ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

বাড়িতে ঈদের নামাজ আদায়ের পদ্ধতি 

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:২৪, ২৪ মে ২০২০  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ঈদ মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ঈদের দিন আল্লাহর উদ্দেশে মুসলমানরা মাঠে জমায়েত হয়ে যে নামাজ পড়ে তাকে ঈদের নামাজ বলা হয়। 

মুসলমানদের জন্য ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের নামাজ সাধারণত ঈদগাহে পড়া হয়। ঈদগাহ হচ্ছে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য নির্ধারিত খোলা স্থান। এই স্থানে দুই ঈদ যথা ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করা হয়।

ঈদের নামাজ উন্মুক্ত স্থানে আদায় করা সুন্নত। প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোলা জায়গায় নামাজ আদায় করতেন। যদি উন্মুক্ত স্থানের ব্যবস্থা না থাকে তবে মসজিদেও ঈদের নামাজ পড়া যাবে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক দেশের মসজিদ কিংবা বাইরে বিশাল জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ে রয়েছে বিধি-নিষেধ। তাই মসজিদ ছাড়াও বাসা-বাড়িতেও ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে। 

বর্তমান সময়ের মানুষের জন্য এ বিষয়টি একেবারেই নতুন। এ সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী ইসলামিক স্কলাররা অনেক মতামত ব্যক্ত করেছেন। এসব মতামতের ভিত্তিতে যে বিষয়টি সবার নিরাপত্তায় সর্বাপেক্ষা যুক্তিযুক্ত সেটি হলো-

> মহামারি করোনাভাইরাসের এ পরিস্থিতিতে যে যেখানে অবস্থান করছে সেখানেই ঈদের নামাজ আদায় করবে।

> যে শর্ত মেনে নিরাপত্তার সঙ্গে জুমা নামাজ আদায়ের পরামর্শ দিয়েছেন ঈদের নামাজের ব্যাপারে সে শর্ত প্রযোজ্য। অর্থাৎ জুমার নামাজের জন্য দেয়া শর্তগুলো মোতাবেকই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে হবে।

ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম: ঈদের নামাজ মসজিদে, খোলা জায়গায় কিংবা বাসা-বাড়িতে যেখানেই পড়া হোক না কেন, অবশ্যই তা জামাতের সঙ্গে পড়তে হবে। জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য যে শর্ত প্রযোজ্য, ঈদের নামাজ আদায় করার জন্যও সে একই শর্ত প্রযোজ্য।

সুতরাং জামাত ছাড়া ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে না। বাসা-বাড়িতে ঈদের নামাজ আদায় করতে হলেও অবশ্যই জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে। তাই ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য ইমাম ছাড়া ন্যূনতম তিনজন মুসল্লি হতে হবে। 

ঈদের নামাজ:

ঈদের নামাজের জন্য কোনো আজান ও ইকামত নেই। তবে জুমার নামাজের মতোই উচ্চ আওয়াজে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়।

ঈদের নামাজের পার্থক্য:

তবে ঈদের নামাজের জন্য পার্থক্য হলো অতিরিক্ত ৬টি তাকবির দিতে হবে।

> প্রথম রাকাআতে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বেঁধে অতিরিক্ত তিন তাকবির দিয়ে সূরা ফাতিহা পড়া।

>দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা মিলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবির দিয়ে রুকতে যাওয়া।

নামাজের নিয়ত:

ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি... আল্লাহু আকবার।

প্রথম রাকাত:

> তাকবিরে তাহরিমা : ঈদের নামাজে নিয়ত করে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধা।
> ছানা পড়া : ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতায়ালা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’
> অতিরক্তি ৩ তাকবির দেয়া। এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত থাকা। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেয়া এবং তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত বেধেঁ নেয়া।
> আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়া
> সূরা ফাতেহা পড়া
> সূরা মিলানো। অতঃপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।

দ্বিতীয় রাকাত:

