পৃথিবীর প্রাচীন প্রাণীরা
নিউজ ডেস্ক
ফাইল ছবি
মেসোযোইক যুগে ডাইনোসর বিলুপ্তির ৬৫ মিলিয়ন বছর আগ থেকে প্রায় ১৮০ মিলিয়ন বছরের বেশি সময় ধরে ডাইনোসরের রাজত্ব ছিল। ডাইনোসর নামটি শুনলেই সবার আগে যার নাম মাথায় আসে সেটি হল টি-রেক্স, দুই নম্বরে হয়ত থাকবে টেরোডাকটিল। তবে এগুলো সবই বিলুপ্ত প্রাণী। কিন্তু এমন কিছু প্রাণী পৃথিবীতে এখনো বিদ্যমান যারা ডাইনোসর যুগ থেকে এখন পর্যন্ত বিরাজ করছে। আজ এমনই কিছু প্রাণী সম্পর্কে জেনে নিন যারা ডাইনোসরাস যুগের প্রাণী এবং এখনো পৃথিবীতে বিরাজ করছে।
প্লাটিপাস:
প্লাটিপাস মেসোযোয়িক যুগের প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম স্তন্যপায়ী প্রাণী। ২০০৪ সালে টিনোলোফিস জ্যাবেন বিশ্লেষণ করেন প্লাটিপাস নিয়ে। অন্যদিকে, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওন্টোলোজিস্ট টিম রোয়ের আবিষ্কার করেন প্লাটিপাস ১২২ মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীতে বসবাস করছে। এর দেহের রঙ বাদামী এবং দেহ কিছুটা লোমশ, প্রশস্ত, সমান্তরাল এবং এদের একটি চওড়া লেজ রয়েছে। নাক বেশ বড় এবং রবারের ন্যায়। পায়ের আঙ্গুলে পাতলা আবরণ থাকায় এদের সাতারে খুব সুবিধা হয়। এরা মাটির গর্ত করে ডিম পারে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে বাচ্চাগুলোকে স্ত্রী প্লাটিপাস দেখাশোনা করে এবং দুগ্ধপান করায়। অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে এদের বসবাস।
তেলাপোকা:
তেলাপোকা কার্বোনিফারস সময়কালের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রজাতির মধ্যে একটি। এদের উৎপত্তি প্রায় ৩৬০ মিলিয়ন বছর পূর্বে। যেখানে ডাইনোসরের উৎপত্তি ১১২ মিলিয়ন বছর আগে। এদের আকার বর্তমানের তুলনায় সে সময়ে দ্বিগুণ বড় ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দিতে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, প্রাচীন "ডেভোনিয়ান" প্রজাতি থেকে তেলাপোকার উৎপত্তি। প্রাচীন তেলাপোকার সঙ্গে বর্তমানের তেলাপোকার বেশ কিছু অমিল পাওয়া যায়। সব থেকে বেশী মিল পাওয়া "বাল্টিক এ্যাম্বার"এর সঙ্গে যার উৎপত্তি ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন বছর পূর্বের ইয়োসিন যুগে। আমরা যে তেলাপোকা দেখি এগুলোই বাল্টিক এ্যাম্বার। এরা যে কোনো পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। এমন কি−১৮৮ °F বা −১২২ °C তাপমাত্রায়ও অভিযোজনে সক্ষম।
হর্সশু ক্র্যাব:
তারা বৃশ্চিক এবং মাকড়সার মতই আথ্রোপোডা পর্বের প্রাণী। অন্য প্রাণীদের থেকে এদের বিকাশ খুব ধীরে হয়েছে। এই কাঁকড়াগুলো আরো ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে। এদের প্রকৃতির সর্বাধিক স্থায়ী ভাগ্যবান প্রাণীর বলা হয় কারণ অন্তত চারটি বৃহত্তম বিলুপ্তির ভিতর থেকে এরা এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে। এরা প্রধানত অগভীর সমুদ্র ও নরম বালি বা কাদা সমৃদ্ধ সমুদ্রতলে বাস করে। এরা প্রজননের সময় ডাঙায় চলে আসে এবং নরম মাটি খুরে ডিম পারে। বিজ্ঞানীরা হর্সশু ক্র্যাবের রক্ত সংগ্রহ করে সংশ্লেষিত করেন এবং ফাঙ্গাল সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিষেধক তৈরি করেন। এরা অগভীর পানিতে নরম মাটি বা বালির নিচে বসবাস করে। আজ থেকে ৪৫০ মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তিত হয়ে এতদিন প্রায় অবিকৃত অবস্থায় বিরাজ করার জন্য এদের জীবন্ত জীবাশ্ম হিসেবে গণ্য করা হয়।
