ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪
সর্বশেষ:

অন্তরালের শ্রীদেবী

প্রকাশিত: ১৩:২৯, ১০ মার্চ ২০১৯  

জীবনভর নানা উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে গিয়ে নিজের ক্ষেত্রে নিজেকে সফলতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন শ্রীদেবী। তবে বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টার শ্রীদেবীর জীবনেও ছিল আক্ষেপ! কি সেটি?

মারা যাওয়ার মাস কয়েক আগে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- জীবনে তার কোনো আক্ষেপ-আফসোস আছে কি না? জবাবে শ্রীদেবী জানান, চিকিৎসার জন্য তার মাকে নিউ ইয়র্কে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আফসোস হয় তার। প্রসঙ্গত, নিউ ইয়র্কে তার মায়ের ব্রেনে ভুল জায়গায় অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা।

শ্রীদেবী ভাল ছবিও আঁকতেন। তবে নিজের এই গুণপনা স্রেফ শখের কাতারেই রেখে দিয়েছিলেন, বাইরে প্রকাশ করেননি তেমন। ভাতিজী সোনম কাপুরের (অনিল কাপুরের মেয়ে) সিনেমা সাবারিয়ার একটি দৃশ্যের ছবি আঁকেন শ্রীদেবী। এছাড়া পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের ছবিও আঁকেন তিনি। 

জানা গেছে, স্বামী বনি কাপুরের ভাগনের বিয়ে উপলক্ষ্যে দুবাই যাওয়ার পর একটি পেইন্টিং প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি থেকে গিয়েছিলেন, স্বামী ও ছোটকন্য দেশে ফিরে আসে। পরের মাসেই অর্থাৎ মার্চেই এই প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল। প্রদর্শনীর পর ছবিগুলো নিলামে বিক্রি করে দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করার কথা ছিল। 

সোনম কাপুর (বামে) ও মাইকেল জ্যাকসনকে (ডানে ) রংতুলিতে ফুটিয়ে তুলেছিলেন শ্রীদেবী

ঘনিষ্ঠজনরা জানান, গত কয়েকবছর ধরেই ছবি আঁকছিলেন তিনি- প্রতি সপ্তাহে ৫ থেকে ১০ ঘণ্টা পেইন্টিংয়ে ব্যয় করতেন বলেও জানা যায়। ২০১০ সালেও আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠান তার ছবির নিলামের আয়োজন করতে চেয়েছিল কিন্তু তাতে সায় দেননি।  

এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, ছোট মেয়ে খুশি হচ্ছে পিতাভক্ত আর বড় মেয়ে জাহ্নবি তার ঘনিষ্ঠ। তবে দুবাইতে মারা যাবার আগে দিয়ে তার সঙ্গে কিন্তু জাহ্নবি ছিল না, ছিল ছোট মেয়ে। শ্যুটিং থাকায় মায়ের সঙ্গে দুবাইতে আত্মীয়ের বিয়েতে যেতে পারেননি জাহ্নবি।

এছাড়া জাহ্নবির ডেব্যু ফিল্ম ধরক এর মুক্তিও দেখে যেতে পারেননি তিনি। শ্রীদেবীর মৃত্যুর ৫ মাস পরে ২০ জুলাই মুক্তি পায় জাহ্নবি অভিনীত প্রথম ছবি ধরক। 

এক ইন্টারভিউতে শ্রীদেবী বলেছিলেন তামিল দর্শকরা তার ন্যাচারাল সৌন্দর্য পছন্দ করে আর হিন্দি দর্শকরা পছন্দ করে তার গ্ল্যামারাস রূপ। অসাধারণ অভিনয় প্রতিভার অধিকারী এই অভিনেত্রীর সাফল্য এসেছিল গ্ল্যামারাস ছবিতেই, এটাকেই একজন জাত অভিনেত্রী হিসেবে নিজের জন্য দুর্ভাগ্য বলে মনে করতেন। 

কারণ, ১৬ বছর বয়সে করা প্রথম হিন্দি ছবি সোলভা সাওয়ান (১৯৭৯) নিয়ে কোনো কথা হয়নি। পরবর্তীতে বোদ্ধাদের প্রশংসিত হিন্দি ছবি সদমা নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি। কমল হাসানের বিপরীতে এই সিনেমায় তিনি অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীর চরিত্রে। 

তিনি চাইতেন তার অভিনয় প্রতিভার প্রশংসা-মূল্যায়ন হোক, কিন্তু বিশাল ভারতীয় দর্শক চাইতো তার ‘হিম্মতওয়ালা’য় দেখানো ‘নায়নোমে সাপনা’ গানের লচক দেখানো পারফর্মেন্স, যেখানে মেকআপের পুরু আবরণে তাকে অপ্সরার মতো দেখাতো। দর্শক মেতেছিল তার রূপের ঝলক আর শারীরিক সৌন্দর্যে। হিম্মতওয়ালায় দেখানো উরু সৌন্দর্যের জন্য তার উপাধি জুটেছিল ‘থান্ডার থাই’। 

আর তাই যে সিনেমা দিয়ে গত শতাব্দীর ৮০-এর দশকে মুম্বাইয়া ফিল্ম জগতে নিজেকে শক্তভাবে জাহির করেন, যার বদৌলতে আসে নাম-যশ-খ্যাতি; সেই হিম্মতওয়ালা নিয়ে কিন্তু শ্রীদেবীর নেতিবাচক মনোভাব ছিল। তিনি একে তার শিল্পীজীবনে দুর্ভাগ্যের প্রতীক বা ‘ব্যাড লাক’ বলে মনে করতেন। 

শ্রীদেবী মারা যান ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আর হিম্মতওয়ালা রিলিজ হয়েছিল ১৯৮৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। ১৯৬৩ সালের ১৩ আগস্ট জন্ম নেওয়া শ্রীদেবীর ছোটবেলার নাম ছিল শ্রী আম্মা আয়াঙ্গার আয়াপ্পান। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বলিউডি ফিল্মের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী ছিলেন তিনি।  

ক্যামেরার সামনে উচ্ছ্বল, চঞ্চল আর  প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর হলেও ব্যক্তিগত জীবনে খুব অন্তর্মুখী আর লাজুক স্বভাবের ছিলেন শ্রীদেবী। পরিচালকের মুখে ক্যামেরা-লাইট-অ্যাকশন শুনলেই বদলে যেতেন শ্রীদেবী- নিজের ভেতরকার নিঃসঙ্গতা নিরবতাপ্রিয় সত্ত্বাকে ছুঁড়ে ফেলে বদলে যেতেন অভিনীত চরিত্রের সত্ত্বায়। এনবিটি, এবিপি, উইকিপিডিয়া