ঢাকা, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

জেগে থাকা ও ঘুম...

প্রকাশিত: ১২:২৫, ২৭ অক্টোবর ২০১৮  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

 

জেগে থাকা ও ঘুমের মধ্যে যখন একটা সুন্দর ছন্দ থাকে- যদি ইচ্ছামতো ঘুমানো ও ইচ্ছামতো জাগতে পারেন, তখনই জেগে থাকা ও ঘুমের আনন্দ পুরোপুরি অনুভব করা সম্ভব।

আর এ অনুভূতি থেকে আমরা বেশিরভাগই বঞ্চিত। যেমন কেউ ঘুমাতে চাচ্ছেন কিন্তু ঘুমাতে পারছেন না, বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ-ওপাশ করছেন। আবার কারো সমস্যা, জেগে উঠতে চাচ্ছেন কিন্তু কিছুতেই চোখ মেলতে পারছেন না। বিছানায় একবার উঠে বসলেন আবার বালিশে মাথা এলিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে আবার জেগে থাকা ও ঘুমকে একসঙ্গে মিশিয়ে ফেলেন অর্থাৎ তারা জাগেনও না, ঘুমানও না, তারা অকারণে ঝিমুতে থাকেন।

1.ঘুমের ধরন...

একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমানো উচিত। শিশুদের ক্ষেত্রে সেটা দশ ঘন্টা। মানব মস্তিষ্কের মেডুলা ও মধ্য মস্তিষ্ক এর মাঝখানে রয়েছে ওয়েকিং সেন্টার বা জেগে থাকার কেন্দ্র। জেগে থাকার কেন্দ্র যখন কাজ করে তখন জেগে থাকি। আর এই কেন্দ্রটি যখন কাজ করা বন্ধ করে দেয় তখন ঘুমিয়ে পড়ি। ওয়াকিং সেন্টার নিয়ন্ত্রিত হয় হরমোন সঙ্কেত দিয়ে। আর এ হরমোন নিঃসরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয় শরীরের মাধ্যমে। এ হরমোনের মাত্রা কমতে কমতে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় এলে জেগে থাকার কেন্দ্র কাজ বন্ধ করে দেয়, ফলে ঘুমিয়ে পড়ি। অতি ধীরে ধীরে বাইরের জগতের সঙ্গে মানসিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে শিথিল হতে থাকে দেহের নানা ধরনের মাংসপেশী। ঘাড় পিঠ বা হাতের ওপরের দিকে পেশী। প্রথমে শিথিল হয়, তারপর পায়ের আঙুল পায়ের পাতা হাতের নিচের দিকের পেশী। এরপর ছোট পেশীগুলো শিথিল হতে থাকে।

2.ঘুমের ধরন...

ঘুম গভীর হলে কমে যায় হার্ট রেট, পালস রেট, ব্লাড প্রেসার ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি। শিথিল পেশীগুলোর রক্তনালী প্রসারিত হওয়ায় বেশি পরিমাণ রক্ত সেগুলোতে জমতে থাকে। তাই ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকের চোখ মুখ লালচে ও ফোলা ফোলা লাগে। দেহের বিপাক ক্রিয়ার হার ঘুমের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে যায়, সেজন্য ঘুমের আগে পেট ঠেসে খেতে নেই, খেলে হজম হয় না। ঘুমালে স্পর্শ, গন্ধ, দৃষ্টির অনুভূতি পুরোটাই প্রায় চলে যায়। শ্রবণ অনুভূতিটাই শুধু সক্রিয় থাকে। মুখের পেশী শ্লথ হয়ে যাওয়ায় ঘুমালে অনেকের মুখ দিয়ে লালা গড়ায়। কিডনির কার্যক্রমও কমে আসে সেসময় যেটুকু মূত্র তৈরি হয় তা ব্লাডারে জমতে থাকে ধীরে ধীরে। তাই ঘুম ভাঙলেই মূত্রের বেগ হয়।

3.ঘুমের ধরন...

বিজ্ঞানীরা ঘুমকে বিভক্ত করেছেন দুই ধাপে: REM (রেপিড আই মুভমেন্ট) Sleep এবং Non-REM (নন রেপিড আই মুভমেন্ট) Sleep হিসেবে। রেম ঘুমে চোখ দ্রুত নড়াচড়া করে অর্থাৎ কম্পিত হয়। তাই একে 'কম্পাক্ষি নিদ্রা' বলে; নন-রেম ঘুমের সময় চোখের নড়াচড়া হয়না বলে এর আরেক নাম 'স্থিরাক্ষি নিদ্রা'। ঘুমের জন্য ব্রেইনে এখনো কোনো আলাদা কেন্দ্র আবিষ্কৃত হয়নি। জেগে থাকা কেন্দ্র থেকেই ঘুম নিয়ন্ত্রিত হয়। মনে করা হয় বেকিং সেন্টারের সুপ্রাকায়াজমাটিক নিউক্লিয়াসের তৎপরতা নিয়ন্ত্রিত হয় হরমোন দিয়ে। নন রেম ঘুম দিয়ে ঘুমানোর কাজ শুরু হয়। ৯০ মিনিটের একটা ঘুম চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। সারা রাতে চার থেকে ছয়বার এই চক্র কাজ করে। ৯০ মিনিটের এই চক্রের ১০-২০ মিনিট বরাদ্দ থাকে রেম ঘুমের জন্য। ঘুমের প্রথম দিকে নন-রেম ঘুম বেশি হয়। পরে রেম ঘুম বেশি হয়। ঘুমানোর সময় যত বাড়তে থাকে রেম ঘুমের পরিমান তত বাড়তে থাকে। রেম ঘুম আসলে হালকা ঘুম, এসময় মানে কম্পাক্ষি নিদ্রা পর্বে চোখ নড়ে। মানুষ স্বপ্ন দেখে রেম ঘুমের সময়, যখন কারো ঘুমের মাঝে তার চোখ নড়ে বা চোখের পাতা কাঁপে বুঝে নিতে হবে সে স্বপ্ন দেখছে।

নিউজওয়ান২৪/আরএডব্লিউ