ঢাকা, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

‘ক্যাসিনো, জুয়া ও অশ্লীলতার নিয়ন্ত্রক সম্রাট’: খালেদ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ঢাকার মতিঝিল এলাকায় অবস্থিত ছয়টি ক্লাবে ক্যাসিনো, জুয়ার আসর ও অশ্লীলতার নিয়ন্ত্রক ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এবং সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। 

ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া -ফাইল ফটো

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ওই তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে অভিযান চালায় র‍্যাব। আটক করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজকে। এসব অভিযানে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকও জব্দ করা হয়।

‘দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সারাদেশে শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়েছে’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শনিবার বলেছেন, ‘অনিয়মকারী যে দলেরই হোক তাকে পাকড়াও করা হবে। এখনো সময় আছে, এসবের সঙ্গে জড়িতরা সাবধান হয়ে যান।’ ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে র‍্যাবের অভিযান শুরু হয়েছে। আটক করা হচ্ছে সরকারদলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের। ‘অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে’ বলেও সতর্ক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

এছাড়া ‘ক্যাসিনো মামলায় যুবলীগের যাকেই গ্রেফতার করা হবে তাকেই বহিষ্কার করব’- বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। ফলে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সরকারদলীয় সংগঠনের এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ব্যক্তিরা এখন আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজধানীর ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের বড় একটি অংশই মূলত চলে দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায়। বর্তমানে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন। যেকোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।

এদিকে, অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় সাতদিনের রিমান্ডে থাকা যুবলীগ নেতা খালেদ হোসেন ভূঁইয়া সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন যে, মতিঝিল এলাকায় অবস্থিত ছয়টি ক্লাবে ক্যাসিনো, জুয়ার আসর ও অশ্লীলতার নিয়ন্ত্রক ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

তদন্ত সূত্র আরো জানায়, মতিঝিলে মোট ছয়টি ক্লাব রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সভাপতি স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউছার; আরামবাগ, দিলকুশা ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে মমিনুল হক সাঈদ, ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এবং ইয়াংমেন্সের সভাপতি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।

সম্রাট ও খালেদ দুটি ক্লাবের সভাপতি হলেও দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ওই ছয়টি ক্লাবের প্রতিটি জুয়ার আসর সম্রাট ও খালেদের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চলতো। এছাড়া দৈনিক তারা দুজন জুয়ার আসর থেকে চাঁদা উত্তোলন করতেন।

চাঁদার নির্দিষ্ট পরিমাণ না জানলেও সূত্র জানায়, ক্লাবপ্রতি চাঁদার হার প্রতি রাতে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা।

গত বুধবার অবৈধ অস্ত্র ও ইয়াবা রাখার অপরাধে খালেদকে গ্রেফতার করা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে সম্রাট। খালেদকে বুধবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করেন র‌্যাব সদস্যরা। পরদিন তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিং মামলা করে র‌্যাব। এর মধ্যে মাদক ও অস্ত্র মামলায় সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়া মামলার তদন্তভার দেয়া হয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)।

ক্যাসিনোর বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ জানান, তিনি ইয়াংমেন্স ক্লাবের সভাপতি। মতিঝিলের আশপাশে কয়েকটি ক্লাবে আগে থেকেই ক্যাসিনো ও জুয়া চলতো। যখন ইয়াংমেন্সের খরচ চালানো কষ্টকর হচ্ছিল তখন একজন ব্যবসায়ী খালেদকে ক্যাসিনো স্থাপনের প্রস্তাব দেন। খালেদ সেই প্রস্তাবে রাজি হন। খালেদের সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীর চুক্তি হয় যে, তিনি ক্যাসিনোর আয় থেকে একটি নির্ধারিত অংশ ক্লাবের জন্য এবং একটি অংশ খালেদকে দেবেন। তবে ওই ব্যবসায়ীর নাম বলেননি খালেদ।

সূত্র আরো জানায়, খালেদের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশি ওই ব্যবসায়ী নয় মাস আগে ক্যাসিনো স্থাপনের জন্য দেড় কোটি টাকা দিয়ে সরঞ্জাম আনেন। এর দুই মাস পর পুরোদমে ক্যাসিনো পরিচালনা শুরু হয়। প্রতিদিন রাতে ওই ব্যবসায়ী ক্যাসিনোর একটি ভাগ খালেদের কাছে পৌঁছে দিতেন। আরেকটি অংশ যেত পুলিশসহ প্রভাবশালী কয়েকজনের পকেটে। তবে গত দু-তিন মাস আগে ওই ব্যবসায়ী এক নেপালিকে ক্যাসিনোর দায়িত্ব দিয়ে চলে যান।

খালেদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কয়েকটি ক্যাসিনোর ‘নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণের যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের নাম বলেছেন।

সূত্র জানায়, খালেদের বিরুদ্ধে প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ঠিকাদারি কাজ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে খালেদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি সিটি কর্পোরেশনের মতিঝিলের সড়ক মেরামতের ৫২ কোটি টাকার কাজ করছেন। সম্প্রতি পূর্বাচলে ৪০ কোটি টাকার সরকারের একটি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেন তিনি।

কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে শনিবার আদালতে তোলা হয়
খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমমর্যাদার এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ইয়াবা রাখার মামলা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ ‘ইয়াবা আসক্ত নয় কিংবা ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়’ বলে দাবি করেছেন। এছাড়া অবৈধ অস্ত্রটি কীভাবে তার কাছে এলো সে বিষয়ে তিনি ‘কিছুই জানেন না’ বলে দাবি করেছেন। তবে তিনি (খালেদ) জানান, লাইসেন্স করা দুটি আগ্নেয়াস্ত্র সময়মতো তিনি নবায়ন করতে পারেননি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে র‍্যাবের হাতে আটক হন ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

সম্প্রতি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরই ছাত্রলীগের পদ হারান শোভন-রাব্বানী। এরপর আটক হন খালেদ। শুক্রবার যুবলীগের অপর আলোচিত নেতা জি কে শামীমকে নিকেতনের নিজ কার্যালয় থেকে আটক করা হয়।

রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে আটক করে র‍্যাব। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে জি কে শামীমের নিকেতনের ডি ব্লকের ৫ নম্বর রোডের ১৪৪ নম্বর বাসা ঘিরে ফেলে র‍্যাব। এর আগে নিকেতন এলাকায় জি কে শামীমের আরেকটি বাসা থেকে তাকে ডেকে আনা হয়। পরে তাকে আটক করেই অভিযান চালায় র‍্যাব। অভিযান শেষে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে শামীমকে র‍্যাব কার্যালয়ে নেয়া হয়।

শামীমের সঙ্গে তার সাত দেহরক্ষীকেও আটক করা হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা হয় এক কোটি ৮০ লাখ নগদ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত)। এর মধ্যে তার মায়ের নামে ১৪০ কোটি টাকা ও ২৫ কোটি টাকা তার নামে।

শুক্রবার রাতেই র‍্যাবের অভিযান পরিচালিত হয় রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবে। আটক করা হয় ক্লাবটির সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে। অভিযানের সময় শফিকুলের কাছে সাত প্যাকেট গন্ধহীন হলুদ রঙের ইয়াবাসহ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এছাড়া জব্দ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ক্যাসিনোতে খেলার কয়েন, স্কোরবোর্ড ও ৫৭২ প্যাকেট তাস। র‍্যাবের ধারণা, এ ক্লাবে ক্যাসিনো খেলা হতো।

ওই রাতেই রাজধানীর ধানমন্ডি ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সেটি বন্ধ থাকায় সেখানে থাকা বারটি সিলগালা করে দেন র‍্যাব সদস্যরা।

তবে অপর একটি গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের বড় একটি অংশ চলে দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তার অধীন ক্যাসিনোর সংখ্যা ১৫টিরও বেশি। এসব ক্যাসিনো থেকে প্রতি রাতে তার পকেটে যায় ৪০ লাখ টাকারও বেশি।

শুধু সম্রাট নয়, রাজধানীর অধিকাংশ ক্যাসিনোতে কর্মরত আছেন নেপালিরা। তাদের হাত ধরে কোটি কোটি টাকাও দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে।

গোয়েন্দা তথ্যে ক্যাসিনোভিত্তিক সম্রাটের প্রতি রাতের আয়-

ভিক্টোরিয়া ক্লাব:
ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ২০১৫ সালে ক্যাসিনো খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশে অবৈধ এ ব্যবসা শুরু করেন নেপালের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দীনেশ ও রাজকুমার। তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন বিনোদ মানালী। ভিক্টোরিয়ায় ক্যাসিনো চালুর কয়েক মাসের মধ্যেই বাবা নামের এক নেপালি নাগরিকের কাছে ক্যাসিনোটি বিক্রি করে দেন তারা। তখন থেকে বাবা ও তার ম্যানেজার হেমন্ত মিলে ক্যাসিনোটি চালাতে থাকেন।

