ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

কথা রাখছেন প্রেসিডেন্ট দুতার্তে: ফিলিপাইনে এবার মেয়রসহ নিহত ১০

অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ২৩:২০, ৩১ অক্টোবর ২০১৬

প্রেসিডেন্ট দুতার্তে        -ফাইল ফটো

প্রেসিডেন্ট দুতার্তে -ফাইল ফটো

ফিলিপাইনে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গত শুক্রবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সাউদি আমপাতুয়ানের মেয়র ও তার নয় দেহরক্ষী নিহত হয়েছে। ঘটনার দিন দেশটির প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের অপরাধবিরোধী অভিযান জোরদারের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই এ ঘটনা ঘটে।

প্রেসিডেন্ট দুতার্তে ঘোষিত অবৈধ মাদক ব্যবসায়ে জড়িতদের তালিকায় মেয়র সামসুদিনের নাম ছিল।
সামসুদিন দিমাউকম নামের ওই মেয়রের বিরুদ্ধে মাদক মজুদ ও ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতার্তে নিজেও একজন মেয়র ছিলেন। সন্ত্রাস ও অপরাধের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত দুতার্তে দেশটির দাবাও শহরের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। দেশজুড়ে সেই জনপ্রিয়তার জোয়ারেই পরে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

এদিকে. শুক্রবারের ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের বয়ান হচ্ছে, অবৈধভাবে মাদক চোরাচালান হচ্ছে এমন খবরে রাজধানী ম্যানিলা থেকে সাড়ে নয়শো কিলোমিটার দক্ষিণে মাকিলালা শহরের একটি সড়কে অবস্থান নেয় তারা। এসময় কয়েকটি গাড়ি থেকে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। হামলাকারীরা মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। তবে পাল্টা গুলিতে সাউদি আমপাতুয়ানের মেয়র সামসুদিন ও তার নয় দেহরক্ষী নিহত হয়।

এই বয়ান আমাদের অতি পরিচিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘ক্রসফায়ার’ সঙ্গে হয়তো মিলে যাচ্ছে। তবে এখানে উল্লেখনীয় বিষয় হচ্ছে- গত জুনে ক্ষমতায় আসার পর পর মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন ফিলিপাইনি প্রেসিডেন্ট দুতার্তে। এ পর্যন্ত চার শয়ের বেশি মানুষ সন্ত্রাস ও মাদক বিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছে।

কঠিনপাত্র প্রেসিডেন্ট দুতার্তে

সিদ্ধান্ত তথা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তার কঠোরতা আর নির্মমতা ফুটে উঠেছিল তাকে নিয়ে করা বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ কাহিনীতে। গত মে মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার আগে প্রকাশিত টাইমের ওই সংখ্যার প্রচ্ছদে দুতার্তের সাদাকালো ছবিসহ শিরোনাম দেওয়া হয়েছিল- ‘দ্য পানিশার’ অর্থাৎ ‘জনাব শাস্তিদাতা’।

গত জুলাই মাসে চাইনিজ বংশোদ্ভূত ফিলিপাইনি নাগরিক পিটার লিমকে দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাওয়ের একটি সরকারি অফিসে ডেকে এনে সরাসরি হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট দুতার্তে। কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী পিটারকে তিনি সর্বনাশা এই ব্যবসা ছাড়ার নির্দেশ দেন।

এ ঘটনার খবর ফিলিপাইনসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে তোলপাড় তোলে। পিটারকে হুমকিতে প্রেসিডেন্ট নাকি বলেন, তার কথা না শুনলে পিটার সেখান থেকে গিয়ে প্লেন থেকে বাইরে পা রাখা মাত্রই তাকে হত্যা করা হবে।

পিটার ওই কথায় একেবারে ‘সোজা আলিফ’ হয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রেসিডেন্টের প্রশংসায় গদগদ হয়ে যান।

মিন্দানাওয়ের যেই দাবাও শহরের মাদক নিয়ন্ত্রণ অফিসে পিটারকে ডেকে ধমকান প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো- লম্বা সময় ধরে সেই শহরের মারকুটে মেয়র ছিলেন তিনি। তখন চরম নিষ্ঠুর-নির্মম আর কঠোর হস্তে দমন করেছেন অপরাধ। ওই সময়টায় এমন ঘটনা অহরহ ঘটতো যে আগের দিন স্থানীয় রেডিওতে মেয়র রদ্রিগো অভিযুক্ত অপরাধীদের নাম উল্লেখ করেছেন আর পরদিন তাদের লাশ পাওয়া যেত শহরের রাস্তায়।

অপরাধীদের বিরুদ্ধে খড়গহস্তের কারণে ব্যাপক জনপ্রিয় মেয়র রদ্রিগো গত মে মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে নিরংকুশ বিজয়ের মাধ্যমে দেশের প্রেসিডেন্ট হন। ক্ষমতায় বসে এ যাবত প্রায় ৪০০ মাদক ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছেন। এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। কাউকেই ছাড় দিচ্ছেন না- পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে দেশের নামী-দামি রাজনীতিক ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রের শীর্ষ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন মাদক ব্যবসায়ে সংশ্লিষ্টতার। 

তবে দেশজুড়ে গণহারে মাদক ব্যবসায়ীদের হত্যায় অভিযান শুরুর পর মানবাধিকার সংগঠনসহ বিরোধী রাজনীতিকরা সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন রদ্রিগোর। তবে সেসবে পাত্তা না দিয়ে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন- তাদের সবাই পুলিশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল এবং প্রত্যেকটি ঘটনারই প্রত্যক্ষ তদন্ত হয়েছে। তার সমালোচনা করায় যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে তিনি ‘নির্বোধ’ বলে অভিহিত করেন।

প্রসঙ্গত, ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ মিন্দানাওয়ে গত কয়েক দশক ধরে সংখ্যালঘু মুসলিমরা আলাদা রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। চলছে সশস্ত্র লড়াইও।   

নিউজওয়ান২৪.কম/একে

প্রেসিডেন্ট দুতার্তে বিষয়ে আরও পড়ুন মাদক-সম্রাটকে অফিসে ডেকে হত্যার হুমকি দিলেন প্রেসিডেন্ট!

আরও পড়ুন
অপরাধ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত