ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

মানসিক করোনাযাত্রা

সজিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৪:১২, ৩০ মার্চ ২০২০  

ছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

ছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত


অফিস শেষ করে বাসায় যাচ্ছি, তখন রাত সাড়ে ১১টা। বলছি গত ২২ মার্চের কথা। করোনা আতঙ্কে ঢাকার ব্যস্ত সড়কগুলোও পরিণত হয়েছে সুনশানে। নির্জনে বাতাস গায়ে কাঁটা দিল। গরমেও হঠাৎ ঠান্ডায় শিহরিত হলাম!

শরীর অসুস্থ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে- বুঝতে পারলাম। রাত ১২টা তখন। বাসায় খাবার শেষ করে বেডে গেলাম। বুঝলাম আমার ঠান্ডাজনিত রোগ সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়ছে। সঙ্গে শরীরটাও গরম। সকাল হতে না হতেই পুরোপুরি অসুস্থ। হাল্কা গলা ব্যথা, সর্দি, জ্বর, কাশি। আর আমাকে দেখে কে?

করোনা আতঙ্কে পরিণত হলাম অসামাজিক পশুতে। বাসা থেকে শুরু করে পরিচিত সবার চোখে, চেহারায় আতঙ্কের ছাপ। প্রকৃতির কারণে অসুস্থ হলেও অপরাধী বনে গেলাম। যদিও মানসিক সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহ দিয়েছেন সবাই। সেদিকে না যায়। আসি মূল কথায়। লক্ষণ দেখে মনে হলো আমি সিজন্যাল ফ্লু-তে আক্রান্ত। পরে দিনে দিনে সুস্থতা বোধ করি। সাহস নিয়ে অফিস শুরু করি। অফিসে হঠাৎ করেই হাল্কা শ্বাসকষ্ট দেখা দিল। বেশি চিন্তিত হয়ে পড়লাম। কল দিলাম সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর)। তবে এরইমধ্যে খবর রটেছে এই প্রতিষ্ঠানের হটলাইন তেমন কার্যকরী নয়। কল করলেও মেলে না তাদের সদয় সাড়া। এমনই হাজারো অভিযোগ।

বাতাসে ছড়ানো বার্তায় যা সবারই জানা। তবে আমার ক্ষেত্রে ঘটলো অন্য কিছু। অসংখ্য ফোন আসায় হটলাইনে কল দেয়ার দ্বিতীয় বারের বেলায়ই আমারটা রিসিভ করলেন। কোমল কণ্ঠে ‘কীভাবে আমাকে সাহায্য করতে পারেন’ জানতে চাইলেন একজন চিকিৎসক। আমি আমার সমস্যা ও রোগের ধরণ বললাম। তিনি সৌজন্যমূলক সব কথার সায় দিলেন, পরামর্শও দিলেন কোয়ারেন্টাইনে থাকার। সঙ্গে আমার সমস্যা, অ্যাডড্রেজসহ লিখে পাঠাতে বললেন। ব্যাস! দেশের চিকিৎসাসেবা দেয়ার প্রেক্ষাপট অনুধাবন করে এখানেই শেষ ভেবে নিলাম।

এ ধারণাও ভুল হলো। পরদিন দুপুরে ফোনে অজানা নাম্বার থেকে কল আসলো। জানালো- আইইডিসিআর থেকে বলছেন। তারা আমার করোনা পরীক্ষা করতে রোগের নমুনা নেবেন। আমার লোকেশন জানতে চাইলেন। মোবাইলে দ্রুতই বাসার ঠিকানা দিয়ে দিলাম। ফোন রাখার পর বুঝতে পারলাম- এটা আমি কি করলাম? নভোচারীর মতো পোশাক পরা কোনো ব্যক্তি বাসায় এসেছেন দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবে এই বাসায় করোনা সাসপেক্টেড কেউ থাকেন! তারপর ব্যবহারে যথার্থ ব্যক্তিত্ব ‘ঢাকার বাড়িওয়ালা’ তো আছেনই। এমনিতেই দেশে লকডাউন, শাটডাউন অবস্থা। কারো করোনা হোক বা না হোক এমন ব্যক্তির আগমনে তাকে আর ওই বাসায় থাকতে দেয়া হবে না।

আমার বোঝা শেষ। দ্রুত আবার কল দিলাম হটলাইন থেকে ফোন আসা ওই নাম্বারে। লোকেশন দিলাম অফিসের। বাসা থেকে অফিস কাছেই। দ্রুত চলে আসলাম। মিনিট বিশেকের মধ্যেই মাইক্রো গাড়িতে করে পোশাক, সরঞ্জামাদি নিয়ে চলে আসলেন আইইডিসিআর এর সেই লোক। তাকে স্বাগতম জানালাম। নিয়ে গেলাম জনবিচ্ছিন্ন একটি কক্ষে। তবে অসম্ভব ভালো ব্যবহার তার। খুবই যত্নশীল। আমার নমুনা নিলেন। এ সময় সাংবাদিকসুলভ প্রশ্ন করতেও ভুলে যায়নি। প্রশ্ন করতে থাকেন- সাইফুল ইসলাম শান্ত (Saiful Islam Shanto) প্রিয় বড় ভাই; ততক্ষণে আমাকে নিয়ে ফটোসেশন-ভিডিওসেশনেও ব্যস্ত থাকেন তিনি।

পরে আমার গাফিলতি হলেও তারা রিপোর্ট জানাতে ছিলেন অসম্ভব আন্তরিক। তাদের এমন ব্যবহারে অভিভূতও হই। রিপোর্ট আসলো- কভিড১৯ (করোনা) নেগেটিভ। প্রমাণ দেখিয়ে নিজেকে আবার সামাজিকভাবে ফিরিয়ে নিলাম, বৈধ হলাম। সবার কাছে আপাতত এখন আমি সার্টিফাইড সুস্থ লোক (ভবিষ্যত জানি না)। আমার সুস্থতায় সবাই যেমন আনন্দিত, ঠিক তেমনি আমিও আবেগাপ্লুত।

আসলে এত কিছু কি এমনিতেই লিখলাম? মোটেও না। কারণ হলো- কেউ ভেসে বেড়ানো খবরে কান দেবেন না। যাচাই না করেই অভিযোগ দেবেন না। সবার আগে আমাদের দেশের পরিস্থিতি, প্রেক্ষাপট ও সক্ষমতা ভাবতে হবে। তারপর তাদের ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে হবে। আশা রাখি- শেষ কথাটি সবার বোধগম্য হবে...

রিপোর্ট

-সজিবুল ইসলাম (সাংবাদিক)

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)।

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড

আরও পড়ুন
অসম্পাদিত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত