তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে...
ইফতেখায়রুল ইসলাম
ইফতেখায়রুল ইসলাম: অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার
কলিম আর সলিম দুই বন্ধু। কলিম দিন-রাত খাটুনি দেয় কিন্তু পাড়া, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন কারো মন পায় না। সবাই কথায় কথায় কলিমকে কথা শোনায়! নানা প্রতিবন্ধকতা জানা সত্ত্বেও সলিমও বাদ যায় না কলিমকে দোষারোপ করতে!
কলিম ভাবে কিভাবে সকলের মন জয় করা যায়? কলিম অনেক চিন্তা করেও খুঁজে পায়না কোনো উপায়। কলিমের প্রতিবেশী চোরাই লাইন টেনে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। কয়েকবার বলা সত্ত্বেও তাঁর কোনো হুঁশ নাই। প্রতিবেশীর মা এসে কাঁদো কাঁদো গলায় বলেন, বাবা আমরা গরীব মানুষ তাই সরাসরি লাইন টানতে পারিনা। অথচ তাঁদের বাসায় প্রতিদিন দারুণ রান্না হয়, সুগন্ধে চারিপাশ মৌ মৌ করে। আসবাবের কোনো অভাব নাই বাসায়! কলিম মনে মনে ভাবে সত্যিকারের গরীব কি তবে এমন?
আব্দুল চাচার ছেলে বিদেশে লোক পাঠান, প্রতিবছরই কারো না কারো টাকা মেরে দিয়ে ভেগে যান। চাচা সবসময় নামাজ পড়েন আর কলিমকে নসীহত করেন যেন যথাযথভাবে সে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন; এমনিতেই নাকি কলিমদের অনেক বদনাম! আহা কলিমের চাকরি!!
আব্দুল চাচার বাসার দুই ঘর পরই ৫ তলার একটি বিল্ডিং! সেখানে একসময় একটি একতলার টিনের ঘর ছিল। বছর দুয়েক পর এত চাকচিক্যময় অট্টালিকার সামনে কলিমের নিজেকে খুব ছোট্ট ঠেকে। একটি প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর আভিজাত্যে কলিমের অস্তিত্ব কেমন যেন মিশে যায়! কলিমকে ভাই বলে ডাকা সেই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীও বলে, জানেন ভাই দেশটা একেবারে রসাতলে গেল! কি যে হবে? কলিম ভাষাহীন, শব্দহীন।
অন্যদিকে সলিমকে কদাচিৎ দেখা যায়! কাজ করে আবার হয়তো করে না! কে রাখে সেখানের খবর? প্রত্যাশার পারদও বাড়েনা সলিমদের কাছে আবার সলিমদের দায়ও এসে যায় কলিমদের ঘাড়ে! সলিম শুধু কলিমকে দেখে হাসে আর বলে হাবা কোথাকার!
কলিম কবিতা আওড়ায়
" হাসতে নাকি জানেনা কেউ, কে বলেছে ভাই?
এই দেখোনা কত হাসির খবর বলে যাই..."
কলিম চারপাশের নোংরামি দেখে দেখে ত্যক্ত, বিরক্ত! কলিমের ভাবনার জায়গাও সংকীর্ণ ; সবকিছু তাকে ভাবলে চলেনা; ভাবা গেলেও মুখে আনা চলেনা! কলিম এই সমাজের হয়েও যেন অচ্ছুৎ! বন্ধু হিসেবে কলিমদের রাখা সহজ, ব্যবহার করে নিশ্চিন্তে চিপসের প্যাকেটের মত ফেলে দেয়া যায়। অবশিষ্ট সকলেই উঁচু তলার বাসিন্দা তাই তাঁদের নিয়ে সমাজের তথাকথিত সুশীল শ্রেনিও টু শব্দটি করেন না! জাত শুধু কলিমদের পেশায়ই যায়, আর কারো পেশাতেই জাত যাওয়ার বালাই নাই!
কলিমের মাথায় শুধু কবিতা আসে,
সলিমকে ডাকিয়া বলে কলিম মশাই
কুঁড়ে ঘরে থেকে করিনা কোন বড়াই
তুমি থাকো মহাসুখে অট্টালিকা পরে
আমি কত কষ্ট পাই রোদ,বৃষ্টি, ঝড়ে!
