মাশরাফির ‘এমপি পদে দাঁড়ানো’, নড়াইলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

দেশ ও দশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। এবার শোনা যাচ্ছে, নড়াইলের এমপি প্রার্থী হচ্ছেন তিনি!

তাছাড়া সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী তার জন্য দোয়া চাওয়াকে কেন্দ্র করে নড়াইলের চারিদিকে চলছে জল্পনা-কল্পনা। এরই মধ্যে হাটে মাঠে, চায়ের দোকানে সর্বত্রে মাশরাফির প্রার্থী হওয়া নিয়ে শুরু হয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।

তবে নড়াইল-২ আসনে মাশরাফি কী সত্যিই প্রার্থী হচ্ছেন? এই নিয়ে ভাবা শুরু করেছেন খোদ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও। 

এর আগে, গত এপ্রিল মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল ঢাকার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় বলেছিলেন, মাশরাফি ও সাকিব সংসদ নির্বাচন করবেন। এই ঘোষণার পর থেকেই নড়াইলের নির্বাচনী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন দেশসেরা ক্রিকেটার মাশরাফি।

সে সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই দেশ নায়কের বাড়িতে ভীড় জমাতে থাকেন। এরপর থেকে মাশরাফিকে ঘিরে ছাত্রলীগের একটি অংশ সার্বক্ষণিক ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

এদিকে, বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়াও এ ব্যাপারে খবর প্রকাশে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যদিও এই ঘোষণার পর থেকে নড়াইল-২ আসনের আওয়ামী লীগের নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহীরা একেবারে চুপসে যায়।

তাছাড়া নড়াইলের হেভিওয়েট প্রাথীরা মাশরাফিকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে তাকে নিয়ে তাচ্ছিল্য বক্তব্য দিতে শুরু করেন। তাদের সমর্থকরা  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাশরাফিকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত হন।

এদিকে, মাশরাফির এখনো রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখাননি। তিনি শুধু বলেছেন, আগে বিশ্বকাপ খেলতে চাই, পরে রাজনীতি।

তবে মাশরাফির ইচ্ছে না থাকলেও তিনি রাজনীতিতে আসলে ভালো করবেন এমনই মনে করেন অনেকে। তার ভক্ত মাসুম বিল্লাহ বলেন, মাশরাফি এমপি হলে হয়তো সে মন্ত্রী হয়ে ক্রীড়ার উন্নয়ন ঘটাবে। তাছাড়া নড়াইল একজন মন্ত্রী পাবে। আমরা চাই সে এমপি হিসেবেই দলে নেতৃত্ব দিক। তাহলে নড়াইলের জন্যও বেশ ভালো হবে।

সর্বশেষ গত ৪ অক্টোবর দেশব্যাপী ৪র্থ উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লোহাগড়া উপজেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। সেখানে তিনি মাশরাফিকে নড়াইলের বড় সম্পদ উল্লেখ করে তার সুস্থ্যতার জন্য দোয়া চান। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর নড়াইলের সর্বত্র গুঞ্জন আরো বেগবান হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, দেশের যুবসমাজের আইকন মাশরাফি নড়াইলে আসলে দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গেই চলাফেরা করেন। তার কাছে দলের চেয়ে ব্যক্তি সম্পর্ক অনেক বড়। বন্ধু বৎসল মাশরাফি কখনোই কোনো দলের হয়ে কথা বলেননি।

নিজের খেলা আর এলাকার গরীব মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সবসময় তিনি। তার পয়সায় দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা এবং প্রকৌশলীতে পড়ালেখা করছেন মেধাবী ছাত্ররা। এলাকার মানুষের কাছে মাশরাফি দিনে দিনে একজন দেবতুল্য মানুষ হয়ে উঠেছেন। 

এদিকে, মাশরাফির প্রতিবেশী বন্ধু ও প্রতিবেশী সূত্রে জানা গেছে, তার (মাশরাফি) কাছ থেকে ভালোবাসা কিংবা সহায়তা পাননি এমন অসহায় মানুষের সংখ্যা বিরল। তাইতো তিনি আত্মমানবতার সেবা ও ক্রীড়ার উন্নয়নে গড়ে তুলেছেন 'নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন'।

স্পন্সর জোগাড় করে ক্রিকেট, ফুটবল ভলিবলের জন্য ৩ বছরের কোর্স করাচ্ছেন, স্পেশাল জিম তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছেন। দরিদ্র মানুষের জন্য অ্যাম্বুলেস ও স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করেছেন। নিজের বিজ্ঞাপনের টাকা দিয়ে চলছে নড়াইল বাসীর এই সেবা সমুহ।

এদিকে, নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড.কাজী বশিরুল হক বলেন, মাশরাফি তো কখনোই নির্বাচনে আসার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি, সে এরই মধ্যে যেটা বলেছে সেটা হলো, প্রধানমন্ত্রী আমাকে খুবই ভালোবাসেন, উনি যদি নির্বাচনের মাঠে নামতে বলেন তাহলে আমার নামতে হতে পারে।

নড়াইল-২ আসনের প্রার্থী এড. সৈয়দ আইয়ুব আলী জানান, মাশরাফি সবার ওপরে, নেত্রী তাকে মনোনয়ন দিলে আমরা সবাই ঝাপিয়ে পড়বো। কিন্তু আমর মনে হয় তিনি অসুস্থ তাই প্রধানমন্ত্রী তার জন্য দোয়া চেয়েছেন, এখানে নির্বাচনের কোনো ইঙ্গিত নেই।

তাছাড়া নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল-২ আসনের মনোনয়ন প্রার্থী  নিজামউদ্দিন খান নিলু বলেন, প্রধানমন্ত্রী মাশরাফির অসুন্থতার কারনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন, এখানে তার প্রার্থীতার ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত নেই। এগুলো সবই অতিউৎসাহী লোকের গুজব।

মাশরাফিকে দলের মনোনয়ন দেয়া হতে পারে কি না এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি ১৯ তারিখে ঢাকা থেকে ফিরে এসে পরিস্কার করতে পারবো। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে এ ব্যাপারে মাশরাফির সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি নড়াইলের 'টক অফ দ্যা নিউজে' দাঁড়িয়েছে।

নিউজওয়ান২৪/জেডএস