> বিসমিল্লাহ পড়া
> সূরা ফাতেহা পড়া
> সূরা মিলানো।
> সূরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেয়া। প্রথম রাকাতের মতো দুই তাকবিরে উভয় হাত কাধ বরাবর উঠিয়ে ছেড়ে দেয়া অতঃপর তৃতীয় তাকবির দিয়ে হাত বাঁধা।
> তারপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া।
 সেজদা আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।

খুতবা:

ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেবে আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবে। অবশ্য অনেকেই খুতবা না দেয়ার ব্যাপারে শিথিলতার কথা বলেছেন। খুতবা না দিলেও ঈদের নামাজ আদায় হয়ে যাবে বলে মত দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, অতিরিক্ত তাকবিরের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাজহাবসহ অনেকেই প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমাসহ ৭ তাকবির আর দ্বিতীয় রাকাআতে ৫ তাকবিরে দিয়ে থাকেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই। এ নিয়ে মতপার্থক্যের কোনো কারণ নেই।

নামাজ শেষে ঈদের খুতবা দেয়া:

নামাজ শেষে সবাই ইমামের খুতবা শুনবেন। খুতবা দেয়া প্রসঙ্গেও মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ এটি মনোযোগের সঙ্গে শোনাকে সুন্নতে মোয়াক্কাদা মনে করেন। তবে সব ওলামায়ে কেরামের মতে ঈদের নামাজের পর খুতবা শোনা সুন্নত।

তাই যদি কেউ উল্লেখিত নিয়মে ঈদের নামাজ আদায় করার পর খুতবা দিতে নাও পারেন তবে তাদের ঈদের নামাজ হয়ে যাবে। খুতবা ছাড়া নামাজ হবে কিনা এ নিয়ে চিন্তা বা সন্দেহের কোনো কারণ নেই।

তবে খুতবা ও অতিরিক্ত তাকবির নিয়ে যে যার যার অনুসরণ অনুযায়ী আমল করবে। এ নিয়মে যার যার অবস্থান থেকে জুমার শর্ত মোতাবেক পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করা যাবে।

তবে ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ঈদের জামাত না পেয়ে ঘরে পরিবারের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহির এ পদ্ধতি অনুসরণ করেও নামাজ আদায় করা যেতে পারে। বুখারি ও মুসান্নেফে ইবনে আবি শায়বার বর্ণনায় এসেছে-

হজরত ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি একবার জামাতে ঈদের নামাজ পড়তে পারেননি। তিনি বাসায় এসে তার পরিবারের লোকজন যারা ছিলেন, তাদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং নামাজ পড়েছেন। সে হাদিসের আলোকে করোনা পরিস্থিতিতেও এভাবে বাসায়, মহল্লায়, মসজিদে নিরাপত্তার সঙ্গে নামাজ আদায় করা যাবে।

করোনা পরিস্থিতিতে ঘরে যারা ঈদের নামাজ আদায় করবেন, তারা খুতবা দেবেন কিনা তা নিয়ে আরব বিশ্বের ওলামায়ে কেরাম জানিয়েছেন, ঘরে ঈদের নামাজ আদায়কারীদের জন্য ঈদের নামাজে খুতবা দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে নামাজের নিয়ম মোতাবেক নামাজের শুরু শেষে অতিরিক্ত তাকবিরের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে।

উন্মুক্ত স্থানে ঈদের নামাজ আদায়:

একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ওলামায়ে কেরাম যথাসম্ভব উন্মুক্ত স্থানে নামাজ আদায় করতে বলেছেন। সে আলোকে যার অবস্থানে থেকে সম্ভব হলে বাড়ির আঙিনায় কিংবা যেকোনো উন্মুক্ত স্থানে নামাজ আদায়ের সুযোগ থাকলে তা আদায় করা।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে নিরাপদ থেকে সরকারি নির্দেশনা মেনে ঈদের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।