কলিমরা সকলেই হয়তো একরকম নয় তথাপি "ব্লেইম গেইমে" কলিমেরা সাম্যতা চায়! যার যতটুকু, তাকে ততটুকু বুঝিয়ে দেয়া হোক! কলিমের পেশার দায়ের বাইরে অন্য পেশার অদৃশ্য দায় আর কলিমদের মতই অন্য কারো দায় কলিমরা নিতে চায় না! যারা দায় চাপানোর দায়টুকু সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেন না, কলিমরা তাদের জন্য এক ধরণের করুণা অনুভব করে।
কলিম ভেবে চলে,
চারিপাশে এত বেশি অবিশুদ্ধ মানুষ তাঁদের পেশাকে নগ্নভাবে ব্যবহার করার পরও তাঁদের নিয়ে কথা হয় কদাচিৎ! বিষয়টি এমন যে, বছরে একবার স্মরণ করলেই হলো আর কি। কেউ কেউ আবার জামাই আদরে সমাদৃত সকলের কাছে; পাছে তাঁরা আবার কোনোকিছু টান দিয়ে বসেন! বেচারা কলিম পড়েছে মহাবিপদে। সবাই কথা শোনায়! একজীবনে এত কথা কলিম ও তার চৌদ্দ গোষ্ঠী শুনেছে কিনা তাঁর স্মরণে নেই। কলিম শুধু ভাবে সব দোষ যদি তাঁদেরই হয় তবে অবশিষ্ট সকলে বুকে হাত রেখে কেন বলেনা এরা ছাড়া আমরা সবাই ভাল! নিজের পান থেকে চুন খসলে সমস্যা তো আছেই, তাঁর বাইরেও দায় আছে বেচারা কলিমের! অন্য কারো দোষও আজকাল চাপিয়ে দেয়া হয় এই কলিম বেচারার উপর! নিজের ব্যথায় বাঁচেনা আবার আরেকজনের দায় ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়! এমনটি নয় শুধু পাশের বাড়ির রতন আর করিমরা চাপিয়ে দিচ্ছে। অত্যন্ত দায়িত্বশীল পর্যায়ের মানবেরাও চাপিয়ে দিচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে ভুল সংশোধনে তাঁদের আবার কোনো বালাই নেই।
কলিমের ছোট্ট হৃদয় ভার নিতে নিতে ক্লান্ত, এত চাপ তাঁর অন্তর আজকাল আর নিতে সায় দেয়না! পাছে বড় কোনো অসুখ দানা বাঁধে! করিম শুধু মনে মনে ভাবে এত এত অসংগতিতে পূর্ণ, নৈতিক অবক্ষয়ে আক্রান্ত সাধু ও সুধী মানবেরা নিজের হৃদয়ের কালিমা না মুছে শুধু কলিমকেই কেন দোষী সাব্যস্ত করে! সকলে যদি সৎ আর সততার ঝান্ডা নিয়েই অগ্রবর্তী দলেই থাকেন তবে এত পঙ্কিলতায় পূর্ণ কেন আমরা? মজাটা আসলে কোথায়? সব দোষ বুঝি কলিমদেরই? সলিমদের কখনোই দোষ হয়না, তাঁদের দোষ হতে নেই!
কলিম ঘুমুতে যাওয়ার সময়ও কবিতার দুটি লাইন আওড়াচ্ছে
আমি শুনে হাসি, আঁখি জলে ভাসি, এই ছিল মোর ঘটে
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে...! (লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে)
[ইফতেখায়রুল ইসলাম: অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (প্রশাসন), ওয়ারী বিভাগ, ডিএমপি, ঢাকা]
নিউজওয়ান২৪.কম/এনআইকে
- সংবাদ পাঠিকার এ কেমন পোশাক!
- পৃথিবীর বিখ্যাত হোটেল- যেখানে খেতে পয়সা লাগে না!
- জুজুর ভয়ের ফেরিওয়ালা বনাম শক্তহাতে লাগাম ধরা এক সারথী
- ‘পিরিয়ড’কে লজ্জা নয়, স্বাভাবিক ভাবুন
- বই উৎসব `আলোর উৎসব`
- পোস্টার, লিফলেট ও মেমোতে ‘বিসমিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ প্রসঙ্গে..
- স্মৃতিতে ‘৭১
- সেক্স রোবটদের মাঝে আসবে ভালোবাসার অনুভূতি!
- নভেম্বর রেইন
- নাসিমা খান মন্টির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা নাঈমুল ইসলামের
- ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স: যে দক্ষতা আপনাকে নিয়ে যাবে বহুদূর!
- কায়নাতকে আপনাদের প্রার্থণায় রাখবেন প্লিজ...
- তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে...
- মানসিক করোনাযাত্রা
- বাংলাদেশ যেভাবে পেলো সেন্ট মার্টিন