ভিক্টোরিয়া ক্লাবের সভাপতি কাজল ও সাধারণ সম্পাদক তুহিন। প্রতিদিন এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ভাড়া নেন তারা। আর সম্রাটের চাঁদা দিনে চার লাখ টাকা। তার সহযোগী যুবলীগ নেতা আরমান ও খোরশেদ প্রতিদিন গিয়ে চাঁদার টাকা নিয়ে আসতেন। ক্লাবের সিসি টিভি ক্যামেরা পরীক্ষা করলেই এর সত্যতা পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কলাবাগান ক্লাব:
ঢাকার নামকরা জুয়ারি সেন্টু ২০১৬ সালে কলাবাগান ক্লাবে ক্যাসিনো খোলেন নেপালি নাগরিক দীনেশ, রাজকুমার ও অজয় পাকরালের সঙ্গে অংশীদারিত্বে। এখান থেকে প্রতিদিন দুই লাখ টাকা করে চাঁদা নিতেন সম্রাট। এখান থেকেও চাঁদা তুলতেন আরমান। অভিযোগ আছে, চাঁদার অঙ্কে বনিবনা না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ওই ক্লাব বন্ধ করে দেন সম্রাট। অনেক দেনদরবার করেও আর ক্যাসিনোটি চালু করতে পারেননি সেন্টু।

সৈনিক ক্লাব:
মালিবাগ-মৌচাক প্রধান সড়কের পাশের একটি ভবনে অবস্থান সৈনিক ক্লাবের। অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের নামে এ ক্লাব চলে। এটি নির্ধারিত টাকায় ভাড়া নিয়ে ক্যাসিনো খোলেন যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন ও এ টি এম গোলাম কিবরিয়া। তাদের অংশীদার নেপালি নাগরিক প্রদীপ। এ ক্লাব থেকে প্রতিদিন চার লাখ টাকা চাঁদা পান সম্রাট।

ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব:
বনানী আহমেদ টাওয়ারের ২২ তলায় ঢাকা গোল্ডেন ক্লাব চালু করেন চাঁদপুরের ব্যবসায়ী আওয়াল পাটোয়ারী ও আবুল কাশেম। ক্লাবটি চালুর কিছুদিনের মধ্যেই কৌশলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর বাড়ে সম্রাটের মাসোহারা অঙ্ক। আর তোলাবাজ আরমান জোর করে ক্লাবটির মালিকানায় ঢুকে যান। নেপালি নাগরিক অজয় পাকরালের তত্ত্বাবধানে চলত ক্যাসিনোটি। এখান থেকেও সম্রাটের জন্য প্রতিদিন ৪ লাখ টাকা চাঁদা তুলতেন আরমান।

ওয়ান্ডারার্স ক্লাব:
এ ক্লাবে ক্যাসিনো খোলেন নেপালি নাগরিক হিলমি। তার অংশীদার মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোবাশ্বের। সম্রাটের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চলে এই ক্যাসিনোটি। এখান থেকে প্রতিদিন সম্রাটের চাঁদা ৫ লাখ টাকা। আরমান, খোরশেদ ও জাকির এই ক্যাসিনো থেকে চাঁদার টাকা নিয়ে যান।