গ্রিন সি টার্টলস:
প্রাচীনতম সামুদ্রিক কচ্ছপগুলোর মধ্যে সব থেকে কম বিবর্তিত হয়েছে এ গ্রিন টার্টলস। বিশ্বব্যাপী বিলুপ্তির হাত থেকে বেঁচে থাকতে এ কচ্ছপগুলো তৈরি করে নিয়েছে কিছু অভিনব কৈশল। এই প্রজাতির কচ্ছপ গ্রীষ্মপ্রধান ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করে। এ কচ্ছপগুলোর সব থেকে বড় গুণ, এরা দ্রুত যে কোনো পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে এবং এ কারণেই এরা সংখ্যায় কম হলেও এত বছর টিকে আছে। উদাহরণস্বরূপ, যখন এরা খুব ঠান্ডা স্থানে যায়, তখন কচ্ছপগুলো প্রাকৃতিকভাবে নিজ শরীর হাইবার্নেট করে। আবার যখন এরা খুব গরম বা আশেপাশের স্থান খুব শুষ্ক হয়, তখন কচ্ছপগুলো নরম মাটি খনন করে তার ভেতর অবস্থান করে যতক্ষণ না পর্যন্ত অবস্থা স্বাভাবিক না হয়। প্রাপ্তবয়স্ক একটি কচ্ছপ ১ দশমিক ৫ মিটার বা ৫ ফুট পযর্ন্ত দৈহিকভাবে বৃদ্ধি পায়। পরিপক্ক ও সুস্থ একটি কচ্ছপের গড় ওজন ৭০ থেকে ১৫০ কেজি এবং গড় উপরের খোলসটির দৈর্ঘ্য ৭৮ থেকে ১১২ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ব্যতিক্রমী কিছু গ্রিন টার্টলস্ প্রায় ৩১৫ কেজি বা তার চেয়েও বেশি পরিমাণে ওজন করতে পারে। এরাও ১৫০ মিলিয়ন বছর আগে থেকে প্রায় অবিবর্তিত অবস্থায় রয়ে গেছে।
কুমির:
প্রায় ১০ কোটি বছর আগে যখন পৃথিবী ডাইনোসরে পূর্ণ ছিল তখন কুমিরের সংখ্যাও ছিল প্রচুর এবং আকার ছিল এখনকার কুমিরের থেকে কয়েকগুণ বড়। এসব দৈত্যাকৃতির কুমিরের মধ্যে অন্যতম ছিল সারকোসুকাস, ডিনোসিউকাস, এইজিসিউকাস বা শিল্ডক্রক। মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের "ক্যাসি হলিডে" আবিষ্কার করেন দানব আকৃতির এই কুমিরের ফসিল। যথেষ্ট খাবার, উষ্ণ জলবায়ু, বসবাসের পর্যাপ্ত জায়গা ও বাতাসে প্রচুর অক্সিজেন থাকার কারণে এরা বৃহত্তর আকারে পৌঁছাতে পেরেছিল। এখনো প্রায় ২৩টি ভিন্ন কুমির প্রজাতি বিদ্যমান রয়েচে। এ কুমিরগুলো এতটাই বৃহৎ ও শক্তিশালী ছিল যে এরা ছোট খাট ডাইনোসর খেয়ে ফেলত। টেক্সাস এর ডালাস ফোর্ট ওর্থ অঞ্চলে এমন এক কুমিরের ফসিল পাওয়া গিয়েছিল।
নিউজওয়ান২৪/জেডএস
- বাঙালির বংশ পদবীর ইতিহাস
- গন্ধভাদালি লতার উপকারিতা
- ‘ময়ূর সিংহাসন’
- মিশরীয় সভ্যতা এবং নীল নদ
- মধ্যযুগের ইতিহাস
- ব্যবহারের আগে জানুন প্লাস্টিক বোতলে চিহ্নের মানে কী
- পবিত্র কাবা শরীফের অজানা যত তথ্য
- হ্যালুসিনেশন আসলে কী, রোগ না অন্য কিছু?
- পিরামিডের অজানা তথ্য…
- বিকাশ নগদ এবং রকেট’র ভুল নম্বরে টাকা চলে গেলে ফেরত পাবেন যেভাবে
- চুম্বকের আদ্যোপান্ত...
- ‘চুম্বন’ আদর ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ
- ‘রক্ত’ রঙের রহস্য...
- ‘ধানমন্ডি’ নামকরণের ইতিহাস
- মানুষের পর বুদ্ধিমান প্রাণী...