ধা, কিন্তু হয়ে পড়েছেন এখন নিজের ও পরিবারের বোঝা। তা শুধু একজন আদম ব্যাপারীর জন্য। কাজহীন অবস্থায় সেখানে অনেক দুর্ভোগের শিকার এই মানুষগুলো এখন চায় দেশে ফিরতে। সরকার তাতে সানুগ্রহ সাড়া দিক- এটাই আশা। 

নিউজওয়ান২৪.কম/এসএম

প্রবাসী দুনিয়া বিভাগের সর্বাধিক পঠিত