দিলকুশা ক্লাব:
এ ক্লাবের মালিক নেপালি নাগরিক দীনেশ, রাজকুমার ও ছোট রাজকুমার। ভারতীয় আরও দু’জন অংশীদার থাকলেও তাদের নাম জানা যায়নি। এই ক্যাসিনো থেকে সম্রাটের প্রতিদিনের চাঁদা ৪ লাখ টাকা। এর বাইরে আরমানের নিজের চাঁদা ১ লাখ। জানা গেছে, ক্লাবটি চালু করতে সম্রাটকে অগ্রিম দিতে হয় ৪০ লাখ টাকা। আর আরমান অগ্রিম নেন ১০ লাখ। আরমানের ছোট ভাই ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযানের সময় ধরা পড়লে তাকে ১ বছরের সাজা দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আরামবাগ ক্লাব:
এক সময়ের ফুটপাত হকার, বর্তমানে মতিঝিল থানা যুবলীগ নেতা জামালের মালিকানায় ক্যাসিনো খেলা হয় আরামবাগ ক্লাবে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ তার অলিখিত অংশীদার। আছে নেপালি অংশীদারও। এই ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন সম্রাটের চাঁদা তিন লাখ টাকা। ক্যাসিনোটির খরচের খাতা দেখলেই এই চাঁদার পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফুয়াং ক্লাব:
তেজগাঁও লিংক রোডের ফুওয়াং ক্লাবে একসময় মদ বিক্রির পাশাপাশি নিয়মিত বসত ডিজে গানের আসর। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্লাব মালিক নূরুল ইসলামের সঙ্গে তেজগাঁও জোনের এক পুলিশ কর্মকর্তার ‘ঝামেলা’র কারণে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় ডিজে আয়োজন। এরপর ওই কর্মকর্তার সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ক্লাবের দোতলার হল রুমে বসানো হয় ক্যাসিনো। ক্লাবটির একক মালিক নূরুল ইসলাম পুরস্কার ঘোষিত এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর আত্মীয় হওয়ায় এই ক্লাবে সম্রাটের চাঁদার পরিমাণ কম, দিনে ২ লাখ টাকা।

মোহামেডান ক্লাব:
বনানীর ঢাকা গোল্ডেন ক্লাবের মালিক ব্যবসায়ী আবুল কাশেম ও মতিঝিলের স্থানীয় যুবলীগ লীগ নেতা ইমরানের মালিকানায় মোহামেডান ক্লাবে চলছিল ক্যাসিনো। এর নেপালি অংশীদার কৃষ্ণা। রাজধানীর সবচেয়ে অত্যাধুনিক ক্যাসিনোটিতে এরই মধ্যে অভিযান চালানো হয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন আরমানের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন সম্রাট।

মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব:
সম্রাটের চাচা হিসেবে পরিচিত পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী আলী হোসেন এই ক্লাবে ক্যাসিনো চালু করেন। দীনেশ ও রাজকুমার তার ব্যবসায়িক অংশীদার। আলী হোসেনের নামে ক্যাসিনোটি চললেও এর মূল মালিক সম্রাট নিজেই, যদিও কাগজে-কলমে তার নাম নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তারপরও তার চাঁদার টাকা আলাদা। প্রতিদিন চাঁদার পরিমাণ ৫ লাখ টাকা।

ইয়ংমেনস ক্লাব:
চারদিকে জুয়ার টাকা উড়তে দেখে লোভে পড়েন যুবলীগের আরেক নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননকে চেয়ারম্যান করে প্রতিষ্ঠা করেন ইয়ংমেনস ক্লাব। ফুটবল, ক্রিকেটের উন্নয়নের কথা বলে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠার পর অত্যাধুনিক সরঞ্জাম এনে নিজেই চালু করেন ক্যাসিনো। কমলাপুর আইসিডির কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে চীন থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক সরঞ্জাম এসে বসান তার ক্যাসিনোতে। এখান থেকেও দিনে ৪ লাখ টাকা চাঁদা নিতেন সম্রাট।

এজাক্স ক্লাব:
এলিফেন্ট রোডের এজাক্স ক্লাব চালু হয় যুবলীগ নেতা আরমান, তছলিম ও খোরশেদের তত্ত্বাবধানে। নেপালি নাগরিক ছোট রাজকুমারকে দিয়ে ক্যাসিনোটি চালু করেন তারা। এই ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন সম্রাটের চাঁদা ৩ লাখ টাকা।

উত্তরার ক্যাসিনো:
দীনেশ ও রাজকুমারের অংশীদারিত্বে উত্তরায় এপিবিএন অফিসের উল্টো পাশে একটি ভবন ভাড়া করে চালু করা হয় একটি ক্যাসিনো। তাদের পার্টনার হন তছলিম নামের এক স্থানীয় যুবলীগ নেতা। এরপর ওই এলাকায় সম্রাটের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় যুবলীগ নেতাদের মাধ্যমে আরও কয়েকটি ক্যাসিনো গড়ে তোলা হয়। প্রতিটি ক্যাসিনোতে সম্রাটের চাঁদা দিনে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা।

নিউজওয়ান২৪.কম/এমজেড

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত